‘উৎসব’ নিয়ে আগ্রহ দর্শকের, শো বাড়ল দ্বিতীয় সপ্তাহে

‘উৎসব’ সিনেমার পোস্টার থেকে। প্রযোজনা সংস্থার ফেসবুক থেক

বহু বছর পর দর্শকেরা যেন নির্মল আনন্দের কোনো সিনেমা পেল। ঈদের মতো সর্বজনীন উৎসবে প্রেক্ষাগৃহে মা–বাবা-সন্তান, তথা পরিবার মিলে উপভোগ করার মতো সিনেমা ‘উৎসব’—সিনেমা দেখার পর এমনটাই বলছেন দর্শকেরা। দেশের সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সব জায়গায়ই ‘উৎসব’ সিনেমার প্রশংসা করছেন দর্শকেরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক দর্শক লিখেছেন, ‘গত ১০ বছরে এমন রিফ্রেশিং আর মন ভালো করে দেওয়া সিনেমা কবে দেখেছি, ঠিক মনে পড়ছে না। শুধু বাংলা না, যেকোনো ভাষার সিনেমা মিলিয়ে বলছি!’ আরেক দর্শক লিখেছেন, ‘“উৎসব”দেখতে গেছিলাম। শুনেছিলাম পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতো নির্মল আনন্দের সিনেমা। আসলেই তা–ই।’ এক দর্শক দাবি করেছেন, ‘আমি অনেক দিন পরে এত সুন্দর একটা বাংলা পারিবারিক সিনেমা হলে দেখেছি। সবাই খুব ভালো কাজ করেছেন।’ আরেক দর্শক নিজেই জানিয়েছেন, বহু বছর পর বাংলাদেশের কোনো সিনেমা নিয়ে শতভাগ ইতিবাচক সাড়া দেখছেন তিনি। তা–ও আবার সব ফ্যামিলি অডিয়েন্সের।

তানিম নূর পরিচালিত ‘উৎসব’ সিনেমা নিয়ে এমন আরও অসংখ্য প্রতিক্রিয়া, মন্তব্য, রিভিউ ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। স্টার সিনেপ্লেক্সের রাজধানীর প্রতিটি শাখায় প্রথম সপ্তাহে (৭-১২ জুন) সিনেমাটির অধিকাংশ শো হাউসফুল, কিছু শো প্রায় হাউসফুল। দর্শকদের এমন ভালোবাসা পাওয়ায় সিনেমাটি দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন সবাই। আর সে জন্যই দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সিনেপ্লেক্সে বাড়ানো হয়েছে সিনেমাটির শোর সংখ্যা। সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ও সিনেমাটির পরিচালক নিশ্চিত করেছেন বিষয়টি।

উৎসব সিনেমার পোস্টার
ছবি: প্রযোজনা সংস্থার সৌজন্যে

নির্মাতা জানান, প্রথম সপ্তাহে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্টার সিনেপ্লেক্সের সব কটি শাখায় ‘উৎসব’ সিনেমার শো ছিল ৯টি। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শোর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩। প্রথম সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজধানীর ব্লকবাস্টার সিনেমাস ও কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমাসেও প্রদর্শিত হবে ‘উৎসব’। তানিম নূর আরও বলেন, ‘ঢাকার বাইরে সিঙ্গেল স্ক্রিনেও আমাদের সিনেমাটি প্রদর্শনের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন অনেকে। কথা শুরু হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই সেই সুসংবাদও দিতে পারব।’

দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নির্মাতা তানিম নূর বলেন, ‘সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের এই উন্মাদনা, দেখার আগ্রহ সত্যি আমাদের আপ্লুত করছে, অনুপ্রাণিত করছে। এই পরিবেশ তৈরি করেছেন দর্শকেরাই। তাঁরা নিজেরা সিনেমাটি দেখছেন, তাঁর পাশের জনকে বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন। সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। যাঁরা সিনেমাটি এখনো দেখেননি, পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমাটি দেখার আমন্ত্রণ রইল।’

‘উৎসব’ সিনেমার পোস্টার

প্রথম সপ্তাহে দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে, প্রতিক্রিয়া জানতে রাজধানীর বেশ কিছু প্রেক্ষাগৃহে ঘুরেছেন সিনেমার দুই অভিনয়শিল্পী সাদিয়া আয়মান ও সৌম্য জ্যোতি। তাঁরা জানান, সব বয়সী দর্শকদেরই তাঁরা দেখেছেন প্রেক্ষাগৃহে। অনেক দর্শক আছেন, যাঁরা ‘উৎসব’ দেখতেই বহু বছর পর প্রেক্ষাগৃহে এসেছেন। ৪০ বছর পর প্রেক্ষাগৃহে এসেছেন, এমন দর্শকও পেয়েছেন তাঁরা।

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া ধুন্ধুমার অ্যাকশন ঘরানার সিনেমার মধ্যে ‘উৎসব’ যেন স্বস্তি নিয়ে এসেছে, এমনটা দাবি করে এক দর্শক লিখেছেন, ‘সিনেমা হলের এসির বাতাসে শরীর ঠান্ডা বহুবার হয়েছে। বাট সিনেমা দেখার পর মনটাও একদম ঠান্ডা হলো সম্ভবত এই প্রথম!’ হাস্যরসযুক্ত পরিবার ও সম্পর্কের গল্পের জন্যই সিনেমার ট্যাগ লাইনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ—পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ’।
‘উৎসব’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সাদিয়া আয়মান ও সৌম্য জ্যোতি। একটি সিনেমায় এতজন তারকার উপস্থিতি দেশীয় চলচ্চিত্রে বিরল। একটি সিনেমায় এতজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনয়শিল্পীর কাজ করার ঘটনা নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুন

সিনেমাটির গল্প লিখেছেন তানিম নূর, আয়মান আসিব স্বাধীন, সুস্ময় সরকার ও সামিউল ভূঁইয়া। ডিরক্টর অব ফটোগ্রাফি হিসেবে কাজ করেছেন রাশেদ জামান। সিনেমাটির কাহিনিকার তানিম নূর, আয়মান আসিব স্বাধীন, সুস্ময় সরকার ও সামিউল ভূঁইয়া। চিত্রনাট্য ও সংলাপ করেছেন আয়মান আসিব স্বাধীন ও সামিউল ভূঁইয়া।
ব্র্যাক ব্যাংক প্রেজেন্টস ‘উৎসব’ সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ডোপ প্রোডাকশনস, সহ-প্রযোজনায় আছে চরকি। সিনেমার সহযোগী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে লাফিং এলিফ্যান্ট। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও মুক্তি পাবে সিনেমাটি। ‘উৎসব’–এর আন্তর্জাতিক ডিসট্রিবিউশনে আছে স্বপ্ন স্কোয়ারক্রো ও পথ প্রোডাকশনস।