কোরিয়ার এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে বাংলাদেশের ‘সাফা’

‘সাফা’ সিনেমার পোস্টার
ছবি: সংগৃহীত

বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট। বিভিন্ন দেশের নামীদামি প্রযোজক, সহ–প্রযোজক, ডিস্ট্রিবিউটর, চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয় এ বাজার। মেলে আর্থিক সহযোগিতা। পাওয়া যায় প্রযুক্তিগত সাহায্যও। সব মিলিয়ে এশিয়ার অন্যতম বড় এই চলচ্চিত্র বাজার নিয়ে তরুণ নির্মাতাদের ব্যাপক আগ্রহ থাকে। সম্মানজনক এই প্রজেক্ট মার্কেটে এবার নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদের সিনেমা ‘সাফা’। সিনেমাটির পরিচালক মাকসুদ হোসাইন।

সিনেমাটির পরিচালক মাকসুদ হোসাইন
ছবি: সংগৃহীত

আজ বৃহস্পতিবার বুসান চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটের (এপিএম) তালিকা ঘোষণা করেছে। চলতি বছর এই বাজার থেকে নির্বাচিত হয়েছে ১৫ দেশের ২৯টি সিনেমা। এবার সারা দুনিয়া থেকে ২৮৮টি প্রজেক্ট জমা পড়েছিল। প্রজেক্ট মার্কেটে জায়গা পাওয়ায় খুশি ‘সাফা’র পরিচালক মাকসুদ। তিনি বলেন, ‘গত বছর আমাদের সিনেমা ভারতের ফিল্ম বাজারে ছিল, পরে কান উৎসবের ফিল্ম বাজারেও অংশ নিয়েছিলাম। এবার এশিয়ার বড় এই ফিল্ম বাজারে আমার প্রথম সিনেমা নির্বাচিত হওয়ায় খুব ভালো লাগছে। কারণ, এখানে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা হয়। তা ছাড়া বুসানের এই বাজারে জায়গা পাওয়া সিনেমাগুলো নিয়ে এশিয়া তো বটেই সারা বিশ্বেই আলোচনায় হয়।’

‘সাফা’ কান মার্কেটেও অংশ নিয়েছিল
ছবি: সংগৃহীত

‘সাফা’র গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই যুগ আগের একটি সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায় ২৪ বছর আগে দুর্ঘটনায় আহত হন ১২ বছরের এক কিশোরী ও তার মা। সেই ঘটনায় কিশোরী মানসিকভাবে আঘাত পায়, মায়ের সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। পরে সেই কিশোরীকে বিয়ে করেন পরিচালক মাকসুদ। স্ত্রী ও শাশুড়ির জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে নিজের প্রথম ছবির প্রেরণা নেন পরিচালক। তিনি জানান, সেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়েই এগিয়ে যাবে ‘সাফা’র গল্প। পরিচালক আরও জানান, সিনেমাটির শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাধারণত প্রজেক্ট মার্কেটে সহ-প্রযোজক টার্গেট করেই তরুণ নির্মাতারা সিনেমাগুলো জমা দেন। শুটিংয়ের প্রস্তুতিতে থাকলে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে কোন বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ছবিটি উপস্থাপন করবেন? এমন প্রশ্নে মাকসুদ বলেন, ‘আমরা শুটিংয়ের জন্য কয়েকটি জায়গা থেকে অর্থ পেয়েছি। বাজেট প্রস্তুত। এখন বুসানে যাব মূলত পোস্ট প্রোডাকশনের জন্য ফান্ডিং খুঁজতে। সেভাবেই প্রযোজক ও অন্যদের সঙ্গে মিটিং করব। পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউটর ও অন্যান্য শাখা নিয়েও কথা বলব।’ পরিচালক জানান, প্রজেক্ট মার্কেটে সিনেমাটিকে ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের তহবিল পাওয়া, কখনো পাওয়া যায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতা।

এপিএমে এ বছর এশিয়ার সেরা নির্মাতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই তালিকায় ভেনিস, বার্লিনসহ একাধিক সম্মানজনক উৎসবে অংশ নেওয়া নির্মাতা ও প্রযোজক রয়েছেন। যেমন আছেন ৭২তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের গ্রাঁ প্রি–জয়ী পরিচালক ফারখত শারিপভের ‘সোলজার অব লাভ’। আছে চীনের পরিচালক ওয়াং চির ‘রেড রিভার’। আছেন আফগানিস্তানের নারী নির্মাতা শাহারা কারিমিও। তিনি ২০১৯ সালে ‘হাভা, মারিয়াম অ্যান্ড আয়েশা’ নামে প্রথম সিনেমা বানিয়ে ৭৬তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এবার তিনি ‘মাই কাবলিওয়ালা’ নিয়ে এপিএমে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া জায়গা পেয়েছে মিয়ানমারের মংসানের ‘ফিউচার লেয়োবান্স’, থাইল্যান্ডের আদিত্য আসরাতের ‘দ্য থংগ্লোর কিড’সহ একাধিক পরিচালকের সিনেমা। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হয়ে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে ২৬তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসব। প্রজেক্ট মার্কেট শুরু হবে ৯ থেকে ১১ অক্টোবর। প্রজেক্ট মার্কেটে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যাবেন মাকসুদ ও ছবির একজন প্রযোজক।