কী আছে দুই টিকটকারের ভাগ্যে
আজ যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে তাসভীর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী দিনে হবে ‘দেশলাই’–এর প্রিমিয়ার। কিউ পরিচালিত সিনেমাটিতে ঢাকা ও কলকাতার শিল্পীদের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন প্রিয়াম অর্চি
‘আমার অনেক ফলোয়ার নেই কিন্তু সুয়ের আছে। সুয়ের এক মিলিয়ন ফলোয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুয়ের ভাগ্যে কী হয়?’ কয়েক দিন আগে ‘দেশলাই’ নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন প্রিয়াম অর্চি। সেই সূত্র ধরেই আলাপ শুরু, সিনেমাটিতে সু চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। জানালেন, ভিডিওটি তিনি সিনেমার প্রচারের জন্য করেছেন কিন্তু এতে বাস্তবতাও লুকিয়ে আছে। ‘আমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব বেশি অনুসারী নেই। এখন এমন একটা সময়, যখন অনুসারী দেখে অনেক কিছু ঠিক করা হয়। আমাদের সিনেমাতেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টিকটকার, ইনফ্লুয়েন্সার নিয়ে বক্তব্য আছে,’ বললেন প্রিয়াম।
নিজের নিয়মে
শুরু থেকেই প্রিয়াম ঠিক করেছিলেন, ছাড় দিয়ে কাজ করবেন না; চিত্রনাট্য বা চরিত্র পছন্দ হলে তবেই রাজি হবেন। এ জন্য কাজের সংখ্যা কম হলেও আফসোস নেই। গত কয়েক বছরে ‘নির্বাণ, ‘বলী’, ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’–এর বাইরে খুব বেশি প্রকল্পে তাঁকে দেখা যায়নি। কেবল চরিত্র পছন্দ হলেই কাজ করবেন নাকি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করবেন—অভিনয়শিল্পীদের কাছে এই দ্বিধা পুরোনো। প্রিয়াম মনে করেন, এই দ্বিধা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে, সবাইকে তা-ই যেতে হয়। অভিনেত্রী এখন লন্ডনে থিতু হয়েছেন। সেখান থেকেই দেশের বাইরে ও দেশে নানা রকম বৈচিত্র্যময় চরিত্রে প্রস্তাব পাচ্ছেন, কোনটির কাজও করেছেন। বলেন, কখনো চরিত্র তাঁকে খুঁজে নেয়, কখনো–বা তিনি। এই প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা আছে কিন্তু হঠাৎই ভালো কিছু মিলে যাওয়ার যে রোমাঞ্চ, সেটাও কম নয়।
যেভাবে কিউয়ের দুনিয়ায়
তাসভীর উৎসবে অংশ নিতে প্রিয়াম আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে পৌঁছে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে। সেখান থেকে গত শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন কিউয়ের দুনিয়া যুক্ত হওয়ার গল্প। কলকাতার নির্মাতা কৌশিক মুখার্জি পরিচিত কিউ নামে; ভারতের স্বাধীন ঘরানার নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ‘গান্ডু’, ‘তাসের দেশ’ থেকে ‘গার্বেজ’—নিজের কাজ দিয়ে আলাদা এক দুনিয়া তৈরি করেছেন তিনি। ভারতের গোয়ায় চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ। ‘“পায়ের তলায় মাটি নাই”–এর প্রদর্শনী উপলক্ষে আমরা সেবার গিয়েছিলাম। ছবির প্রযোজক (আবু শাহেদ) ইমন ভাই কিউয়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন।
এরপর ২০২৩ সালে ভারতে গিয়েছিলাম ভিসাসংক্রান্ত কাজে। তখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয়; অনেক কথা হয়, এভাবেই দেশলাই সিনেমায় যুক্ত হই,’ বলছিলেন প্রিয়াম। কিউয়ের আগের কাজগুলো প্রিয়ামের দেখা ছিল, তিনি নিজেও নির্মাতার ভক্ত; তাঁর সিনেমায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব তাই লুফে নিয়েছিলেন তিনি।
সিনেমাটি ও নিজের চরিত্র নিয়ে প্রিয়াম বলেন, জুয়েল আর সু–এর যোগসূত্র হচ্ছে দুজনের কাছেই ইন্টারনেটের দুনিয়াই সব। যে দুনিয়ায় টিকটক, অনলাইনের প্রভাব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু লাখো ফলোয়ার দিয়ে যে জীবনের কঠিন বাস্তবতা এড়ানো যায় না, সেটাই উঠে আসবে এই সিনেমায়।
কী আছে ‘দেশলাই’–এ
গল্পের মূল চরিত্র জুয়েল একজন টিকটকার। সে হিরো হতে চায়, ইতিমধ্যে তার ১৫ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। জুয়েল এবং তার ভাই জীবন—দৈনিক মজুরিতে শ্রমিকের কাজ করে। একটি ইনফ্লুয়েন্সার কোম্পানিতে যোগ দিতে কাতারে যাওয়ার পরিকল্পনা করে দুই ভাই। এরপর কী হয়, তা নিয়েই সিনেমার গল্প। সম্প্রতি প্রকাশিত সিনেমার ট্রেলারে এসেছে জুয়েলের ধূসর দুনিয়ার গল্প। সিনেমার গল্প সম্পর্কে ট্রেলারে পুরোপুরি ধারণা দেননি নির্মাতা। বোঝা গেছে, জুয়েল যেন এক অগ্নিগোলক; যা যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে! প্রিয়াম ছাড়া ছবিতে অভিনয় করেছেন সিজু শাহরিয়ার, কাজী নওশাবা আহমেদ, সায়ন ঘোষ, অমিত রুদ্র, মুনসিফ মিম, রাহি আবদুল্লাহ প্রমুখ। ছবির চিত্রনাট্য করেছেন কিউ ও সুরজিত সেন। ২০২৩ সালের দিকে বাংলাদেশ ও ভারতে হয় সিনেমাটির শুটিং। ‘দেশলাই’–এর সহপ্রযোজক চরকি।
নির্মাতার বার্তা
ছবির অভিনেত্রী প্রিয়াম উৎসবে গেলেও নির্মাতা যেতে পারেননি। সিনেমাটি নিয়ে কিউ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গল্পটা, মূল চরিত্র, সময়, টিকটকার, ইনফ্লুয়েন্সার—সবই এই সময়ের, একদম ২০২৫–এর। একটা ছোটগল্প লিখেছিলেন সুরজিত সেন। আরও অন্য সব সিনেমার মতো এটাও এক রাতে আমাদের দুজনের গুঞ্জনে জন্ম নেয়। জুয়েল আমাদের খুব কাছের মানুষ। ওর জীবনটা মিষ্টি দুঃখে ভরা। ১২ অক্টোবর প্রিমিয়ার হবে সিনেমার।’
পরে এক ই–মেইল বার্তায় তিনি জানান, এই সময়ে আমাদের জীবনযাত্রার এক বিস্ময়কর চিত্র তুলে ধরতে যাচ্ছে দেশলাই। যেখানে সীমান্তগুলো ধীরে ধীরে স্থায়ী ধূসর অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। কিউ বলেন, ‘জুয়েল চরিত্রটির মাধ্যমে মানুষের জীবন যে ডিজিটালি দখল হয়ে যাচ্ছে, সেটা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। এই সিনেমা দুই বাংলার শিল্পীদের সৃষ্টিশীল আত্মার সাক্ষ্যও বহন করে।’