রাজনীতিতে আসা নিয়ে সেদিন যা বলেছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন

‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দলটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। আজ শুক্রবার নতুন রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সূত্রে ইলিয়াস কাঞ্চনের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয় প্রথম আলো বিনোদনে। সেই সাক্ষাৎকারে নানা প্রসঙ্গে কথা হয়। সাক্ষাৎকারে রাজনীতিতে আসা নিয়ে কথা বলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট বিনোদন পাতায় ছাপা হওয়া ইলিয়াস কাঞ্চনের সাক্ষাৎকারটি আবার প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুম অপু

সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীকে হারিয়ে নেমেছিলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ থেকে শুরু করে বহু সাড়াজাগানো ছবির অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন সেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো। এভাবে কেটে গেছে ২৫ বছর। তাঁর সংগঠনের নাম এখন জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। গতকাল (২০১৮ সালের ৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় কাকরাইলের নিসচা কার্যালয়ে কথা হলো চিত্রতারকা ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে।

প্রথম আলো :

‘নিরাপদ সড়ক চাই’—একটা স্লোগান, একটা আন্দোলন নিয়ে ২৫ বছর কাটিয়ে দিলেন। ওই সময়টাতে আপনার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার তুঙ্গে। এর মধ্যে অন্য রকম একটা আন্দোলন শুরু করলেন। আজ শুরুর দিকের কথা জানতে চাই।

ইলিয়াস কাঞ্চন: জাহানারার মৃত্যুতে আমি মারাত্মক ভেঙে পড়েছিলাম। এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে ঠিকই করে ফেলেছিলাম, আর কোনো ছবিতে অভিনয় করব না। সেই সময়ে পাশে এসে দাঁড়ান একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি আমাকে বোঝালেন। মনে আছে তাঁর কথাগুলো, তিনি বলেছিলেন, ‘দেখো কাঞ্চন, স্ত্রীকে বাঁচাতে না পারায় তুমি খুবই ভেঙে পড়েছ। তাই হয়তো তুমি এমন চিন্তা করছ, চলচ্চিত্র ছেড়ে দেবে। কিন্তু এটি তো কোনো সমাধান হতে পারে না। হাজার হাজার ভক্ত তোমাকে ভালোবাসে। এবং তাদের মধ্যে অনেকেও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। যদি পারো তো তাদের জন্য কিছু করো।’
ওই সাংবাদিক ভাইয়ের কথাগুলো মনে ধরেছিল। তখন মনে হলো, ছেলেমানুষি করে নিজের জীবিকার উৎস যে অভিনয়, সেটি থেকে সরে দাঁড়ানো মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাতে কেবল নিজেকেই কষ্ট দেওয়া হবে। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীর যে নির্মম পরিণতি হয়েছে, সে রকম পরিণতি বরণ করে নিতে হতে পারে অনেক ভক্তকেও। এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে গিয়ে প্রথম ১৫ দিন সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো কথা বলিনি। নিজে নিজে ভেবেছি। আসলে কী করতে যাচ্ছি আমি, কী করা উচিত। একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম সড়ক দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার।

প্রথম আলো :

প্রথম দিনের কর্মসূচির কথা মনে আছে?

ইলিয়াস কাঞ্চন: অবশ্যই। সেদিন আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় একটি দিন। আসলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যত সহজ ছিল, তার বাস্তবায়ন ছিল ততটাই দুঃসাধ্য একটি কাজ। চলচ্চিত্রের ব্যস্ততার পাশাপাশি সদ্য মা-হারা ছেলেমেয়েদের দেখভালের দায়িত্ব। আমার ছেলেমেয়ে দুটো তখন একেবারেই ছোট। তখন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীই আমাকে বলেছিলেন, কী দরকার এসব করার! যেভাবে সবকিছু চলছে, সেভাবেই চলুক না! কাঞ্চনকেই কেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে হবে! কিন্তু এসব কথায় কান দিইনি। আলিঙ্গন করে নিয়েছি চ্যালেঞ্জকে। মনে জেদ চেপে গেল।
মনে আছে, প্রথম কর্মসূচির জন্য ডিসেম্বর মাসকে বেছে নিয়েছিলাম। ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর এফডিসি থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা বের করি। সেই পদযাত্রায় প্রচুর জনসমাগম হয়েছিল। তবে অধিকাংশ মানুষই যতটা না এসেছিলেন নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে, তার চেয়েও বেশি আমাকে ভালোবেসে। এর পর থেকে যখনই কোনো কর্মসূচির আয়োজন করেছি, সাধারণ মানুষের অফুরান ভালোবাসা পেয়েছি।

১৯৭৭ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘বসুন্ধরা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন ইলিয়াস কাঞ্চন

