শুক্রবার ছুটির দিনে চলচ্চিত্রটির প্রিমিয়ার শো হয়ে গেল চট্টগ্রামের প্রেসক্লাবে। শো শুরু হয় বিকেল সাড়ে চারটায়। তবে এর আগেই ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে দর্শকদের ভিড় বাড়তে থাকে।
শো শুরু হওয়ার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে পুরো মিলনায়তন। অনেকে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে চলচ্চিত্রটি উপভোগ করেন।
সরকারি অনুদানে নির্মিত এ চলচ্চিত্র দেখতে হাজির হন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালামও। শো শুরুর আগমুহূর্তে মেয়র বলেন, গল্পটা করুণ। তবে অসাধারণ। এটি দর্শকের হৃদয়ে আজ নাড়া দিয়েছে। চলচ্চিত্রের নির্মাণও নান্দনিক। অভিনেতারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করেছেন। গল্পের চমক দর্শককে টেনে নিয়ে গেছে শেষ পর্যন্ত। একবারও ক্লান্তি আসেনি। দর্শক দারুণ উপভোগ করেছেন চলচ্চিত্রটি। এম এ সালাম বলেন, ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন কাজ। কিন্তু পরিচালক পংকজ পালিত দক্ষতার সঙ্গেই এটি নির্মাণ করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের দুটি দিক এ চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে। সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী তাঁত গল্পে এ দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা সমান্তরালভাবে তুলে এনেছেন। আসলে মুক্তিযুদ্ধের একেকটি দিন নিয়ে একেকটি মহাকাব্য লেখা যাবে। তৈরি করা যাবে ধ্রুপদি চলচ্চিত্র।
সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার বাংলাদেশ সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষক পংকজ পালিত শোতে উপস্থিত ছিলেন। চলচ্চিত্রটি নির্মাণের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার স্মৃতি পংকজ পালিত দর্শকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন। বলেন, ‘একটি না বলা গল্প’ চলচ্চিত্রে লড়াই-সংগ্রামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের আখ্যান চলতে থাকে সমান্তরালে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সন্তানকে সামনে রেখে মুক্তিযোদ্ধা বাবা স্মৃতিচারণা করেন। সে স্মৃতিচারণা রহস্যজাগানিয়া। গল্পটির পরতে পরতে রয়েছে উত্তেজনা, যা দর্শককে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’
পংকজ পালিত আরও বলেন, ‘সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী অনেক দিন আগে লিখেছিলেন “মৃত্যু যেভাবে বাঁচায়” নামের এক দুর্দান্ত গল্প। এটি পড়ার পর গল্পটি পর্দায় উপস্থাপনের পরিকল্পনা মাথায় আসে। তখন বিশ্বজিৎ চৌধুরীর সঙ্গে আলাপ শুরু হয়। তাঁর সম্মতি পাওয়া গেল। এরপর অনুদান কমিটিতে চিত্রনাট্য জমা দিই। অনুদানও মিলে গেল। পরে চলচ্চিত্রটির নাম রাখা হলো “একটি না বলা গল্প”। আসলে এ গল্পটি এত ইউনিক যে সব দর্শকই এটি পছন্দ করবেন।’
বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘অনেক বছর আগে গল্পটি লিখেছিলাম। গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বে লেখা। পংকজ পালিত একজন দক্ষ ও শিক্ষিত চলচ্চিত্র বোদ্ধা। তিনি গল্পটি চলচ্চিত্রে রূপ দিলেন। দর্শক এটি দেখে চমকিত হবেন।’
গল্প-অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক
চলচ্চিত্রে মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, আর তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে রুনা খান। সরকারি অনুদানের চলচ্চিত্রটি রওনক হাসান অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। এর আগে তিনি ‘নকশিকাঁথার জমিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। আর রুনা খান সরকারি অনুদানে প্রথম অভিনয় করেন ‘ছিটকিনি’ চলচ্চিত্রে। এ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচক বিভাগে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পেয়েছেন রুনা খান। এ দুজনের অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক। রাজিউল ইসলাম নামের এক দর্শক বলেন, গল্পটা চমৎকার। ছবির নির্মাণও ভালো। রওনক আর রুনা দারুণ অভিনয় করেছেন। পাশাপাশি অন্য অভিনেতা যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত।