‘“সাবা” অস্কারে গেলে ভালো লাগত’

চাকরির সুবাদে বেশির ভাগ সময়ই অফিস থেকে কথা বলেন অভিনেতা মোস্তফা মন্ওয়ার। তবে এই প্রথম তাঁকে শুটিংয়ে ব্যস্ত পাওয়া গেল। সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘সাবা’ ও বুসানে প্রিমিয়ার হওয়া ‘বালুর নগরী’তে সিনেমাসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মনজুরুল আলম

মোস্তফা মন্‌ওয়ার। ছবি: অভিনেতার সৌজন্যে

‘ভাই, আমি তো শুটিংয়ে। টানা শুটিং চলছে। যে কারণে আগে ফোন ধরতে পারিনি। এখনই কিন্তু আবার ডাক পড়বে,’ অনেকটাই ফিসফিস করে কথাগুলো বললেন মোস্তফা মন্ওয়ার। বোঝা গেল তিনি ব্যস্ত। বললাম, ‘তবে শুটিংয়ে ডাক পড়ার আগপর্যন্ত কথা বলি।’ দ্রুত কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে বললেন, ‘তাহলে লাইনটা ধরেন। আমি সেট থেকে একটু দূরে গিয়ে কথা বলি।’ কিছু সময় পর মন্ওয়ার স্বাভাবিক স্বরে বললেন, ‘এখন বলেন। সিয়াম, চঞ্চল ভাইসহ অনেকেই একসঙ্গে কাজ করছি। শুটিংয়ে বাড়তি সময় বের করা কঠিন।’ তবে কোন সিনেমা, সেটা নিয়ে কোনো কথাই বলতে চান না। এটাও জানালেন, যা বলেছেন, সেটাও বলা ঠিক হয়নি!

এ বছর একটি সিনেমা
মোস্তফা মন্ওয়ার ছুটি জমিয়ে বছরে ২৫–৩০ দিন শুটিংয়ের সময় পান। এই সময়ে বড়জোর দুটি সিনেমার শুটিং করেন। তবে এবার আর দুটি সিনেমার শুটিং করার সুযোগ নেই। এ বছর একটিমাত্র সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। সিনেমাটির শুটিং চলছে। এই অভিনেতা বলেন, ‘অফিস থেকে যে ছুটি পাই, সেটার কিছু অংশ এ বছর কার্লোভি ভেরি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে কাটিয়েছি। বালুর নগরীতে সেখানে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় ও পুরস্কার পায়। সেই সময়ে ইউরোপেও ঘুরেছি। এদিকে নতুন এ সিনেমাতে দীর্ঘ সময় দিতে হচ্ছে। আগামী মাসেও ব্যস্ত থাকব। যে কারণে আর কোনো সিনেমায় শুটিং করার সুযোগ হচ্ছে না।’

প্রশংসার পর প্রশংসা
সম্প্রতি শেষ হওয়া ৩০তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে আ উইন্ডো অব এশিয়ান শাখায় বালুর নগরীতের এশিয়ান প্রিমিয়ার হয়েছে। আয়োজনে অংশ নিতে না পারলেও তিনটি শোর পরই দর্শকদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার কথা শুনেছেন। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মেহেদী হাসান। এদিকে গত শুক্রবার দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘সাবা’। সিনেমাটি নিয়েও প্রশংসিত হচ্ছেন। এই অভিনেতা বলেন, ‘দর্শক সিনেমাটি গ্রহণ করলেই খুশি। মাত্র মুক্তি পেল। সময়ের সঙ্গে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেটা দেখার অপেক্ষায়। দর্শক সিনেমাটি গ্রহণ করার অর্থই সত্যিকারের ভালোবাসা। সেই অপেক্ষায় রয়েছি।’

চরিত্র থেকে চরিত্রে
‘সাবা ও ‘বালুর নগরীতে’—দুটি সিনেমার শুটিং পাশাপাশি সময়ে হয়েছে। তবে জানিয়ে রাখলেন, দুটি সিনেমার চরিত্র ও উপস্থাপনা একদমই আলাদা। তিনি জানান, তাঁর হাতে সময় কম। যে কারণে একাধিক চিত্রনাট্য থেকে সব সময়ই বৈচিত্র্য রয়েছে—এমন চরিত্রগুলো বেছে নেন। যার বেশির ভাগই থাকে এক্সপেরিমেন্টাল। ‘অনেকেই আমাকে বলেন, আমার সব সিনেমা উৎসবকেন্দ্রিক। আমার ভালো সময় যাচ্ছে। এমনটা আমি কখনোই মনে করি না। আমি শুধু একটা কাজ করি। চাকরি হয়তো আমাকে এই সুযোগটা করে দেয়। কারণ, অনেক চিত্রনাট্য থেকে আমি বাছবিচার করে সেরা সিদ্ধান্ত নিই। যে কারণে প্রতিটি মনের মতো চরিত্রের পেছনে আমাকে বহু সময় দিতে হয়।’

মোস্তফা মন্‌ওয়ার। ছবি: অভিনেতার সৌজন্যে

বাংলাদেশ অস্কার কমিটিকে না
এ বছর আন্তর্জাতিক ভাষার সিনেমা বিভাগ থেকে অস্কারে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়, সেটার সদস্য হতে মোস্তফা মন্ওয়ারকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। শুরুতে মতও দেন মন্ওয়ার। পরে একসময় জানতে পারেন, তাঁর সিনেমা সাবা অস্কারে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য জমা পড়বে। তখন তিনি নিয়ম মেনে বাংলাদেশ অস্কার কমিটিকে না করে দেন। মন্ওয়ার বলেন, ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট থাকবে, এ কারণে অস্কার কমিটি থেকে সরে দাঁড়াই। পরে জানতে পারলাম, আমাদের সিনেমাটি মনোনীত হয়নি। “সাবা” অস্কারে গেলে ভালো লাগত। কিন্তু “বাড়ির নাম শাহানা” আমি দেখিনি। যে কারণে এখন কিছু বলতে পারছি না।’

আরও পড়ুন

অপেক্ষায়...
মন্ওয়ারের অভিনীত পছন্দের একটি চরিত্র ‘শহীদুল্লা কায়সার’। ‘দিগন্তে ফুলের আগুন ’সিনেমায় চরিত্রটি করছেন তিনি। ছবিটির শুটিং শেষ। ডাবিংও শেষ। অনুদানের এই সিনেমায় তাঁর সহশিল্পী বিদ্যা সিনহা মিম। এটি পরিচালনা করেছেন ওয়াহিদ তারেক। মন্ওয়ার বলেন, ‘এখন “বালুর নগরীতে” ও “দিগন্তে ফুলের আগুন” মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। চিন্তা হচ্ছে পরের সিনেমাটি নিয়ে। দেশের এমন অবস্থায় সিনেমাটি মুক্তি পাবে কি না, জানি না। শিল্পী হিসেবে সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে ভালো লাগবে।’