আখতারুজ্জামান ও অলি আহমদকে ‘ধিক’ সোহেল রানার, জানালেন কারণ

মাসুদ পারভেজ সোহেল রানাছবি: প্রথম আলো

বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান ও অলি আহমদকে ‘ধিক’ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ও রাজনীতিবিদ মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। আজ সোমবার ফেসবুক পোস্টে তিনি তাঁদের নিয়ে এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে এই অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। জানতে চাইলে ক্ষোভের কারণ প্রসঙ্গে জানালেন, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে দীর্ঘদিন জামায়াতকে রাজাকার বলে স্লোগান দিয়ে আজ তারাই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছেন! এতে ধিক জানানো ছাড়া আর কীই–বা করতে পারি।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে যোগ দিয়েছেন আখতারুজ্জামান
ছবি: জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুক পেজ থেকে

বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামানের বাড়ি জেলার কটিয়াদীতে। কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে টানা দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর জামায়াতে যোগদানের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফুল হাতে জামায়াতের আমিরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতরুজ্জামান বিএনপি থেকে সর্বশেষ বহিষ্কার হন ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। দলে না থাকলেও রাজনীতি থেকে সরে যাননি। বিশেষ করে নানা ইস্যুতে টক শো বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলে আলোচনায় ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের পাশে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। গতকাল রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে এলডিপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ একজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ‘বীর বিক্রম’ খেতাব পান তিনি। মুক্তিযুদ্ধে সাবসেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসা অলি আহমদ ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। বিএনপির ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের সরকারে যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন তিনি। বিএনপি ছেড়ে ২০০৬ সালে এলডিপি প্রতিষ্ঠা করেন অলি আহমদ।

মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা
ছবি : প্রথম আলো

প্রথম আলোকে সোহেল রানা বললেন, ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ তো একাত্তর সালের কর্মকাণ্ডের জন্য এখনো ক্ষমা চায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি। যতক্ষণ তারা ক্ষমা চাইবে না ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে মনে করতে হবে, ৩০ লাখ শহীদের, ২ লাখ মা–বোনের ইজ্জত যারা নিয়েছে—তারা তাদেরই উত্তরসূরি। এখনকার জামায়াত এই দোষ না করলেও তো ওদের মধ্যে সেই গন্ধ আছে। আমার কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হতে পারে, কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে। একজন ক্ষমা চাইল, দুজন ক্ষমা চাইল, তিনজন চাইল তাতে তো হবে না। এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। রাষ্ট্রের ক্ষমা চাওয়ার একটা প্রক্রিয়া আছে। দেশের স্বার্থের জন্য কেউ আমার ভাই কেন আরও অনেক কিছুই হতে পারে। বাংলাদেশের স্বার্থটা যে জায়গা আছে, সেখানে আমার বন্ধু হবে। এখন আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যাদের ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ‘রাজাকার’ ‘রাজাকার’ বলা হচ্ছে, সেই রাজাকার ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে একজন মুক্তিযোদ্ধার দল গিয়ে জোট বেঁধেছে! এ কারণে আমি আখতারুজ্জামান ও অলি আহমদকে ধিক জানিয়েছি। আজ জামায়াত যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়, তাহলে তাদের যারাই জোটবদ্ধ হোক কিংবা দলে যোগ দিক আমি কিছুই বলব না।’