মাহির বিচ্ছেদের ঘোষণার পর প্রথমবার মুখ খুললেন রাকিব

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি জানিয়েছেন রাকিব সরকারের সঙ্গে আর সংসার করবেন না তিনি। শিগগিরই বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এই ভিডিও বার্তার পর বিচ্ছেদ নিয়ে রাকিব সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডে আছেন। সেখান থেকে গত বুধবার রাত ১০টায় হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোর সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। বিচ্ছেদ নিয়ে এই প্রথম মুখ খুললেন রাকিব। কথা বলেছেন শফিক আল মামুন

প্রথম আলো:

থাইল্যান্ডে কী করছেন

রাকিব সরকার : শরীর একটু খারাপ। মানসিকভাবেও একটু বিধ্বস্ত। এ কারণে চিকিৎসার জন্য এসেছি। ডাক্তার দেখাচ্ছি। কয়েক দিন আগে আসছি। চিকিৎসা চলছে। হয়তো আরও বেশ কয়েক দিন থাকতে হবে এখানে আমাকে।

প্রথম আলো :

মাহিয়া মাহি ভিডিওতে এসে আপনার সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু ঘটনাটি প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে যাচ্ছে, আপনার কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। কথা না বলার কারণ কী?

রাকিব সরকার : যেহেতু এই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত আমার না, তাই আমি বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলিনি, বলতে চাইওনি। তবে এখন মনে হচ্ছে কথা বলা দরকার ছিল। যেহেতু মাহি বিচ্ছেদের ব্যাপারটি নিয়ে ভিডিও দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন, হয়তো আমার কারণেই এটি করছে মাহি। এ বিষয়ে একতরফা হয়ে যাচ্ছে। দেখলাম মাহির বক্তব্যের নিচে অনেকে আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছে। মাহি যে বিচ্ছেদ চাইছে, বিচ্ছেদ চাওয়ার মতো ঘটনা আমাদের মধ্যে ঘটেনি। আর আমি কথা বলিনি মাহির প্রতি ভালোবাসা থেকে। সংসারটি বাঁচানোর জন্য।

আরও পড়ুন
রাকিব ও মাহি
ছবি: কোলাজ
প্রথম আলো:

কিন্তু মাহির ঘনিষ্ঠজনদের কেউ কেউ বলছেন, আপনিও নাকি বিচ্ছেদের পক্ষে?

রাকিব সরকার : এটি একেবারেই মিথ্যা। এটি যদি চাইতাম, তাহলে তো মাহি ভিডিও বার্তা দেওয়ার পর সবার সঙ্গে কথাই বলতাম। অনেক সাংবাদিক ভাইবোনেরা বিষয়টির ঘটনা জানতে আমাকে ফোন করেছেন। এখনো করেন। কিন্তু আমি কারও সঙ্গে কথা বলিনি। যদি বিচ্ছেদ চাইতাম, তাহলে সবার সঙ্গে কথা বলতে পারতাম। কী কারণে আমরা বিচ্ছেদ চাইছি, সেসব বিষয় তুলে ধরতে পারতাম, কিন্তু আমি তা করিনি। মাহির পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত এসেছে, আমি মনে করি, তা এখন নিরানব্বই ভাগই বিচ্ছেদের পথে। এক ভাগ নিয়েও আমি এখনো আশাবাদী, চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংসারটা আমি টেকাতে চাই। কারণ, আমি যখন মাহিকে বিয়ে করি, তখন আমার পরিবার রাজি ছিল না। তাঁদের অমতেই বিয়ে করেছি। বিভিন্ন বাধা থাকা সত্ত্বেও মাহির প্রতি ভালোবাসায় বিয়ে করেছি তাঁকে।

প্রথম আলো :

তাহলে কী কারণে এই বিচ্ছেদ?

