শুটিং করতে গিয়ে পাওয়া ‘মাস্টার’–এর গল্প

বাঁধন ও নাসির উদ্দিন খান। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

উপকূলীয় অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জেলেদের গল্প নিয়ে সিনেমা ‘নোনা জলের কাব্য’। সিনেমায় উঠে আসে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জেলেদের টিকে থাকার গল্প। সিনেমায় দেখা যায়, এই মানুষেরা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে তাঁদের সমস্যার কথা বলেন। সুফল ভাগ্যে তেমন মেলে না। তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে গিয়ে বিষয়গুলো খুব কাছ থেকে দেখেছেন পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। পরবর্তী সময়ে তিনি এসব সুবিধাবঞ্চিত মানুষের গল্প নিয়ে ‘তুফান আইতাছে’ নামে সিনেমা নির্মাণ করেন। সেখানে জেলেদের আবাসন–সংকট দেখান। এ দুই সিনেমার শুটিংয়ে গিয়ে পরিচালক পেয়ে যান তৃতীয় চলচ্চিত্রের গল্প। সিনেমাটির নাম ‘মাস্টার’। অনুদানের এ সিনেমার শুটিং গত বুধবার শেষ হয়েছে।

তরুণ এই নির্মাতা জানান,‘ নোনা জলের কাব্য’র শুটিংয়ের সময় দিনের পর দিন তিনি জেলেপল্লিতে সময় কাটিয়েছেন। তখন এসব মানুষের অসহায়ত্ব খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘দেখা যেত, এই মানুষেরা স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধির কাছে গেলে তিনি প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। আবার প্রশাসনের কাছে গেলে তারাও দায় নিত না। এসব সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে “মাস্টার” সিনেমার গল্প লেখা শুরু। এখানেও আমরা কাউকে দায়ী করছি না। এই বাস্তবতার পেছনে নানা গল্প রয়েছে, সেগুলো আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে সিনেমাটি নির্মাণে।’

নাসির উদ্দিন খান। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

কী আছে এই সিনেমায়? স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক জাহিদ আহমেদ। এলাকায় সমাজসেবক হিসেবে তাঁর পরিচিতি আছে। এলাকার মানুষ তাঁকে পছন্দ করেন। নির্বাচনের আগে গ্রামের মানুষ তাঁকে নির্বাচন করতে বলেন। সেই নির্বাচনে জয়ী হন জাহিদ। এরপর তাঁর জীবনে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। নানা চাপের মধ্যে থাকতে হয়। এসব নিয়েই সিনেমার মূল গল্প। সিনেমায় জাহিদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান। তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জাকিয়া বারী মম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চরিত্রে দেখা যাবে আজমেরী হক বাঁধনকে।

পরিচালক একটি দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন নাসির উদ্দিন খানকে। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

সিনেমাটির শুটিং হয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধনবাড়ী এলাকায়। শুটিংয়ের দুই সপ্তাহ আগেই লোকেশনে গিয়েছিলেন সিনেমার প্রধান চরিত্রের অভিনেতা নাসির উদ্দিন। সেখানে চরিত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন। স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। চরিত্রের প্রয়োজনে সেখানে বিশাল নির্বাচনী ক্যানভাসের আয়োজন করতে হয়েছে। হাজারো মানুষের মধ্যে বক্তব্য দিতে হয়।

চরিত্রের একটি লুকে বাঁধন। ছবি: পরিচালকের সৌজন্যে

তিনি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘দারুণ একটি চরিত্র। দর্শকেরা সিনেমাটি দেখে পছন্দ করবেন। টাঙ্গাইলে আমরা শুটিং করেছি। বেশ ভালো সময় কেটেছে। একজন সাধারণ মানুষ হঠাৎ করেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে। এমন নানা বিষয় সিনেমাটিকে প্রাণবন্ত করেছে।’

রাজনৈতিক পটভূমির গল্পে এবারই প্রথম অভিনয় করলেন আজমেরী হক বাঁধন। সিনেমায় তাঁকে দেখা যাবে নাসির উদ্দিন খানের মুখোমুখি হতে। এর আগে চরকির সিরিজ গুটিতে তাঁদের দেখা গেলেও এবারই প্রথম বড় পর্দায় মুখোমুখি হচ্ছেন। বাঁধন বলেন, ‘পর্দায় আমাদের মুখোমুখি হতে দেখা যাবে। কিন্তু সেটা নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলা যাবে না। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সম্পর্ক যেমন হয়, আমাদের সম্পর্কও তেমন। সব মিলিয়ে দারুণ একটা গল্প। শুটিংয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছি।’

বাঁধন ও মম। ছবি: সংগৃহীত

বাঁধন আরও বলেন, সিনেমাটিতে নাম লেখানোর কারণ এখানে পরিচালক সুমিত, তাঁর কাজগুলো অন্য রকমের হয়। দ্বিতীয়ত, মাস্টার চরিত্রে নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা ওয়েবে একসঙ্গে কাজ করেছি। তাঁর সঙ্গে অভিনয় করাটা দারুণ ব্যাপার। আর চিত্রনাট্য পড়ে মনে হয়েছে, গল্পটি মাস্টারের হলেও ইউএনও চরিত্রকে ঘিরেই এগোবে। সবারই গুরুত্ব রয়েছে। সঙ্গে উঠে এসেছে দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার নানান প্রেক্ষাপট।’

সরকারি অনুদানের এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, তাসনোভা তামান্না, শরীফ সিরাজ, আমিনুর রহমান, মাহমুদ আলম প্রমুখ।

সিনেমার দৃশ্যধারণের সময়ের ফ্রেমবন্দী হন শরীফ সিরাজ, নাসির উদ্দিন ও অন্যরা।
ছবিু: সংগৃহীত