শিল্পী সমিতির নির্বাচন প্রসঙ্গে বিব্রত আহমেদ শরীফ, বললেন আরও অনেক কথা

আহমেদ শরীফসংগৃহীত

এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নিয়ে সরব হয়েছেন ঢাকাই সিনেমার একসময়ের আলোচিত খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই জ্যেষ্ঠ শিল্পী গত বুধবার রাতে এসেছিলেন সমিতির অফিসে। সেখানে তিনি আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। সমিতি ঘিরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দেন। আহমেদ শরীফ মনে করেন, ‘সিনেমা নিয়ে সবার আগে আলোচনা হওয়া দরকার। কেন আমরা বিশ্বমানের বেশি বেশি সিনেমা তৈরি করতেন পারছি না, এ কথা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।’ নির্বাচন ঘিরে যা হচ্ছে, এতে সাধারণ মানুষের মনে সিনেমা ও শিল্পীর ওপর সাধারণ মানুষের নেগেটিভ ধারণার জন্ম হচ্ছে। সূত্র চ্যানেল আই।
বুধবার রাতে শিল্পী সমিতির অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আহমেদ শরীফ বলেন, আগে এত সংগঠন ছিল না। শিল্পীকে কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতে হতো। যখন নির্বাচন হতো, এফডিসিতে শিল্পীদের সমাগমে ঈদের আমেজ বিরাজ করত। উৎসবের আমেজে তারকা শিল্পীরা ভোট দিতে আসতেন।
প্রসঙ্গত, চলচ্চিত্রশিল্পীদের স্বার্থ রক্ষা ও সবাইকে এক সুতায় গাঁথতে প্রয়াত সুপারস্টার নায়করাজ রাজ্জাকের হাত ধরে ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। আনুষ্ঠানিক কমিটি গঠিত নির্বাচিত হওয়ার আগে আহ্বায়ক ছিলেন খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ। পরে শিল্পীদের ভোটে নায়করাজ রাজ্জাক সভাপতি হয়েছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদক হন আহমেদ শরীফ। ওই কমিটিতে আরও ছিলেন প্রয়াত অভিনেতা খলিল, শওকত আকবর, এ টি এম শামসুজ্জামানসহ অনেকে।

স্মৃতিচারণা করে আহমেদ শরীফ জানান, তখনকার নির্বাচনগুলোতে ছিল না কোনো পক্ষ-বিপক্ষ, প্যানেল কালচার এবং নির্বাচন ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনারও সুযোগ ছিল না। এমনকি শিল্পী নির্বাচনে পুলিশি পাহারা দেওয়া হতো না! ফলাফল যা–ই হতো, শিল্পীরা তা মেনে নিয়ে ভোটের পর আবার একসঙ্গে কাজে নেমে পড়তেন। এখনকার নির্বাচন ও পরবর্তী ঘটনাগুলো লজ্জাজনক, এমনটাই মন্তব্য করেছেন আহমেদ শরীফ। তাঁর ভাষ্য গত কয়েক বছরের শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে এফডিসিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি নির্বাচনী ফলাফলের ফয়সালা করতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হচ্ছে প্রার্থীদের। এটা সত্যিই দুঃখজনক এবং লজ্জার বিষয়।

এফডিসিতে আহমেদ শরীফ
চ্যানেল আইয়ের সৌজন্যে

আক্ষেপ প্রকাশ করে আহমেদ শরীফ বলেন, শিল্পীরা যদি একটি পরিবার হয়, সেই পরিবারে ঝামেলা সৃষ্টি হলে নিজেদের মীমাংসায় ঠিকঠাক করে নেওয়া উচিত। তাই বলে আদালতে যেতে হবে কেন? এই নির্বাচন তো এত বড় কোনো সিরিয়াস ইস্যু নয়। বরং এতে প্রকৃত শিল্পীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষেরা মনে করছেন, সিনেমা নয়, শিল্পীদের কাজই মনে হয় এখন নির্বাচন করা।

আহমেদ শরীফ বলেন, ‘আমি আমেরিকায় থাকি। সেখানকার মানুষের সাথে দেখা হলে আগে তারা সিনেমার খবর নিত। বলত, আপনার অমুক সিনেমা অনেকবার দেখেছি। এখন সিনেমার কথা না জিজ্ঞেস করে এফডিসির নির্বাচন ও গন্ডগোল নিয়ে জিজ্ঞাসা করে। এতে আমি বিব্রত হই। তাদের বলি, আমি তো এই সংগঠনের নির্বাচন করি না। আবার আমেরিকাপ্রবাসীরা আমাকে বলে, “আপনাদের সময় তো এমন হতো না। এখন কেন হচ্ছে এমন বিশৃঙ্খলা?” এসব জানতে চাইলে বিব্রত হই। লজ্জায় সঠিক উত্তর দিতে পারি না।’
আগামী এপ্রিলের শেষে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচন। শিল্পী সমিতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘আমাদের সময় শিল্পী সমিতির নির্বাচন ছিল ঈদের মতো। ঈদের আনন্দের মতো সবাই এখানে ভোটে পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থন দিতে আসতেন। কিন্তু এখন যা দেখছি, এতে আমার নিজের অনেক কষ্ট লাগে।’
আহমেদ শরীফের কথা, শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এত কাদা–ছোড়াছুড়ি যে পরিচিতদের মুখ থেকে নানা ধরনের কটু কথা শুনতে হয়। নির্বাচনে হার–জিত থাকবেই, সেটা খুব সুন্দরভাবে মেনে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করা উচিত। এটা তো শিল্পীদের সংগঠন। কোনো রাজনৈতিক বা পেশিশক্তি প্রদর্শন এই নির্বাচনে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আহমেদ শরীফ
সংগৃহীত

বিস্মিত হয়ে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘শুনেছি, নির্বাচনের দিন পুলিশি পাহারা দেওয়া হয়। প্রকৃত শিল্পীরাই নির্বাচনে ঢুকতে এফডিসির গেটে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ ফেস করে। কেন এটা হবে?’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণের প্যানেল থেকে প্রার্থী হতে পারেন আহমেদ শরীফ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে। তিনি পরিষ্কারভাবে কিছু বললেন না। এ জন্য কিছুদিন সময় চাইলেন।
আহমেদ শরীফ বলেন, ‘আমেরিকা থেকে আমি কিছু কাজে দেশে এসেছি। কিছুদিন থেকে চলে যাব। তবে নির্বাচনের আগে অবশ্যই আমি আসব। শিল্পী সমিতির জন্য যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের পক্ষেও কাজ করব। দেখেশুনে আমার ভোট আমি দেব। কোনো প্যানেল থেকে নির্বাচনের অংশ নেব কি না, এর জন্য সিদ্ধান্ত নিতে আমার আরও সময় প্রয়োজন।’