প্রথম আলো :

সরকারের কোনো আর্থিক তহবিল পেয়েছিলেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: না। ২০১২ সালে বাজেটে অর্থমন্ত্রী ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ ঘোষণা করেছিলেন ইনস্টিটিউট করে তা পরিচালনার জন্য। বিশ্বাস করুন, আজ পর্যন্ত সেই তহবিলের সিকিটিও পাইনি। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি, কাজও হয়নি।

প্রথম আলো :

মনে পড়ছে, মিশুক মুনির ও তারেক মাসুদের মৃত্যুর পর আপনার আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে পরিবহনশ্রমিকেরা খেপেছিলেন। প্রকাশ্যে অনেক খারাপ মন্তব্য করেছিলেন। নিশ্চয়ই এমন পরিস্থিতি আরও হয়েছে?

ইলিয়াস কাঞ্চন: তা হয়েছে, কিন্তু কাজটাকে আমি ভালোবেসেই করতে চেয়েছি। তাই বিষয়কে অন্যভাবে আমলে নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিই। আসলে এ ক্ষেত্রে নিজের ব্যবহার, আচরণ বড় একটা বিষয়। আমি নিজেও যাত্রীদের বিষয়টি বুঝিয়েছি। বাসে উঠে একজন শ্রমিক বা চালকের সঙ্গে ভালো আচরণ করলে, তাঁকে বয়সানুযায়ী ‘ভাই’, ‘চাচা’ কিংবা এ ধরনের কোনো সম্বোধনে ডাকলে দেখবেন ঠিকই তিনি আপনার কথা শুনবেন। তাঁরা ভালো আচরণ করবেন। আমি এ জায়গায় সফল। একসময় পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা আমাকে দেখতে পারতেন না। তাঁরা মনে করতেন, আমি ভুল করছি। তাঁদের ধারণা ছিল, দুর্ঘটনা কপালের লেখা। এখন এ ধারণা থেকে তাঁরা বেরিয়ে এসেছেন। আমার ওপর ধারণা বদলে গেছে। মনে পড়ছে, কয়েক বছর আগে এক অনুষ্ঠানে খুলনায় একজন ড্রাইভার আমাকে ধরে কেঁদেই ফেলেন। বললেন, ‘আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম। কারণ, আপনার সম্পর্কে এত খারাপ শুনেছি যে মনে হতো রাস্তায় পেলে আপনার ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেব। এখন মনে হচ্ছে, আপনাকে মহব্বত করা উচিত।’ তাঁর কথা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, চোখ ভিজে যায়।

প্রথম আলো :

শুধুই চালক আর শ্রমিকদের নিয়েই কাজ করেছেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: পথচারীদের নিয়েও কাজ করেছি। তাঁদেরও সচেতন হওয়া জরুরি। তরুণ পথচারীদের উদ্দেশে বিভিন্ন সময়ে আমি বলেছি, শুধু চালকদের দোষ, গাড়ির দোষ, রাস্তার দোষ খুঁজে বেড়াবেন? তাহলে আপনাদের কোনো দায়িত্ব নেই? আপনার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য পথচারী হিসেবে আপনার দায়িত্ব নেই? পথচারী হিসেবে নিজে যে ভুলগুলো করেন, তা কখনো দেখতে চান না। শুধু অন্যের দোষ দেখেন।

প্রথম আলো :

২৫ বছরে কী পেলেন, কী হারালেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: আমি তখন চলচ্চিত্রে সুপারস্টার ছিলাম। এ কাজে এসে আমার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে। আমি অবশ্য ওই সময় ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবিনি। এই আন্দোলন যখন শুরু করলাম, প্রথম দিকে কোনো সাফল্য পাইনি, বরং অনেকে আমাদের গালাগালি করতেন। কেউ বলতেন, ‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে’, ‘আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে কাজ করছি, আল্লাহর মাল আল্লাহ নেয়’—এমনই নানা কথা। এখন কিন্তু মানুষ এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন সবাই বোঝে, দুর্ঘটনা কারও না কারও গাফিলতির জন্য, অনিয়মের জন্য ঘটছে। এটা শুধু নিয়তির বিষয় না। আমরা এই সচেতনতাকে আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সফলতা মনে করি। দেখেন, এত বছর পর এই নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমি একাত্মতা প্রকাশ করেছি। এই সময়ে আমার সন্তানসম্ভবা মেয়ে ইমাকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল লন্ডনে। এ সময় মেয়ের পাশে বাবা হিসেবে আমার থাকাটা ভীষণ জরুরি, কিন্তু এরপরও যাইনি শুধু একটি কারণে। লন্ডনে আমার একটা মেয়ে, আর এই দেশে বর্তমানে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে রাস্তায় আন্দোলনে হাজার হাজার সন্তান। এই কোমলমতি সন্তানদের রাস্তায় রেখে আমি কী করে মেয়ের কাছে যাই?

‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত তথা বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবি

প্রথম আলো :

আপনি নিজেও ড্রাইভ করেন। কিংবা নিজের গাড়িতে চালকের পাশে বসেন। গাড়িতে বসলে একজন চালকের কোন বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত?

ইলিয়াস কাঞ্চন: প্রথমত, চালকদের দক্ষতার কথা আসে, ন্যূনতম শিক্ষিত হতেই হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জানতে হবে। তৃতীয়ত, সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর এ কাজ আমি কর্মশালার মাধ্যমে সারা দেশে চালকদের জানিয়ে আসছি এবং তাঁদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে দক্ষ করে গড়ে তুলছি।

প্রথম আলো :

শেষ কবে এফডিসিতে গিয়েছিলেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: এই তো গত শনিবার একটি টেলিভিশন নাটকের শুটিংয়ের কাজে গিয়েছিলাম এফডিসি। আসলে এফডিসি গেলে এখন খুব নস্টালজিয়ায় ভুগি। ৪০ বছর এখানে কাটিয়েছি। এর প্রতিটি ইট, বালুতে আমার স্মৃতি। একসময় এই এফডিসির প্রতিটি ফ্লোরে, প্রতিটি মোড়ে মোড়ে আমার অবাধ বিচরণ ছিল।

প্রথম আলো :

অনেকবার হয়তো বলেছেন। এখন আবার শুনতে চাই আপনার চলচ্চিত্রে আসার গল্পটা।


ইলিয়াস কাঞ্চন: বিষয়টা হুট করে হয়ে গেছে। কোনো পরিকল্পনা ছিল না চলচ্চিত্রজগতে আসার। আমি তখন পুরান ঢাকায় থাকি। ১৯৭৬ সালের শেষের দিকে একটা মঞ্চনাটক করি, সেই নাটকটার প্রধান অতিথি হিসেবে সুভাস দত্ত আসেন। তিনি আমার কাছাকাছি এলাকায় থাকতেন, ওয়ারী। মনে আছে, ওয়াপদা মিলনায়তনে নাটকটি দেখে আমাকে সুভাস তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলেন। পরের দিন সকালে ওয়ারীতে দেখা করার পর তিনি সুসংবাদটা দিলেন, যদি পরিবারের কোনো আপত্তি না থাকে, আমাকে নিয়ে তিনি ছবিতে কাজ করতে চান। ১৯৭৭ সালে ওটাই আমার প্রথম কাজ। আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটির নাম ছিল ‘বসুন্ধরা’।

‘রাধাকৃষ্ণ’ চলচ্চিত্রে কৃষ্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো :

পরিচালনায়ও এসেছিলেন। সেখানেও থেমে গেলেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: হুম, দুটি ছবি বানিয়েছি। ‘বাবা আমার বাবা’ ও ‘মায়ের স্বপ্ন’। এখন আর সাহস পাই না। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প নিয়ে সব সময় একটা ষড়যন্ত্র হয়েছে। প্রথম আঘাত এনেছিল পাইরেসি। এরপর অশ্লীলতা। এভাবে খুব সূক্ষ্মভাবে ষড়যন্ত্র করে ছোট হয়ে যায় আমাদের চলচ্চিত্রের বাজার। কমে গেছে সিনেমা হল। এখন তো সিনেমা হল নাই। যা আছে, তার দেড় শ হল কন্ট্রোল করে একটি প্রতিষ্ঠান! (আজিজ সাহেবরা, মানে জাজ মাল্টিমিডিয়া।) এখন ছবি বানালে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে (আজিজ সাহেবদের) অনুরোধ করে রিলিজ দিতে হবে, সেটি আমি পারব না।

প্রথম আলো :

চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন, মন খারাপ হয়?

ইলিয়াস কাঞ্চন: মাঝেমধ্যে রীতিমতো কান্না পায়। আসলে আমি চলচ্চিত্র ছাড়া থাকতে পারি না। ৪০ বছর কম নয়। এতগুলো দিন যেখানে, যাদের সঙ্গে কেটেছে, তাদের ছাড়া থাকা যায়! আমার প্রযোজকেরা, নির্মাতারা, আমার প্রিয় চমৎকার সব নায়িকা, সহশিল্পীরা, প্রতিটি ছবির টিম সদস্যরা আমার কাছে অনেক ভালোবাসার। অনেকের সঙ্গে আজকাল যোগাযোগ নেই। কারও কারও কথা হঠাৎ মনে পড়ে। অনেকে চলে যাচ্ছেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে, কষ্ট পেয়ে নীরবে কাঁদি। রাজ্জাক ভাই, মিজু ভাই চলে গেলেন। চলচ্চিত্রের মানুষদের কথা খুব মনে পড়ে।

প্রথম আলো :

সুপারস্টার কাঞ্চন, এখন কি মনে পড়ে, কোন ছবিগুলো আপনাকে এই খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল?

