অস্ট্রেলিয়ায় ‘তাণ্ডব খিচুড়ি’
শীতার্ত এক সন্ধ্যায় সিডনির ব্যস্ততম সিনেমা হলগুলোর সামনে ভিড়—কে বলবে যে এখানে বাংলা সিনেমা দেখানো হচ্ছে! কিন্তু হ্যাঁ, পর্দায় চলছে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’। গত ২০ জুন সিডনি, মেলবোর্ন ও অ্যাডিলেডের বড় পর্দায় মুক্তির কয়েক দিনের মধ্যেই ছবিটি অস্ট্রেলিয়ায় চার হাজারের বেশি দর্শককে সিনেমা হলে টেনেছে—পাইরেসির শর্টকাটকে না বলে, প্রেক্ষাগৃহের পর্দাকে বেছে নিয়েছেন তাঁরা।
দর্শকের অভূতপূর্ব সাড়া
হয়েটস, ইভেন্ট, ভিলেজসহ প্রধান সব হলেই চলছে ‘তাণ্ডব’। এবারই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শহর ছাড়িয়ে বিভিন্ন উপশহরে প্রদর্শিত হচ্ছে বাংলাদেশের সিনেমা। সিডনির হয়েটস সিনেমায় আসা এক তরুণ দর্শক বললেন, ‘রায়হান রাফীর পরিচালনা আর শাকিব খানের পারফরম্যান্স এককথায় অসাধারণ।’ মেলবোর্নের বাসিন্দা আফরোজা নাহার বলেন, ‘অনেক দিন পর বড় পর্দায় আফজাল হোসেনকে দেখে মনটা ভরে গেল। জয়া বরাবরের মতো অনবদ্য।’
শো শেষে মোবাইলে আবেগঘন ভিডিও করে এক দর্শক বললেন, ‘শুধু সিনেমা নয়, এটা যেন অনুভবের বিস্ফোরণ। বড় পর্দার এমন শব্দ, দৃশ্য, আবেগ—সব মিলিয়ে বাংলা সিনেমার এক নতুন রূপ।’
শুধু অভিনয় নয়, প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও প্রশংসিত হচ্ছে ‘তাণ্ডব’। ডলবি সারাউন্ড সাউন্ড, স্ক্রিনের বিশালতা ও অ্যাকশন দর্শককে যেন পর্দার ভেতর টেনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী দর্শকদের কাছে এটি হয়ে উঠেছে এক আবেগঘন বিজয়ের মুহূর্ত—অস্ট্রেলিয়ার পরিপাটি থিয়েটারে বাংলা সিনেমা দেখা, সে এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা।
রেস্টুরেন্টে ‘তাণ্ডব খিচুড়ি’
ছবিতে শাকিব খানের ‘পাখি নাচ’ দেখে অনেকে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে নাচতে নাচতে বের হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে সেই নাচের ভিডিও।
সিনেমার প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে সিডনির ল্যাকেম্বা এলাকায় একটি বাঙালি রেস্টুরেন্ট তাদের বিখ্যাত খিচুড়ির নতুন নাম রেখেছে ‘তাণ্ডব খিচুড়ি’। রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের ভাষায়, ‘শুধু পর্দায় নয়, প্লেটেও তাণ্ডব-এর স্বাদ নিতে চাইলে আমাদের এখানে চলে আসুন। সিনেমার মতো এই খিচুড়ি যেমন মসলায় ভরপুর, তেমনি বিস্ময়কর!’
পাইরেসির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
ছবির অস্ট্রেলিয়া পরিবেশক বঙ্গজ ফিল্মসের কর্ণধার তানিম মান্নান বলেন, ‘“তাণ্ডব” ছবির পাইরেসি নিয়ে ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ান আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ করা হয়েছে। কেউ পাইরেসির সঙ্গে যুক্ত থাকলে তাকে আইনি জটিলতায় পড়তে হতে পারে। আমরা চাই না কোনো বাংলাদেশি এ ধরনের সমস্যায় জড়াক।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সিনেমা শুধু একটি ব্যবসায়িক প্রয়াস নয়, প্রবাসে বসবাসরত বাঙালিদের জন্য একটি আবেগ, এক সংস্কৃতি-সংযোগ। সিনেমা হলে না দেখলে এই অভিজ্ঞতা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন।’
শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই নয়, আগামী ৬ জুলাই নিউজিল্যান্ডেও মুক্তি পেতে যাচ্ছে “তাণ্ডব”। অকল্যান্ডসহ দেশটির প্রধান শহরগুলোতে পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি। প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহ তুঙ্গে।