‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ শিশুতোষ চলচ্চিত্র হলেও আছে সব বয়সীদেরই মনের খোরাক

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির সেটে পরীমনি ও সিয়াম।
সংগৃহীত

মহরত থেকে মুক্তি—মাঝখানে কেটে গেছে দুটি বছর। এই দুই বছরে অনেক বদলে গেছে পরীমনির জীবন। সংসার হয়েছে, হয়েছেন সন্তানের মা। পাঁচ মাস বয়সী রাজ্যকে একা বাসায় রেখে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকা এখন আর সম্ভব নয়। মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির প্রচারণায় সন্তানকে নিয়েই তাই ছুটছেন তিনি। প্রচারণার কাজে সকাল সকাল পরীমনি যখন ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছেন, ছবিটি নিয়ে কথা বলছেন, তখন সন্তান থাকছে গাড়িতে, সহকারীর কাছে। প্রয়োজনীয় কাজটুকু সেরেই দৌড়ে আবার ছুটে আসছেন সন্তানের কাছে। বুকে জড়িয়ে আদর করেন। ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’–এর প্রচারণায় দুই সপ্তাহ ধরে এভাবেই চলছে পরীমনির রুটিন।

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে পরীমনি ও তানভীর
ছবি: সংগৃহীত

আজ শুক্রবার দেশের ১৫টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’। মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস ‘রাতুলের রাত রাতুলের দিন’ অবলম্বনে ছবি বানিয়েছেন আবু রায়হান জুয়েল। আগে নাটক, টেলিছবি ও বিজ্ঞাপনচিত্র বানালেও বড় পর্দায় এটাই তাঁর প্রথম কাজ। ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রে পরীমনির বিপরীতে অভিনয় করেছেন সিয়াম ও তানভীর। গেল ১০ মাসে পরীমনির কোনো ছবি মুক্তি না পেলেও সিয়ামের মুক্তি পেয়েছে দুটি চলচ্চিত্র: ‘শান’ ও ‘দামাল’। অন্যদিকে ‘গহীন বালুচর’ দিয়ে বড় পর্দায় নাম লেখানো তানভীরের সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘রাতজাগা ফুল’। এবারই প্রথম পরীমনির সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করতে যাচ্ছেন তিনি।

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবিতে শিশুশিল্পীদের সঙ্গে সিয়াম ও পরীমনি
ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনকে ঘিরে একদল শিশু–কিশোরের রহস্য-রোমাঞ্চের গল্প ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’। এ ছবিতে ভিন্নভাবে সুন্দরবনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বলে জানালেন আবু রায়হান জুয়েল। সুন্দরবনে নৌবিহারে গিয়ে এক দল শিশু ডাকাতের কবলে পড়ে। তাদের উদ্ধারের গল্প নিয়েই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে হয়েছিল ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’-এর মহরত। ওই মাসেরই ১৫ তারিখে শুরু হয় শুটিং। প্রথম লটের শুটিং ৭ এপ্রিল শেষ হয়। এরপর ওই বছরের অক্টোবরে পুরো শুটিং শেষ করেন পরিচালক। সদরঘাট থেকে সুন্দরবন, সুন্দরবন থেকে খুলনা, পানাম সিটি, নালিতাবাড়ীসহ ঢাকার রাস্তাঘাটে গল্প অনুযায়ী সিনেমাটির দৃশ্যধারণ হয়েছে।

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির শুটিংয়ে পরীমনি ও সিয়াম আহমেদ

পরিচালক জানালেন, সুন্দরবনে শুটিং করাটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। বাঘের ভয় যেমন রয়েছে, তেমনি আছে জোয়ার-ভাটার ধকল। অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলী ও শিশুশিল্পীদের অভিভাবকসহ মোট দুই শতাধিকের একটি দল। এত বড় ইউনিট নিয়ে লঞ্চে অনেক দিন থাকাটাও ছিল কঠিন। শুটিংয়ের মাঝপথে করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় বিলম্বিত হয়েছে সিনেমার কাজ। এরপরও সিনেমায় অভিনয় করা শিশুদের মা–বাবাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে কাজটি শেষ করেছেন।

জুয়েল বললেন, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন সুস্থ বিনোদনের শিশুতোষ চলচ্চিত্র হলেও এটি সব বয়সীর মনের খোরাক জোগাবে। গল্পে সিনেমাটিক সব উপাদান রয়েছে।’

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবির মহরত

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রে তৃষা চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমনি। তাঁর মতে, নানা রকম গল্পে অভিনয় করলেও শিশুতোষ ছবিতে এবারই প্রথম। তিনি বললেন, ‘এটি আমার অভিনয়জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা যোগ করেছে। সুন্দরবনের কাদাপানি, লঞ্চ ও নদীতে সিনেমার শুটিং করেছি। কাজটি ছিল কষ্টসাধ্য। দর্শক যদি সিনেমাটি দেখেন, সব কষ্ট সার্থক হবে। শুধু শিশুরা নয়; তরুণ, বয়স্ক সবাই সিনেমাটি দেখতে পারেন। আশা করছি, তাঁরা কেউই নিরাশ হবেন না।’

সব শিশু ও তাঁদের মা–বাবাদের প্রতি পরীমনির আহ্বান, ‘ছোট্ট পাখিরা, সিনেমা হলে আসবে। আমিও আমার ছোট্ট পাখিটাকে (রাজ্য) নিয়ে যাব। দেখা হবে সিনেমা হলে। আপনারা সবাই আপনাদের ছোট্ট পাখিদের নিয়ে আসবেন।’

‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রের প্রচারণায় পরীমনি সরব হলেও সিয়াম নীরব। জানা গেছে, কলকাতায় নতুন চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের দিনক্ষণ আগে থেকে ঠিকঠাক থাকায় সময় দিতে পারছেন না তিনি। তবে মুক্তির কয়েক দিনের মধ্যে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন পরিচালক। পরিচালক জানালেন, ডিসেম্বরে প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানে কিন্তু সিয়াম ছিলেন।

সরকারি অনুদানের ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ ছবিতে অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, আশীষ খন্দকার প্রমুখ। এ ছবির আবহসংগীতের পাশাপাশি তিনটি গানের সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী। গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন শফি মণ্ডল, ইমন চৌধুরী, কোনাল ও শামীম। আরেকটি গানের সুর করেছেন নাজির মাহমুদ, সংগীত পরিচালনা করেছেন মুশফিক লিটু আর গেয়েছেন ইমরান।