ইলিয়াস কাঞ্চন: সৃষ্টিকর্তা আমাকে সব সময় সাহায্য করেছেন। বারবার সুযোগ দিয়েছেন। ভাগ্য আমার সহায় ছিল। ‘বসুন্ধরা’ প্রথম ও সাহিত্যনির্ভর ছবি। পরিচিতি আনার ক্ষেত্রে এই প্রথম ছবিটির অবদান অনেক। এরপর সুপার-ডুপার ছিল ‘আঁখি মিলন’, ছবির ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গানটি এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। এরপর ‘ভেজা চোখ’ ছবির ‘জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প’ গানটিও আমাকে দর্শকের মনে অন্যভাবে ঠাঁই করে দিয়েছিল। এরপর ‘মাটির কসম’, ‘নীতিবান’, ‘সহযাত্রী’, ‘প্রেমপ্রতিজ্ঞা’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘গাড়িয়াল ভাই’, ‘বাঁচার লড়াই’, ‘খুনি আসামি’—এমন অসংখ্য ছবি করেছি।

প্রথম আলো :

গত বছর সমাজসেবায় একুশে পদক পেয়েছেন। আপনাকে ঘিরে রাজনীতির গুঞ্জনও ছড়িয়েছে। নির্বাচন করবেন, এমন কথাও শোনা যায়?

ইলিয়াস কাঞ্চন: না না, এসব সত্য নয়। আমার কাছে মানুষের যেমন প্রত্যাশা, তেমনি আমিও মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার মতো যদি পরিস্থিতি কখনো পাই, তখন ভেবে দেখব। আমার নিজের জন্য কিছু করার দরকার নেই, আমার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া নেই। আমি বেঁচে থাকার জন্য দুটো খেতে পারলেই হলো।

প্রথম আলো :

বর্ণাঢ্যময় অভিনয়জীবনে কোনো অতৃপ্তি মনে পড়ে?

ইলিয়াস কাঞ্চন: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখন যেখানে অবস্থান করছে, এমন সময়ে অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমি যখন পরিপূর্ণতা অর্জন করেছি, ঠিক সে সময়ে অভিনয় থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে, এটাকেই আমার অতৃপ্তি মনে হয়। এর বাইরে আমার আর অন্য কোনো চাওয়া-পাওয়া বলে কিছু নেই। ছেলে–মেয়েরা বড় হয়েছে। কিছুদিন আগে দাদাও হয়েছি। নানা হওয়ার অপেক্ষায়।

ইলিয়াস কাঞ্চন ও শওকত মাহমুদ
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

প্রথম আলো :

(কথা বলতে বলতে সন্ধ্যার নাশতা এল। বাদাম, পেয়ারা, লটকন, রং চা। বাসা থেকে পিঠাও এসেছে। আয়োজন দেখে প্রশ্ন করলাম) আপনি দেখছি খুব স্বাস্থ্যসচেতন?

ইলিয়াস কাঞ্চন: ‘তা ঠিক। তবে আমি ভীষণ ভোজনরসিক ছিলাম। কিন্তু নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেই এখন খাওয়াদাওয়া একদম কম করি। রাতে একটা রুটি আর সবজি হলেই চলে। বাজে কোনো অভ্যাস নেই। ধূমপান করি না,’ বললেন ১৯৫৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া বাংলা চলচ্চিত্রের সফল চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

প্রথম আলো :

(চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে আবার প্রশ্ন করি) বাংলা ছবির সবচেয়ে বড় ব্যবসাসফল নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার প্রত্যাশা জানতে চাই।


ইলিয়াস কাঞ্চন: চলচ্চিত্র ছেড়ে যেতে আমার ইচ্ছা করে না। আমার বিশ্বাস এবং মনে-প্রাণে প্রত্যাশা করি, চলচ্চিত্রের সংকট কেটে যাবে। আবারও সুদিন আসবে। আমরা যারা পুরোনো হয়ে গেছি, নতুন প্রজন্মের কাছে আবারও সবাই অভিনয়ে ফিরব। অভিনয় করতে করতেই চলে যেতে চাই। এই দেশের চলচ্চিত্রে অনেক গুণী মানুষ রয়েছেন। তাঁদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পেলে আমাদের একটা মজবুত প্রজন্ম গড়ে উঠবে বলে বিশ্বাস আমার।