শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ পাইরেসি, গ্রেপ্তার ৩

‘তাণ্ডব’ সিনেমার দৃশ্যে শাকিব খান

মুক্তির পর থেকেই শাকিব খান অভিনীত ও রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’ সিনেমা নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। দেশের শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি নিয়ে মানুষ টিকিট সংকটে ভোগার কথাও বলেন। মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমাটি ঘিরে এখনো দর্শকের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তাই প্রেক্ষাগৃহের মালিকেরা অন্য ছবির তুলনায় এই ছবির প্রদর্শনী কয়েকগুণ বাড়িয়ে রেখেছেন। এর মধ্যে হঠাৎ শোনা গেল, ‘তাণ্ডব’ ছবির এইচডি কপি ছড়িয়ে পড়েছে ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। পাইরেসির খবরে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কঠোর হয়। আইনি প্রতিকার চেয়ে থানায় মামলা করেন ছবির প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল। কপিরাইট আইনে দায়ের হওয়া সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দা পুলিশ সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টায় প্রথম আলোকে তিনজন গ্রেপ্তারের খবরটি দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম।

‘তাণ্ডব’ পাইরেসির সঙ্গে জড়িত আটক তিনজন হলেন নোয়াখালীর টিপু সুলতান, ময়মনসিংয়ের সাদি সাদ ও সিরাজগঞ্জের সাজেদুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার রাতেই জানা যায়, ‘তাণ্ডব’ পাইরেসির সঙ্গে জড়িত টিপু সুলতানকে (৩৫) নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদিন রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম। একই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে জেলা শহর মাইজদীর মোহাম্মদিয়া হোটেলসংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার টিপু সুলতান নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে।

‘তাণ্ডব’–এ শাকিব খান। প্রযোজনা সংস্থার সৌজন্যে

পুলিশ জানায়, টিপু সুলতান ‘তাণ্ডব’ সিনেমাটি পাইরেসি করে বেআইনিভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে পুরো সিনেমার এইচডি কপি ছড়িয়ে দেন। পরে সিনেমাটির প্রযোজক শাহরিয়ার করিম ভূঁইয়া (ওরফে শাহরিয়ার শাকিল) ঢাকার বনানী থানায় কপিরাইট আইনে একটি মামলা করেন। যেখানে টিপু সুলতান ১ নম্বর অভিযুক্ত ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইব্রাহীম জানান, টিপু পাইরেসির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হবে এবং বনানী থানা তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

জানা গেছে, সাদি সাদকে ময়মনসিংহ ও সাজেদুল ইসলামকে সাভার থেকে আটক করা হয়েছে। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে, আটক তিনজনের সঙ্গে কোনো না কোনো প্রেক্ষাগৃহের যোগসাজশ আছে। কীভাবে পাইরেসি হয়েছে, সেটাই বের করছে পুলিশ।

কথা হয় ‘তাণ্ডব’ ছবির প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিলের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমরা যাঁরা সিনেমা বানাই, দর্শককে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে ব্যবসায়িক একটা ব্যাপারও থাকে। সিনেমা নির্মাণের পর অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে প্রযোজককে যেতে হয়, তার মধ্যে আমাদের দেশে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে পাইরেসি। এর আগে “বরবাদ” ছবিটিরও পাইরেসি হয়েছে, কিন্তু কোনো ধরনের শক্ত পদক্ষেপ তখন নেওয়া হয়নি। এবার “তাণ্ডব” পাইরেসির পর মনে হয়েছে “বরবাদ”–এর সময় যদি শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হতো, তাহলে পাইরেসির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা এবার আর এতটা সাহস পেত না।’

কথা প্রসঙ্গে শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘আমরা যখন “তাণ্ডব” পাইরেসির খবর পাই, বনানী থানায় কপিরাইট আইনে তিনজনের নাম–পরিচয় উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করি। এরপর বনানী থানার সেই মামলা ডিবিতে স্থানান্তর হয়, ঠিক এক দিন পার হওয়ার আগে প্রধান অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে ডিবির এ পদক্ষেপ আমাদের আশাবাদী করেছে। আমরা এ–ও চাইব, যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁদের কাছে সিনেমার কপিটা কীভাবে গেল, সেটা যেন জানা যায়। একই সঙ্গে এটার শিকড় বের করে সেই শিকড় যেন উপড়ে ফেলা যায়। যদি পাইরেসির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা যায়, তাহলে সিনেমা বানানো অসম্ভব।’