কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিকে এক ছাতার নিচে আনা উচিত
কাজের সমন্বয়ের জন্য সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে এক করা দরকার বলে মনে করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত জাতীয় চলচ্চিত্র সম্মেলন ২০২৫-এ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এমনটা জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো অদ্ভুতভাবে ভাগ করা হয়েছে। কলোনিয়াল দেশগুলোতে এটা দেখবেন। কোরিয়া, ইরান, ইতালিতে সংস্কৃতি ও ট্যুরিজম মন্ত্রণালয় আলাদা নয়, একসঙ্গে রয়েছে। আমাদেরও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন পুরো কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিকে আনা দরকার।’
‘সংস্কারে চলচ্চিত্র, পরিবর্তনে দেশ’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ ফিল্ম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রশিক্ষার্থী, শিক্ষক, নির্মাতা, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকর্মী, অভিনয়শিল্পীসহ চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত অংশীজনেরা।
আগামী তিন মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকারকে চলচ্চিত্রবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করার দাবি জানান অংশীজনেরা। বক্তারা বলেন, কেবল তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্রের কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে দাপ্তরিক জটিলতা বাড়ছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আপনারা সিনেমার জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় দাবি করেছেন। এটা প্র্যাকটিক্যালি হবে না। কিন্তু আমি মনে করি, আমরা চলে যাওয়ার আগে কাজটি করে দিয়ে যাব, পরের সরকার এসে কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিকে ঠিকভাবে এগিয়ে নিতে পারে। পুরো কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা উচিত।’
এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাঁরা ছিলেন না।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে আমার জানা দরকার ছিল, কতজন সিনেমাটোগ্রাফার কাজ করছেন, কতজন কাজ করতে পারছেন না। কয়টা সিনেমা হল আছে, কয়টা নাই। এই সবকিছু একটা জায়গায় থাকার দরকার ছিল। পুরো সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি এক ছাতার নিচে থাকা উচিত ছিল। কিন্তু যেকোনো কারণে হোক, সেটা নেই। এটা না থাকার ফলে আমাদের পক্ষে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া খুবই কঠিন।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মনে করেন, প্রস্তাবগুলো একটু বুঝেশুনে বাস্তবায়ন করলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তবে সেটা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘পলিসি লেভেলে কিছু প্রস্তাব করে যাব ক্যাবিনেটে। মিনিস্ট্রি অব কালচার ও মিনিস্ট্রি অব ট্যুরিজম এক করতে হবে। কলোনিয়াল দেশগুলো ছাড়া কোথাও কালচার ও ট্যুরিজম আলাদা পাবেন না। কালচারের জন্য কিছু বানাবেন, সেটা ট্যুরিজমকে হেল্প করবে, আবার ট্যুরিজম নিয়ে কিছু বানাবেন, সেটা সংস্কৃতিকে সহযোগিতা করবে। যেমন বিটিএস। পুরো জিনিসটা যেন এক ছাতার নিচে আসে, আমরা সেই প্রস্তাবটা করব।’
এতে অংশীজনদের মধ্যে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক গীতিকবি লতিফুল ইসলাম শিবলী, প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল, পরিচালক শাহীন-সুমন, চলচ্চিত্র সমালোচক সাদিয়া খালিদ ঋতি, পরিচালক রায়হান রাফী, অভিনয়শিল্পী ইমতিয়াজ বর্ষণ, চিত্রনায়িকা জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী, হলমালিক আওলাদ হোসেনসহ অনেকে কথা বলেছেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সার্চ কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ফিল্ম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আল আমিন রাকিব।
স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জারিন তাসনিম। এরপর জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।