চলচ্চিত্র শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে সরকার: নাহিদ ইসলাম
পর্দা উঠল ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২৩তম আসরের। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। উদ্বোধনী আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন আমন্ত্রিত দেশ–বিদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। ৭৫টি দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র নিয়ে শনিবার শুরু হয়েছে এ উৎসব।
উদ্বোধন ঘোষণার আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘চলচ্চিত্র নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক মানের একটি অনুষ্ঠান করতে পারছি, এটা আমাদের জন্য গৌরবের। আয়োজকদের আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের সিনেমাকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পারছি। গ্লোবাল প্ল্যাটফর্মগুলোয় আমরা আরও কীভাবে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করতে পারি, সরকারের জায়গা থেকে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।’
নাহিদ ইসলাম তাঁর বক্তব্যে সিনেমায় দেশের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরার কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের শিল্প–সাংস্কৃতিক বিকাশের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিক বিকাশে সিনেমা বড় একটি ভূমিকা পালন করবে। আমরা প্রত্যাশা করি, আকাঙ্ক্ষা করি, ঢাকাকে একটি বহু সংস্কৃতির এবং বহু ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত করতে পারব। আগামী দিনের প্রত্যাশা, সাংস্কৃতিক চর্চার লীলাক্ষেত্র হবে ঢাকা।’
২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনীতে শুরুতেই লোকসংগীত পরিবেশন করে ‘জলের গান’। পরে মঞ্চে ওঠেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। শুরুতেই বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। কথার শুরুতেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তিনি তাঁর বক্তব্যে উৎসব আয়োজনের পেছনে অর্থায়ন, নির্দিষ্ট জায়গাসহ নানা সংকটের কথা তুলে ধরেন।
মুজতবা জামাল বলেন, ‘আমরা উৎসব নিয়ে এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছি। স্পনসর সহায়তা ছাড়া আমাদের আয়োজন করা কঠিন। এ বছরও আমরা প্রয়োজনীয় স্পনসর পাইনি। আশা করছি, পরে এটা আরও ভালো হবে। ৩৩ বছর ধরে এ উৎসবের সঙ্গে আমাদের যাত্রা শুরু। আসলে এ আয়োজনের জন্য আমাদের স্থায়ী একটা জায়গা খুবই দরকার। যেখানে আমরা উৎসবটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতে পারব।’
চীনা চলচ্চিত্র প্রশাসনের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক শু ইয়াং দুই দেশের সিনেমার আদান–প্রদান নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের সিনেমাকে তুলে ধরতে সহায়তার কথা বলেন।
উৎসবে উপস্থিত ছিলেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। চীনের সিনেমার বাজার ও গত বছরের আয়ের তথ্য তুলে ধরেন তিনি। চীনের এই বড় বাজারে একসঙ্গে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে পারস্পরিকভাবে কাজ করতে আগ্রহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের ভিন্ন সংস্কৃতি, এর সঙ্গে মিলে আমরা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে সিনেমাকে এগিয়ে নিতে পারি। দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিয়ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’ এ সময় তিনি উৎসবে, চীনা ফিল্ম উইকে আয়োজিত ১৫ সিনেমা দেখার আহ্বান জানান।
উৎসবে অংশগ্রহণ করা সিনেমাগুলোর সেন্সর সার্টিফিকেশন নিয়ে প্রতিবছর বিপাকে পড়তে হয় বলে জানান উৎসবের নির্বাহী সদস্য জালাল আহমেদ। তিনি তথ্য উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সাহায্য মঞ্জুরি খাতের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করলে প্রতিবছর নির্দিষ্ট কিছু বরাদ্দ পাওয়া যাবে। এতে উৎসবটি কিছুটা হলেও স্পনসর–সংকট কাটাতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থ বিভাগের কাছে আমাদের প্রতিবছর যেতে হয় শুধু সেন্সর ফি মওকুফের কারণে। তারা ফি মওকুফ করে দেয়। কিন্তু এটাকে নিয়মে পরিণত করলেই হয়। কারণ, কাজটির পেছনে বড় একটা সময় আমাদের ব্যয় হয়। এ ছাড়া অর্থ বিভাগ প্রতিবছর কিছু আর্থিক সহায়তা করে থাকে। কখনো কম, কখনো বেশি। এর জন্য আমাদের অনেকবার যেতে হয় অর্থ বিভাগে। এখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাহায্য মঞ্জুরি খাতের তালিকায় উৎসবটি অন্তর্ভুক্ত হলে প্রতিবছর নিয়ম করে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। এমনটা করা গেলে উৎসবের জন্য বড় উপকার হয়।’
উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির চেয়ারপারসন কিশওয়ার কামাল, এশিয়ান কম্পিটিশন সেকশনের জুরিবোর্ডের সদস্য অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ। উদ্বোধন ঘোষণা শেষে প্রদর্শিত হয় চীনের সিনেমা ‘মুন ম্যান’। এটি পরিচালনা করেছেন চিউ ঝ্যাং।