বাবার গল্পে মেয়ের সিনেমা

সরকারি অনুদানে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সসহ ১০ হলে মুক্তি পাচ্ছে আজ। ইনামুল হকের গল্পে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন তাঁর মেয়ে নির্মাতা হৃদি হক।

সত্তর–আশির দশকে হাতে আঁকা পোস্টার–ব্যানারের চল ছিল। সিনেমার প্রচারেও পরিচালক সেই সময়কে ধরার চেষ্টা করেছেন। ‘১৯৭১ সেই সব দিন’ সিনেমার ব্যানারটি এঁকেছেন শিল্পী মোহাম্মদ শোয়েবছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

‘সেই সব দিন নিয়ে মঞ্চে কাজ করেছি। পরে বাবার অনুমতি নিয়ে টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছি। সেটি (টেলিফিল্ম) নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করি। তখনই ভেবেছিলাম, যদি কখনো সিনেমা বানাই এই গল্পেই বানাব।’ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বললেন হৃদি হক; অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা পরিচিতি পাওয়া হৃদির এবার চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অভিষেক হলো।

সাংস্কৃতিক আন্দোলন, ১৯৭১ সালের এক পরিবার ও সেই সময়ের গল্পে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। সিনেমার গল্পে ইনামুল হক ও লাকী ইনাম দম্পতির নাম জড়িয়ে রয়েছে। তবে এটিকে সরাসরি পরিবারের গল্প বলতে নারাজ হৃদি হক। তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে যাঁরা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশটাকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়েছেন, তাঁদের কথা বলেছি সিনেমায়। ইনামুল হক ও লাকী ইনাম কিংবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এটার অংশ। সিনেমার চিত্রনাট্যের ক্ষেত্রে ইনামুল হক ও লাকী ইনাম আমার কাছে অবশ্যই অনুপ্রেরণার।’

হৃদি হক
ছবি: ফেসবুক

সিনেমা নির্মাণে হাত দেওয়ার পর ২০২১ সালে বাবা ইনামুল হককে হারিয়েছেন হৃদি হক। চিত্রনাট্য লেখার সময় বাবার পরামর্শ পেয়েছেন, এমনকি দৃশ্যধারণ শুরুর সময়ও বাবাকে পাশে পেয়েছেন তিনি। তবে সিনেমাটি দেখে যেতে পারলেন না তিনি। ‘আজকের দিনটা আমার জন্য অন্যতম আনন্দের দিন। আবার একই সঙ্গে বেদনারও, বাবা আমাদের সঙ্গেই আছেন।’ যোগ করেন হৃদি।

সিনেমাটি নির্মাণ করতে গিয়ে নানান চড়াই–উতরাইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে হৃদি হককে। এমনিতেই ইতিহাসভিত্তিক সিনেমা নির্মাণ করা চ্যালেঞ্জিং, তার ওপর বাজেটও কম। একাত্তরে ব্যবহৃত গাড়ি ও ট্রেন পর্দায় আনতে হিমশিম অবস্থা হয়েছে।
হৃদির ভাষ্য, ‘৫২ বছরে বাংলাদেশের অবকাঠামো একদম বদলে গেছে। একটি দোতলা বাড়িসহ একটি পাড়া ঢাকায় আর নেই। সিনেমার জন্য আমাদের পুরো একটি পাড়াই বানিয়ে ফেলতে হয়েছে। সেই সময়ে ব্যবহৃত গাড়িগুলো বাংলাদেশের কার কার কাছে আছে সেটি খুঁজে বের করেছি। ট্রেনের দৃশ্যগুলোর জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ট্রেনের রং পরিবর্তন করেছি। এগুলো আমাদের গবেষণা ও শ্রমের ফল। শিল্পনির্দেশক লিটু আনামকে ধন্যবাদ দিই। এটি একটি টিমওয়ার্ক।’

সিনেমার প্রচারেও একাত্তরকে ধরার চেষ্টা করেছেন হৃদি। সত্তর–আশির দশকে হাতে আঁকা পোস্টারের চল ছিল। এই সিনেমার জন্যও হাতে আঁকা পোস্টার ফেরালেন তিনি। ‘আমাদের প্রচুর অর্থ ছিল না, আবার লক্ষ্য থেকে সরেও যেতে পারি না। তাই ছোট জায়গাগুলো ধরে বড় ক্যানভাস তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছিলাম। আমাদের আড্ডায় হাতে আঁকা পোস্টারের ভাবনাটা আসে।’

‘১৯৭১ সেই সব দিন’ সিনেমার দৃশ্যে সানজিদা প্রীতি ও সজল
ছবি : পরিচালকের সৌজন্যে

পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন হৃদি। আরও আছেন মামুনুর রশীদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, শিল্পী সরকার অপু, ফেরদৌস, তারিন, লিটু আনাম, সজল, সাজু খাদেম, সানজিদা প্রীতি প্রমুখ।

আরও পড়ুন