শাবনূরের ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে যা আছে

চিত্রনায়িকা শাবনূর
ছবি: সংগৃহীত

‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘সাথি তুমি আমার জীবনে’, ‘বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম’—এমন অনেক জনপ্রিয় গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়েছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। সেই শাবনূরকে প্রায়ই অনুষ্ঠানে বলা হতো তাঁর ঠোঁট মেলানো গানগুলো থেকে এক লাইন গেয়ে শোনাতে। এতেই যেন শাবনূরের মুখ দিয়ে আর কথা বের হতো না। পর্দার বাইরে লাজুক ও স্বল্পভাষী শাবনূর খালি গলায় তেমন গান গাইতেন না। তবে এবার ৩৫ সেকেন্ডের ফেসবুক ভিডিওতে এসে এই চিত্রনায়িকা গান শোনালেন। গানের সঙ্গে জুড়ে দিলে উড়ু চুমু। ভক্তদের প্রশ্ন থাকতে পারে, কার জন্য শাবনূরের এত ভালোবাসা?

ভক্তদের সাজানো ছবিতে শাবনূর
ছবি: সংগৃহীত

শাবনূরের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়ির মধ্যে হাস্যোজ্জ্বল এই নায়িকা। কিছুটা ভেবে গান শুরু করেন। তাঁর গলায় শোভা পায়, ‘ছোট্ট একটা জীবন নিয়ে পৃথিবীতে কেন বলো আসা, অনন্তকাল ভালোবেসে ফুরাবে না তোমাদের ভালোবাসা।’ ‘প্রেমের তাজমহল’ সিনেমার এ গানের মূল কথা ছিল, ‘অনন্তকাল ভালোবেসে ফুরাবে না আমার ভালোবাসা।’ গানের লাইন বদলে, দুই লাইন গেয়ে উড়ন্ত চুমু দিয়ে শাবনূর বললেন, ‘লাভ ইউ। লাভ ইউ অল। আমার ভক্তদের জন্য ভালোবাসা। যারা আমার দর্শক তাদের জন্য ভালোবাসা। আর ভালোবাসা আমার বন্ধুদের।’ এরপর ভক্তদের একাধিক উড়ু চুমুতে জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা জানিয়ে দেন—তাঁর এই খ্যাতি, এই সম্মানের পেছনে সব সময় পাশে ছিলেন ভক্তরা। জন্মদিনে প্রতিবারের মতো কখনোই তিনি ভক্তদের ভোলেন না।

কীভাবে ভক্তদের কাছে শাবনূর হয়ে ওঠেন এই চিত্রনায়িকা? সে গল্পও অনেক মজার। নব্বইয়ের দশকের শুরুর সময়ের কথা। নতুন ছবির জন্য পাত্রপাত্রী খুঁজছিলেন গুণী নির্মাতা এহতেশাম। একাধিক ছবিতে নতুন নায়ক-নায়িকার অভিষেক ঘটানো এই নির্মাতার অফিসে বাবাকে নিয়ে একদিন হাজির হন নূপুর নামের একটি মেয়ে। তাঁরা শুনেছেন, এই নির্মাতা নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে শুটিং করেন।

তাই এই অফিসে আসা। নূপুরের ইচ্ছা ছবিতে অভিনয় করার। মেয়েটির এক টানে বলে চলা কথাগুলো পরিচালকের ভালো লাগে। কথায় কোনো জড়তা ছিল না মেয়েটির মধ্যে।

চিত্রনায়িকা শাবনূর
ছবি: সংগৃহীত

শাবনূর তখন সবে স্কুলে পড়া ১২ কি ১৩ বছর বয়সের একটি মেয়ে। এই মেয়েকে বলা যায় প্রথম দেখায়ই পছন্দ হয় নির্মাতার। নূপুরের মধ্যে কোনো একটি গল্পের চরিত্র পেয়ে যান এহতেশাম। এই পরিচালক তখন ঠিক এমনই একটি চরিত্র খুঁজছিলেন। যে মেয়ে বান্ধবীদের নিয়ে দল বেঁধে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। এ জন্য বাপের কাছে অভিযোগও কম আসে না, এমন পাণ্ডুলিপির দুরন্ত সেই কিশোরী এখন পরিচালকের সামনে। পরিচালক কথা বলে আবার আসতে বলেন। পরে পরিচালক মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা হওয়ার জন্য যা যা দরকার, তার জন্য সেই ব্যবস্থা করেন। অভিনয়, নাচ শেখা, সংলাপ বলা থেকে শুরু করে সবকিছু শিখিয়ে নেন পরিচালক। এতেই কেটে যায় দুই বছর।

২৯ বছর আগে শুরু হয় শাবনূরের প্রথম সিনেমা ‘চাঁদনী রাতে’–র শুটিং। সিনেমাটির শুটিংয়ের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার একটি গ্রাম। শাবনূরের পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। এ ছবিতে চলচ্চিত্রনির্মাতা এহতেশাম তাঁর নাম বদলে রাখেন শাবনূর। শাবনূরের প্রথম এই ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিটি সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি। তবে এই ছবিই শাবনূরকে দিয়েছে সফল হওয়ার মন্ত্র। ব্যর্থতাকে হারিয়ে শাবনূর ক্রমে হয়ে ওঠেন বাংলা ছবির প্রথম সারির নায়িকা। অভিনয়গুণে সব ধরনের চরিত্রেই সহজে মানিয়ে নিতেন নিজেকে। অসংখ্য ছবিতে দর্শকদের কাঁদিয়েছেন, হাসিয়েছেন এই অভিনেত্রী। ভক্তদের কাছে এখনো তিনি সমান জনপ্রিয়।

চিত্রনায়িকা শাবনূর এখন রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। ছবি: সংগৃহীত

নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর দীর্ঘদিন ধরে আছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। মাঝেমধ্যে দেশে এলেও খুব বেশি দিন থাকেন না। সেখানেই ছেলে আইজান, মা, ভাই, বোনসহ বসবাস করছেন। অনেক দিন ধরে নতুন কোনো সিনেমায় অভিনয় না করলেও শাবনূরের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। ভক্তদের কাছে তাঁর আবেদন আগের মতোই। শাবনূরও ভক্তদের সেই ভালোবাসা বহু দূরের দেশে বসেও অনুভব করতে পারেন।

ভিডিওতে চিত্রনায়িকা শাবনূর
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন