পর্দার খলনায়ক, বাস্তবের আদর্শ মানুষ মিজু আহমেদ

ঢালিউডের দাপুটে খলনায়ক ছিলেন মিজু আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

মিজু আহমেদকে কে না চেনেন! পর্দায় মূলত খল অভিনেতা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিলেন মিজু আহমেদ। তাঁর অভিনয়ের জায়গাটা এমনই সমৃদ্ধ ছিল যে দর্শক যখন পর্দায় দেখতেন, রীতিমতো গালমন্দও করতেন সিনেমা হলে! কিন্তু বাস্তব জীবনে কেমন ছিলেন তিনি? পর্দার বাইরে এই খল অভিনেতা ছিলেন অনেকের আদর্শ। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই গুণী অভিনেতা। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।

মূলত খল অভিনেতা হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রে বেশি পরিচিত মিজু আহমেদ। তবে একজন প্রযোজক হিসেবেও ঢালিউড পাড়ায় পরিচিতি রয়েছে তাঁর। অবশ্য চলচ্চিত্রে মিজু আহমেদ নামে পরিচিতি পেলেও তাঁর প্রকৃত নাম মিজানুর রহমান। এই অভিনেতা ভক্তদের মুখোমুখি হতে ভয় পেতেন। একবার নাকি ফেরি পার হয়ে ভক্তদের মুখোমুখি পড়ে যান অভিনেতা মিজু আহমেদ।

একদিন তোম এমনও হয়েছে, গাড়ির সামনে ভক্তরা দাঁড়িয়ে অনুরোধ করে বসেন, প্রিয় খল অভিনেতার মুখ থেকে সরাসরি গালি শুনবেন! পরে উপায় না পেয়ে মিজু আহমেদ ভক্তদের ‘হালকা ঝাড়ি’ শোনান।

পরিবারের সঙ্গে মিজু আহমেদ
সংগৃহীত

আর তা শুনে ভক্তরা খুশিতে করতালি দিতে শুরু করেন। এমনই ছিল খল অভিনেতা মিজু আহমেদের জনপ্রিয়তা। চরিত্রের প্রয়োজনে ছবিতে অশালীন শব্দ ব্যবহার করে সংলাপ বলতে হতো মিজু আহমেদকে। কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি নাকি কখনোই কোনো আপত্তিকর কথা মুখে আনতেন না, স্বভাবে ছিলেন স্বল্পভাষী। ২০১৯ সালে প্রথম আলোকে মিজুর স্ত্রী পারভিন আহমেদ বলেন, ‘তাঁর মতো স্বামী পাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের।’ দুই মেয়ে তাসনিম আহমেদ, আফিয়া আহমেদ ও ছেলে হারসাত আহমেদের আদর্শ তাঁদের বাবা মিজু আহমেদ।
বড় মেয়ে তাসনিম একটি ব্যাংকে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মুখে কোনো দিন কোনো বাজে কথা তো দূরে থাক, কখনো আমাদের সামনে কাউকে “তুই” বলেও সম্বোধন করেননি। এতটাই স্বল্পভাষী ছিলেন যে বোঝাই যেত না তিনি বাড়িতে আছেন, নাকি নেই।’

শৈশব থেকেই থিয়েটারের প্রতি ঝোঁক ছিল মিজু আহমেদের। ১৯৭৮ সালে ‘তৃষ্ণা’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। দুবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি। ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর মিজু আহমেদ কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ তিনি হৃদ্‌রোগে মারা যান।

দেড় শতাধিক ছবির এই অভিনেতা মিজু আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

মিজু আহমেদ ১৭ নভেম্বর ১৯৫৩ সালে কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম মিজানুর রহমান। শৈশব থেকে তিনি থিয়েটারের প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কুষ্টিয়ার স্থানীয় একটি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত হন।

১৯৭৮ সালে ‘তৃষ্ণা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। কয়েক বছর পর তিনি ঢালিউড চলচ্চিত্রশিল্পে অন্যতম সেরা একজন খলনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বড় পর্দায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০টি ছবি মুক্তি পেয়েছে তাঁর। তাঁর অভিনীত ছবিগুলো মধ্যে হচ্ছে ‘তৃষ্ণা’ (১৯৭৮), ‘মহানগর’ (১৯৮১), ‘স্যারেন্ডার’ (১৯৮৭), ‘চাকর’ (১৯৯২), ‘সোলেমান ডাঙ্গা’ (১৯৯২), ‘ত্যাগ’ (১৯৯৩), ‘বশিরা’ (১৯৯৬), ‘আজকের সন্ত্রাসী’ (১৯৯৬), ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ (১৯৯৭), ‘কুলি’ (১৯৯৭), ‘লাঠি’ (১৯৯৯), ‘লাল বাদশা’ (১৯৯৯), ‘গুন্ডা নাম্বার ওয়ান’ (২০০০), ‘ঝড়’ (২০০০), ‘কষ্ট’ (২০০০), ‘ওদের ধর’ (২০০২), ‘ইতিহাস’ (২০০২), ‘ভাইয়া’ (২০০২), ‘হিংসা প্রতিহিংসা’ (২০০৩), ‘বিগ বস’ (২০০৩), ‘আজকের সমাজ’ (২০০৪), ‘মহিলা হোস্টেল’ (২০০৪), ‘ভণ্ড ওঝা’ (২০০৬) ইত্যাদি।
[এ প্রতিবেদনের তথ্য ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট প্রথম আলোয় ছাপা হওয়া ‘পর্দায় যেমন দেখাতেন তেমন ছিলেন না’ প্রতিবেদন থেকে সংগৃহীত]