হাতে আঁকা পোস্টার ফিরিয়ে আনল ‘অপারেশন সুন্দরবন’

একটা সময় শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হতো সিনেমার ব্যানার ও পোস্টার। প্রেক্ষাগৃহের সামনের উঁচু দেয়ালে ঝোলানো হতো বড় বড় ব্যানার, মূল মিলনায়তনের বাইরের দেয়ালে বক্স তৈরি করে রাখা হতো পোস্টার। দর্শকেরা ব্যানার, পোস্টার দেখে সিনেমা সম্পর্কে ধারণা নিতেন। তবে সেসব দিন এখন শুধুই অতীত। অনেক দিন ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও প্রায় এক যুগ আগে থেমে গেছে হাতে আঁকা সিনেমার পোস্টার, ব্যানারের চল। প্রযুক্তির কল্যাণে সিনেমার পোস্টার, ব্যানার এখন তৈরি হচ্ছে মেশিনেই। রংতুলিতে ব্যানার, পোস্টারের হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার টিম। তারা এ ছবির জন্য বেশ কয়েকজন শিল্পীকে খুঁজে বের করেছেন, যাঁরা আগে হাতে ছবির ব্যানার, পোস্টার আঁকতেন।

২৩ সেপ্টেম্বর ‘অপারেশন সুন্দরবন’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। তার আগে প্রেক্ষাগৃহে টাঙানো হবে ছবির হাতে আঁকা ব্যানার, পোস্টার।

এরই মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে ছবির তিনটি পোস্টার করা হয়েছে। ব্যানার আঁকার কাজও শুরু হবে। যে চারজন শিল্পী এই কাজ করছেন, তাঁদের একজন মো. সোয়েব প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তিনটি পোস্টার করলাম। দুই–এক দিনের মধ্যে বড় ব্যানারের কাজ শুরু করব। চারজন মিলে কাজটা করছি।’
১৯৬৫ সালে ‘রেওয়াজ’ দিয়ে রংতুলিতে সিনেমার ব্যানার, পোস্টার তৈরির কাজ শুরু করেন সোয়েব। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ সিনেমার ব্যানার ও পোস্টার করেছেন তিনি। ২০০২ সালে সর্বশেষ মধুমিতা হলের জন্য একটি ইংরেজি ছবির ব্যানার করেছিলেন তিনি।

দুই দশক পর কাজটি করতে এসে ভালো লাগার কথা জানালেন তিনি, ‘অনেক দিন পর এই কাজ করছি, ভালো লাগছে। তবে যেহেতু অনেক দিন অভ্যাস নাই, তাই একটু সময়ও লাগছে। সিনেমার ব্যানার, পোস্টার হাতে আঁকার মধ্যে আলাদা মজা আছে। স্টিল ছবি দিয়ে গ্রাফিকসের মাধ্যমে এখন পোস্টার ও ব্যানার হয়। কিন্তু একটা লেআউট তৈরি করে হাতে আঁকলে মনের মতো করে ব্যানার, পোস্টার করা যায়। সিনেমার গল্পের অনেক কিছুই ব্যানারের মাধ্যমে তুলে ধরা যায়। হাতে আঁকা হওয়ায় দর্শকেরও আলাদা আকর্ষণ থাকে।’

১৯৬২ সাল থেকে দেয়ালে সিনেমার পোস্টার আঁকা শুরু করেন আরেক শিল্পী বিদেশ কুমার ধর। ১৯৬৫ সালে প্রেক্ষাগৃহের জন্য প্রথম পোস্টার এঁকেছিলেন উর্দু ‘পুনম কিরান’ ছবির। স্বাধীনতার পর ‘টাকার খেলা, ‘চাবুক’, ‘ডাকু মনসুর’সহ অনেক ছবির ব্যানার ও পোস্টার করেছেন তিনি। সর্বশেষ করেছেন ১৯৯৭ সালে, ‘পৃথিবী আমারে চায় না’ ছবির।

বিদেশ কুমার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তি পাওয়া ৬০ শতাংশ সিনেমার হাতে আঁকা পোস্টার আমারই।’

‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির ব্যানার ও পোস্টার আঁকতে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিদেশ কুমার, ‘র‍্যাব আমাদের খুঁজে বের করে যে সম্মান দিয়েছে, আজ পর্যন্ত এই সম্মান কেউ দেননি। আমরা আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে এই ছবির ব্যানার ও পোস্টার করার চেষ্টা করছি।’

ছবির হাতে আঁকা পোস্টার ও ব্যানার নিয়ে সিনেমার পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ‘ইতিহাসের সাক্ষী এই শিল্পীরা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। তাঁদের হাতে আঁকা ব্যানার, পোস্টার বিভিন্ন লোকজ মোটিভ বহন করে। কালের বিবর্তনে অনেক কিছুর পাশাপাশি এই ঐতিহ্যও হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাঁদের স্মরণ করতে চাই। নতুন সিনেমাগুলোর একটি করে পোস্টারও যদি তাঁদের মাধ্যমে তৈরি করা হয়, তাহলে এই মানুষগুলো গর্বিত হবেন।’
র‍্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রযোজিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন রিয়াজ, সিয়াম, রোশান, নুসরাত ফারিয়া, দর্শনা বণিক, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনির খান শিমুল, তাসকিন রহমান, মনোজ প্রামাণিক প্রমুখ।