গ্লোবাল মিডিয়া মেকার্স থেকে ফিরে
বাবার চিকিৎসা করাতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মাকসুদ হোসেন। সেখানে থাকা অবস্থায়ই গত মে মাসের শেষ দিকে হঠাৎ জানতে পারেন, তিনি গ্লোবাল মিডিয়া মেকার্সে জায়গা পেয়েছেন। তরুণ নির্মাতাদের চলচ্চিত্র বিষয়ে জানার সুযোগ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের এই প্ল্যাটফর্ম। প্রশিক্ষক হিসেবে থাকেন বিভিন্ন দেশের নামকরা প্রযোজক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী থেকে চলচ্চিত্র উৎসবের নীতিনির্ধারকেরা।
যৌথভাবে এটি আয়োজন করে ফিল্ম ইনডিপেনডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক ব্যুরো। বিশ্বের স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতা ও হলিউডের নির্মাতাদের নিয়ে কাজ করায় ফিল্ম ইনডিপেনডেন্টের সুনাম রয়েছে। তাদের মাসব্যাপী এই আয়োজন থেকে নতুন করে বিশ্ব চলচ্চিত্র সম্পর্কে জেনেছেন বাংলাদেশি নির্মাতা মাকসুদ হোসেন।
গ্লোবাল মিডিয়া মেকার্সে কারা জায়গা পান? এ প্রশ্নের জবাবে মাকসুদ জানান, বিশ্বের অনুন্নত বা সিনেমা নিয়ে অনগ্রসর দেশের তরুণ পরিচালকেরাই এতে সুযোগ পান। সিনেমা নির্মাণ, পোস্ট প্রোডাকশন, বিপণনসহ নানা বিষয়ে জানার সুযোগ করে দেয় ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এ আয়োজন। প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট, নির্ধারিত সময় ও বাজেটের মধ্যে নির্মাণ কৌশল, সিনেমা বানানোর পর হল ও ওটিটিতে বিপণনপদ্ধতি, পরিবেশনা কেমন হওয়া উচিত, সেটাও জানানো হয়। এ ছাড়া কোন চলচ্চিত্র উৎসব কী ধরনের সিনেমাকে উৎসাহিত করে, এ বিষয়ও প্রশিক্ষণে থাকে।
বিনা খরচে এমন ফেলোশিপে অংশগ্রহণ তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ, বলেন মাকসুদ। তিনি বলেন, ‘কাজ তরুণদের এই আয়োজনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়। এটা ছিল আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। সিনেমা নিয়ে আগে যা জেনেছি, তা থেকে এবার নতুন অনেক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে।’ চলতি বছরের এ আয়োজনে দক্ষিণ আফ্রিকা, লিবিয়া, ইয়েমেন, নামিবিয়া, মিসর, নেপাল, সিরিয়াসহ ১৫ দেশের ৪০ নির্মাতা জায়গা পেয়েছিলেন।
প্রশিক্ষক ছিলেন রবিন সুইকর্ড। ২০০৯ সালে অস্কার মনোনয়ন পাওয়া ছবি দ্য কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটন-এর তিনি অন্যতম চিত্রনাট্যকার। প্রশিক্ষক হিসেবে আরও ছিলেন এমিতে মনোনীত ও লোকার্ন চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা প্রযোজকের পুরস্কার পাওয়া টেড হোপ। ছিলেন কান, ভেনিস, বার্লিন, লোকার্নসহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবের নীতিনির্ধারকেরা। মাকসুদ বলেন, ‘চিত্রনাট্য রচনার অনেক পর্যায় থাকে, ধরন থাকে, যেগুলো সরাসরি হাতে-কলমে শিখেছি। এখন ইনডিপেনডেন্ট সিনেমা বানানোর সবচেয়ে বড় বাধা অর্থ, পরে দর্শকদের কাছে পৌঁছানো। এগুলো কাটিয়ে উঠতে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে জেনেছি। মার্কেটিং, ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি; এগুলো সম্পর্কে গভীরভাবে জানার সুযোগ হয়েছে।’
২০১৬ সাল থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নিয়ে কাজ করছে গ্লোবাল মিডিয়া মেকার্স। তুরস্ক, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন, তিউনিসিয়াসহ কয়েকটি দেশ নিয়ে শুরু হয় এই আয়োজন। পরে যুক্ত হয় দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান। বাংলাদেশ থেকে আগে এই আয়োজনে সুযোগ পেয়েছেন রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত, আরিফুর রহমান, নুহাশ হুমায়ূন, সুমন দেলয়ার, তাসমিয়াহ আফরিন, আরিক আনাম প্রমুখ। এবারের এই আয়োজনে মাকসুদের সঙ্গে সুযোগ পেয়েছেন আরেক বাংলাদেশি নির্মাতা মেহেদি হাসান। সম্প্রতি ‘সাবা’ নামে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ করেছেন মাকসুদ।