প্রথম সিনেমায় বাজিমাত করেছেন তাঁরা
চলতি বছর মুক্তি পাওয়া ব্যবসায়িক সাফল্য পাওয়া এবং প্রশংসিত সিনেমাগুলোর বেশির ভাগই এসেছে অভিষিক্ত নির্মাতাদের হাত ধরে। এসব নির্মাতার কেউ আগে নাটক নির্মাণ করেছেন, কেউ বানিয়েছেন বিজ্ঞাপনচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা। চলতি বছর প্রথম সিনেমা বানিয়ে আলোচনায় ছিলেন এমন পাঁচ নির্মাতাকে নিয়ে এই প্রতিবেদন। তালিকার ক্রম করা হয়েছে সিনেমা মুক্তির তারিখ অনুযায়ী।
মেহেদী হাসান
‘বরবাদ’ মুক্তির আগে অনেক সমালোচনায় পড়তে হয় মেহেদী হাসানকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শাকিব খানের দিকে অভিযোগের তির ছুড়েছিলেন, কেন একদম নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছেন! মুক্তির পর ছবিটি ব্যবসায়িক দিক থেকে ঢালিউডের হিসাব–নিকাশই পাল্টে দেয়। সংলাপ, গান জনপ্রিয়তা পায়। বছরের ব্লকবাস্টার সিনেমার খাতায় ওঠে নাম। আলোচনায় আসেন পরিচালকও।
টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়। ছবিটি কেন এত বেশি ব্যবসায়িক সফলতা পেয়েছে সে প্রসঙ্গে মেহেদী হাসান বলেছিলেন, ‘গল্পের নতুনত্ব বলব না, নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুনত্ব ছিল। পুরো ছবির ডিজাইন ভালো, সংলাপে গুরুত্ব ছিল। আর সবকিছুর ওপরে শাকিব খান।’ প্রথম সিনেমা বানানোর আগে মেহেদী হাসান দুই শতাধিক নাটক বানিয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে তাঁর নির্মাণের শুরু। তিনটি ওয়েব ফিল্মও বানিয়েছেন।
শরাফ আহমেদ
দেড় যুগ ধরে নির্মাণের সঙ্গে আছেন শরাফ আহমেদ। এই সময়ে তিনি নাটক বানিয়েছেন ৫০টি আর বিজ্ঞাপনচিত্র পাঁচ শতাধিক। নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র বানানোর অভিজ্ঞতা থেকে আসেন সিনেমা নির্মাণে।
তাঁর প্রথম সিনেমা ‘চক্কর ৩০২’ প্রশংসিত হয়েছে। পুলিশ তদন্তকে ঘিরে নির্মিত সিনেমায় রোমাঞ্চ যেন ছিল, তেমনই ছিল হাস্যরসও। সব মিলিয়ে জীবনের শুরুটা মন্দ হয়নি।
লীসা গাজী
সত্য কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘বাড়ির নাম শাহানা’। এই ছবির নির্মাতা লীসা গাজী। নির্মাণের বাইরে তিনি লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত। আগে তথ্যচিত্র নির্মাণ করলেও এটিই তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নিজের আশপাশের মানুষদের গল্প থেকে আনান সিদ্দিকার সঙ্গে যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন লীসা গাজী।
নব্বইয়ের দশকের এক নারীর বিবাহবিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে পারিবারিক-সামাজিক নিষ্ঠুরতা, সামাজিক অসংগতি নিয়ে লীসা বলেছেন স্বাধীনচেতা এক নারীর উদ্যাপনের গল্প। পরে সিনেমাটি বাংলাদেশ থেকে অস্কারেও পাঠানো হয়। পরিচালক এর আগে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের জীবন নিয়ে নির্মিত তাঁর তথ্যচিত্র ‘রাইজিং সাইলেন্স’ বিশ্বব্যাপী ১৫টি পুরস্কার অর্জন করে।
মাকসুদ হোসেন
মধ্যবিত্ত পরিবারের সংগ্রামী জীবনের গল্পে মাকসুদ হোসেন বানিয়েছেন ‘সাবা’। ছবিটিতে মা ও মেয়ের সম্পর্ক, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব যেভাবে ফুটে উঠেছে, তা অনেক দিন দেখা যায়নি দেশের সিনেমায়।
দেশে মুক্তি পাওয়া গড়পড়তা সিনেমার চেয়ে সব বিচারেই অনেক এগিয়ে, এ কথা বললে ভুল বলা হবে না। মাকসুদ প্রায় দুই দশক ধরে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনচিত্র পরিচালনা করেছেন। এখন তিনি ব্যস্ত নিজের দ্বিতীয় সিনেমা ‘বেবিমুন’-এর কাজ নিয়ে।
মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম
ওটিটিতে শাটিকাপ ও সিনপাট সিরিজ বানিয়ে দর্শককে চমকে দেন মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম। এ বছর বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক ঘটেছে। খুলনার আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি ‘দেলুপি’ ছবিটি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের মানুষের জীবন, বাস্তবতা আর সম্পর্কের গল্প।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিস্তৃত বিষয় তিনি তুলে ধরেছেন বিন্দুমাত্র অতিনাটকীয়তা ছাড়া। বছরের শেষ দিকে এসে জানা যায়, সিনেমাটি জায়গা করে নিয়েছে রটারড্যাম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ব্রাইট ফিউচার বিভাগে।