বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলা সিনেমা

এ বছর বিদেশের বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করে বরবাদ সিনেমা। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বজুড়েই এখন বাংলা সিনেমার দর্শক। প্রবাসী আয়েও আলোচনায় ঢালিউডের সিনেমা। পাশাপাশি বিশ্বের একাধিক বড় বড় আয়োজনে অংশ নিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে ঢালিউড সিনেমা। স্বাধীন ঘরানার বেশ কিছু সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন বিদেশি প্রযোজক।

বড় ভরসা বিদেশের বাজার
চলতি বছর বিদেশের বাজার থেকে আয়ে বছরের শুরু থেকে এগিয়ে ছিল বরবাদ, জংলি ও দাগি। পরে যুক্ত হয় উৎসব ও তাণ্ডব। এ বছর প্রতিটি সিনেমার গড় আয় এক লাখ ডলারের বেশি। দেশের বাইরে জংলি পরিবেশনার দায়িত্বে ছিলেন জাহিদ হাসান। একই সঙ্গে তিনি সিনেমাটির প্রযোজক। তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে সিনেমা হল নেই। মাল্টিপ্লেক্স হাতে গোনা। দেশে সিনেমা রিলিজ করে শুধু দেশের বাজার থেকে টাকা ওঠানো সম্ভব নয়। সেখানে আমাদের জন্য বোনাস বিদেশের বাজার। যেমন শুধু জংলি দিয়ে আমরা এক লাখের বেশি ডলার আয় করেছি। এটা আমাদের ভরসার জায়গা তৈরি করছে।’

‘বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলি’ সিনেমার পোস্টার
কোলাজ

জংলির পর আলোচনায় ছিল উৎসব। অল্প সময়েই প্রায় তিন লাখ ডলার আয় করে এটি নতুন রেকর্ড গড়ে। সিনেমার পরিচালক তানিম নূর মনে করেন, আশার একটা নাম হয়ে উঠছে বিদেশের বাজার। তাদের ওখানে উৎসব আরও বেশি হলে মুক্তি পেলে আরও দু–তিন লাখ ডলার আয় করতে পারত।

এই পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশের বাজার থেকে আমরা ভালো একটা সাপোর্ট পেয়েছি। বুঝতে পারছি, আমাদের সিনেমার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। আরও বড় পরিসরে মুক্তি দিতে পারলে আরও বেশি আয় করতে পারতাম। এই বাজার আমাদের সিনেমার জন্য বড় একটি সুযোগ। ভারতের বাংলাভাষী দর্শকও আমাদের সিনেমা দেখতে চায়। ওখানে উদ্যোগ নিয়ে নিয়মিত সিনেমা মুক্তি দিলে আমাদের জন্য অনেক আশাব্যঞ্জক খবর হবে।’ একটি সূত্র জানায়, এ বছর বিদেশের বাজার থেকে সিনেমাগুলো ১২ লাখ ডলারের বেশি আয় করেছে।

মেহেদীর ‘বালুর নগরীতে’ এ বছর পুরস্কৃত হয়। ছবি: কোলাজ

আন্তর্জাতিক উৎসবেও প্রশংসিত
বালুর নগরীতে কার্লোভি ভেরি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রক্সিমা শাখায় প্রতিযোগিতা করে। এটি এ উৎসবে অংশ নেওয়া প্রথম কোনো বাংলাদেশি সিনেমা। সিনেমাটি ‘গ্রাঁ প্রি’ পুরস্কার জেতে। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ১৫ হাজার ডলার। সিনেমাটি পরে বুসান, কায়রো, ব্যাংককসহ ১০টির মতো চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া ৭৮তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের মতো স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা শাখায় অংশ নেয় আলী। এটি পরিচালনা করেছেন আদনান আল রাজীব। সিনেমাটি উৎসব থেকে বিশেষ স্বীকৃতি পায়। স্বল্পদৈর্ঘ্যটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আল আমিন।

প্রযোজনায়ও বিদেশি লগ্নি
বাংলাদেশের সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অন্য দেশের নাম, বিদেশের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ গত মাসে বার্লিন ওয়ার্ল্ড সিনেমা ফান্ড থেকে ৪০ হাজার ইউরোর (প্রায় ৫৭ লাখ টাকা) তহবিল পায় সুরাইয়া। বাংলাদেশের সিনেমার জন্য যা বড় একটি অর্জন। একই সঙ্গে সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন নরওয়ের প্রযোজক আর্নে ধার। সিনেমাটি পরিচালনা করছেন রবিউল আলম। সিনেমার প্রযোজক ফজলে হাসান। দুই বছর আগে এই বার্লিন ফান্ড থেকেই ৫০ হাজার ইউরো তহবিল সহায়তা পেয়েছিল দ্য ডিফিকাল্ট ব্রাইড। এটি পরিচালনা করছেন রুবাইয়াত হোসেন। সে ছবির কাজ এখন চলছে।

আরও পড়ুন
পরিচালক বিপ্লব সরকার। নির্মাতার সৌজন্যে

বাংলাদেশের আরেক পরিচালক বিপ্লব সরকারের দ্বিতীয় সিনেমা দ্য ম্যাজিক্যাল মেন-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এশিয়ার আলোচিত প্রযোজক ফ্রান বর্জিয়া। সিঙ্গাপুরের এই প্রযোজক প্রায় দুই দশক ধরে সিনেমা প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত। অচিরেই ছবির কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন বিপ্লব। বাংলাদেশের এই তরুণ নির্মাতা জানান, শুধু ফ্রানই নন, তাঁর সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন ফ্রান্সের আরেক প্রযোজক ফ্রঁসোয়া ডি-আর্টেমেয়ার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিকল্প ধারার সিনেমার প্রযোজক হিসেবে তিনিও আলোচিত।

বিপ্লব প্রথম আলোকে জানান, ‘বেশির ভাগ সময়ই আমাদের প্রযোজকের সংকটে থাকতে হয়। কে প্রযোজনা করবে, এ প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। সেখানে প্রযোজক পাওয়াটা স্বাধীন ঘরানার সিনেমার পরিচালকদের জন্য সুখবর।’ তিনি বলেন, ‘আমার সিনেমায় দুজন প্রযোজক যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে বুসানে দুই বছর আগে পরিচয়। তাঁরা আমার সিনেমাটি সে সময় পছন্দ করেন। পরে আগ্রহী হয়েই আমার পরবর্তী সিনেমা সম্পর্কে জেনে প্রযোজক হিসেবে যুক্ত হন। তাঁদের বাংলাদেশের সিনেমার পাশে থাকাটা দারুণ একটি খবর।’