এফডিসিতে জয়া, রাফী, মেহজাবীন আর বিজ্ঞাপনের এলাহি আয়োজন
বুধবার দুপুরে এফডিসির প্রধান ফটকে ঢুকতেই যেন অন্য এক চিত্র—অন্য দিনের চেয়ে আজ যেন অনেক বেশি ব্যস্ততা। কড়ইতলায় সারি সারি শুটিং ইউনিটের গাড়ি পার্ক করা, এর সামনেই জেনারেটরবাহী গাড়ি, আর সামনেই নাশতার আয়োজন নিয়ে বসে থাকা প্রোডাকশন টিমের সদস্যদের চোখে পড়ে।
কৌতূহল নিয়ে আরও এগোতেই সামনে পড়ে বাজারের সেট। চায়ের টং থেকে বইয়ের দোকান—সব আছে সেখানে। পাশেই নাচের রিহার্সাল করছিলেন ৫০ জনের বেশি তরুণ-তরুণী। প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ানো আরেক দল। সব মিলিয়ে শখানেক শিল্পীর পদচারণ সেখানে। একটি বিজ্ঞাপনের জন্য এই এলাহি আয়োজন। বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করছেন তরুণ নির্মাতা আদনান জুলকার।
পাশেই পোশাকের বহরের কাছে দেখা মিলল কস্টিউম ডিজাইনার ফারজানা সানের। বিজ্ঞাপনটির পোশাকসজ্জার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। শাকিব খানের ‘তুফান’, ‘বরবাদ’ ও সর্বশেষ ‘তাণ্ডবে’ কস্টিউম ডিজাইন করে প্রশংসা পেয়েছেন। সান জানান, বিজ্ঞাপনটি একটা মশা নিরোধক স্প্রের। সকাল থেকেই চলছে শুটিং। প্রথম আলোকে এ কস্টিউম ডিজাইনার বলেন, ‘৭৫–এর বেশি শিল্পী এতে অংশ নিয়েছেন। বেশির ভাগ শিল্পীই তরুণ। বর্তমানের তরুণদের ফ্যাশনই ধরা পড়বে বিজ্ঞাপনটির কস্টিউমে।’
এ শুটিংয়ের বাইরে এফডিসিতে আজ ছিল আরও দুটি শুটিং। এফডিসির জসিম ফ্লোরে একটি রিয়েলিটি শোর দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। যেখানে অংশ নেন জয়া আহসান, মেহজাবীন চৌধুরী ও রায়হান রাফী। আর এর সামনেই ৭ নম্বর ফ্লোরে একটি রান্নার অনুষ্ঠানের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ফ্লোরের ভাড়া কমিয়েছে এফডিসি। এর পর থেকেই শুটিং বেড়েছে সেখানে। এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি জানিয়েছেন, নির্মাতাদের এফডিসিমুখী করতে আরও কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তাঁরা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এফডিসিতে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে, এটা সবার জন্যই আনন্দের। তবে ফ্যাসিলিটি নিয়ে নির্মাতাদের এখনো অনেক দাবি ও অভিযোগ রয়েছে। মনে করি, আরও কিছু সুবিধা যোগ হলে কাজের পরিমাণ বাড়বে। ইতিমধ্যেই ফ্লোরের আধুনিকায়ন থেকে কিছু সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো দ্রুত পাওয়া গেলে ‘‘তাণ্ডব” এর মতো চলতি বছরের বড় ছবিগুলোর নির্মাতা-প্রযোজকেরাও এফডিসিমুখী হবেন।’
তবে এর বাইরে ভিন্ন চিত্রও এদিন দেখা গেছে। চলচ্চিত্রগ্রাহক সংস্থার সামনে বসার জায়গা থেকে থেকে আমতলায় ছিল সুনসান নীরবতা। একসময় জুনিয়র শিল্পীদের আড্ডায় মুখর থাকলেও সেখানে আজ কাউকে দেখা যায়নি। এফডিসিকেন্দ্রিক ছবি কমে যাওয়ার পর থেকেই শিল্পীদের যাতায়াত কমেছে এখানে। ক্যানটিনের সামনে কথা হয় লাইট সহকারী মিজানের সঙ্গে। কিছু ছবিতে জুনিয়র শিল্পী হিসেবে অভিনয়ও করেছেন তিনি। মিজান জানান, বিকেল বা সন্ধ্যায় কিছু শিল্পী আসেন, তবে কাজের জন্য, নয় আড্ডা দিতে। প্রথম আলোকে মিজান বলেন, ‘সিনেমার কাজ তো নাই। এখানে এখন বিজ্ঞাপনের শুটিং বেশি হয়। তাই জুনিয়র শিল্পীদের ইদানীং দেখা যায় না এখানে।’
শিল্পী সমিতি, প্রযোজক সমিতি এবং পরিচালক সমিতিতেও কাউকে দেখা যায়নি। অন্য সময় অনেক নির্মাতাকে আড্ডায় পাওয়া গেলেও আজ তেমন কাউকে দেখা যায়নি সেখানে। ফিরতে ফিরতে নামল বৃষ্টি, মিলল কিছুটা স্বস্তিও।