মান্না বেঁচে থাকলে শাকিবকে একা লড়তে হতো না: রোজিনা
একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা। আশির দশকের ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নাম। তাঁর অভিনীত অসংখ্য সিনেমা সেই সময়ে সুপারহিট হয়েছে। দীর্ঘ অভিনয়জীবনের পর বর্তমানে দেশ–বিদেশে সময় কাটান এই অভিনেত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় তিনি। নিয়মিত ভ্লগে নিজের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা তুলে ধরেন ভক্তদের সামনে। পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ফটোশুটেও অংশ নিতে দেখা যায় তাঁকে।
সম্প্রতি চ্যানেল আইয়ের পডকাস্ট শো ইউ-টার্নে অংশ নিয়ে চলচ্চিত্রজীবনের নানা অধ্যায় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন রোজিনা। আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ার, সুস্থ থাকার রহস্য এবং সহশিল্পীদের সঙ্গে কাটানো স্মরণীয় সময়ের গল্প। তবে পুরো আলোচনার মধ্যে সবচেয়ে আবেগঘন হয়ে ওঠে প্রয়াত নায়ক মান্নাকে ঘিরে তাঁর স্মৃতিচারণা।
মান্না প্রসঙ্গে রোজিনা বলেন, ‘তখন মান্না নতুন এসেছে। আমার সঙ্গে দুয়েকটা ছবিতে কাজ হয়েছে। হিরো হিসেবে না হলেও কখনো ভাই, কখনো দেবরের চরিত্রে। খুব ভালো একজন অভিনেতা ছিল সে।’ মান্নার আত্মবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে রোজিনা বলেন, ‘শুরু থেকেই ওর ভেতরে একটা বিশ্বাস ছিল—একটা জায়গায় ও পৌঁছাবে। সত্যিই সে সেই জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছিল।’
কিন্তু মান্নার অকালমৃত্যু চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য বড় ক্ষতি বলে মনে করেন রোজিনা। তাঁর ভাষায়, ‘ও আজ বেঁচে থাকলে ইন্ডাস্ট্রি এমন হতো না। মান্নার মৃত্যু আমাদের অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেছে।’ বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এসে তিনি বলেন, ‘শাকিব খান একটা করুক, দুটো সিনেমা করুক—সত্যি বলতে ও-ই এখন ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আর তো কাউকে তেমনভাবে দেখছি না।’
পডকাস্টে রোজিনা তাঁর সুস্থ থাকার রহস্যও তুলে ধরেন। উপস্থাপকের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকাই আমার জীবনের বড় মূলমন্ত্র।’ তিনি জানান, তিন বেলা ভাত খাওয়ার বদলে তিনি দুপুরে এক বেলা ভাত খান। এতে হাঁটাচলাও হয়, শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে না। রাতে যতটা সম্ভব কম খান। পাশাপাশি নিয়মিত সাইক্লিং ও যোগাভ্যাস করেন।
চলচ্চিত্রে আসার শুরুটা পরিকল্পিত ছিল না বলেও জানান রোজিনা। তিনি বলেন, ‘আমি যাঁদের দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছি, তাঁদের সঙ্গেই কাজ করেই আমার অভিনয়জীবন শুরু।’ সেই তালিকায় রয়েছেন রাজ্জাক, আলমগীর, উজ্জ্বল, মাসুদ পারভেজ, জাফর ইকবালের মতো জনপ্রিয় নায়কেরা। নারী শিল্পীদের মধ্যে শাবানা, কবরী ও ববিতাকে আদর্শ মানেন তিনি। চলচ্চিত্রে প্রবেশের এক–দুই বছরের মধ্যেই ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান রোজিনা।
উল্লেখ্য, রোজিনা ১৯৭০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি ৩০০–এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘কসাই’ (১৯৮০) ও ‘জীবনধারা’ (১৯৮৮) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
রোজিনার কথা স্পষ্ট, চলচ্চিত্র শুধু তাঁর পেশা নয়, জীবনেরই অংশ। মান্নার মতো সহশিল্পীদের স্মৃতি, নিজের সংগ্রাম আর শিল্পের প্রতি ভালোবাসা—সব মিলিয়েই আজও তিনি দর্শকের কাছে প্রাসঙ্গিক ও শ্রদ্ধার জায়গায় অবস্থান করছেন।