রাকিব সরকার : তাঁর আগে কিছু কথা বলতে হবে আমাকে। মাহিকে বিয়ের পর থেকে তাঁর প্রতিটি কথাই আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। বিশ্বাস করেন, মাহিকে বিয়ে করার পর আমার মা, বোন ছাড়া কোনো মেয়ের সঙ্গে আমি কথা বলিনি। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক কারণেও কোনো মেয়ের বিষয় আসলেও কথা বলিনি। মাহি অনুমতি দিলে বলেছি। কোনো মেয়ে ফোন করলে, মাহি কাছে থাকলে ফোন ধরেছি, না থাকলে ধরিনি। গত তিন বছরে আমার মায়ের কাছে মনে হয় তিন দিন যাওয়া হয়েছে। আমার আগের ঘরের (স্ত্রীর) এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁদেরও তো ভবিষ্যৎ আছে। মাহিও তাদের পছন্দ করে। কাছাকাছি রাখতে চেয়েছে। কিন্তু আমি গত তিন বছরে মনে হয় ১০-১৫ দিনও ছেলে-মেয়েকে কাছে পাইনি। ছেলে-মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বললেও লাউড স্পিকারে কথা বলেছি। মাহির প্রতি ভালোবাসা রেখে এর চেয়ে ত্যাগ আর কি করতে পারি আমি? মাহি আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসা দিয়েছে। আমাকে বিপদ থেকেও রক্ষা করেছে সে। তাঁর দেওয়া যেকোনো শর্তই আমি মেনে চলেছি। এমনকি আমার ফোন, ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপের অ্যাকসেস—সবই মাহির কাছে। মাহি এখন যে বিভিন্ন স্ট্যাটাস, ভিডিও দিচ্ছে। কোথাও কিন্তু আমাকে দোষ দিচ্ছে না। কারণ, তাঁর প্রতি যে আমার অগাধ ভালোবাসা, সেটা সে জানে। কিন্তু আমাদের সংসারজীবনের একটা পর্যন্ত এসে এমন কিছু শর্তে পড়ে গিয়েছিলাম, যেটি মানতে পারিনি আমি। সেই শর্তের কথা বলতে চাই না। যেসব কারণেই হয়তো আজকের এই অবস্থা।

মাহিয়া মাহি। ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রথম আলো:

কত দিন হলো আপনারা আলাদা আছেন?

রাকিব সরকার : যত দূর মনে পড়ে গত বছরের জুন থেকে। আমি ও মাহি উত্তরায় আলাদা বাসায় থাকতাম। পাশেই মাহির মায়ের বাসা। আমার মোবাইলে আসা আমারই পরিবারেরই একজনের একটি এসএমএসকে কেন্দ্র করে মাহির মন খারাপ হয়। সেই থেকে মাহি আমার বাসা থেকে তাঁর মায়ের বাসায় চলে যায়। এরপর তাঁকে বাসায় ফেরানোর চেষ্টা করি, পারিনি। একটা পর্যায়ে আমি নিজেই মাহির কাছে তাঁর মায়ের বাসায় উঠি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে দুই পরিবারের সদস্যরা মিলেও বোঝাতে পারিনি। একসময় একটু বুঝেছে, আবার আরেক সময় উল্টে গেছে। এভাবেই আলাদা থাকার দিনগুলো চলে আসছি। যেটি বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াচ্ছে।

প্রথম আলো:

কিন্তু আপনিও তো দেখলাম মাহিকে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন...

রাকিব সরকার : আমার এই স্ট্যাটাসের প্রতিটি কথা, তাঁর দেওয়া প্রতিটি স্ট্যাটাস থেকে উৎসাহিত হয়েই নেওয়া। সে একবার স্ট্যাটাস দিয়েছে ‘ভয়ংকর রাত’। আরেকটি ‘আস্থার আস্তানা’। এভাবে আস্থার বিষয়টি নিয়ে একাধিক স্ট্যাটাসের আমি কষ্ট পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে হয়তো সে আস্থার মানুষ পেয়ে গেছে। ওর ফেসবুক স্টোরিতে একটি ছবি দিয়েছিল, যেটি আমার কাছে ভালো লাগেনি। ওই দিন আমি অনেক কিছুই বুঝতে পেরেছি। এসব কারণে ওই দিন থেকে আমার মনটা ভীষণ খারাপ।

প্রথম আলো :

আবার কি দুজনের এক ছাদের নিচে ফিরে আসার সুযোগ আছে?

রাকিব সরকার : সে না চাইলে তো জোর করে এটি হবে না। ওর ওপরই সবকিছু নির্ভর করে। আমার পক্ষ থেকে চেষ্টা করেছি। আমি জানি, আমার আশপাশের মানুষ জানে,আমার ওপরওয়ালা জানে, তাঁকে ধরে রাখতে আমি কী পরিমাণ চেষ্টা করেছি, করছি। কী পরিমাণ স্যাক্রিফাইস করেছি একসঙ্গে থাকার জন্য।

স্বামী রাকিব সরকার ও মাহি
ফাইল ছবি
প্রথম আলো:

কেউ কেউ বলেন, আপনি নাকি আপনার আগের স্ত্রী কাছে ফিরে যাচ্ছেন, সত্যিই নাকি?

রাকিব সরকার : না, এ রকম কোনো কিছুর সুযোগ নাই। আসলে মাহি নিজের মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে ভয় পায়। এটি তো জীবন নয়। এভাবে ভয় নিয়ে চলতে থাকলে আমাদের দুজনের জন্যই ক্ষতি। আমি আমার সন্তানদের দেখভাল করার সুযোগ পাব না, কাছে পাব না—এটা তো হয় না। মাহি আমাকে এক্সট্রিম পর্যায়ে ভালোবাসে, হয়তো এসব কারণেই ওর মধ্যে ভয় ভর করে।