‘কোটি টাকার কাবিন’ নায়ক শাকিব খানের পারিশ্রমিক আসলে কত

শাকিব খান। ছবি: কোলাজ

‘প্রিয়তমা’ সিনেমা দিয়ে বদলে যাওয়া এক নতুন শাকিব খানকে পেয়েছেন ভক্তরা। এই ‘নতুন’ শাকিব খানের সিনেমা প্রশংসা কুড়াচ্ছে, আয়ে রেকর্ড গড়ছে। সঙ্গে পারিশ্রমিকও বাড়িয়ে যাচ্ছেন শাকিব। শোনা যাচ্ছে, সর্বশেষ চুক্তিবদ্ধ হওয়া ‘প্রিন্স’ সিনেমার জন্য তিন কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন তিনি। যদিও অনুসন্ধানে এ তথ্যের সত্যতা মেলেনি। তবে শাকিব খান ধাপে ধাপে পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন।

করোনাপরবর্তী সময়ে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রি অনেকটাই থমকে যায়। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ‘বীর’, ‘নবাব এলএলবি’, ‘গলুই’, ‘বিদ্রোহী’ থেকে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’—শাকিব খানের সিনেমাগুলোও সেই অর্থে দর্শকদের টানতে পারেনি। শাকিব খান সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া–আসা করতেন। শুরুতে সিনেমা থেকেও বিরতি নেন।

২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ‘বীর’, ‘নবাব এলএলবি’, ‘গলুই’, ‘বিদ্রোহী’ থেকে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’—শাকিব খানের সিনেমাগুলোও সেই অর্থে দর্শকদের টানতে পারেনি। শাকিব খান সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া–আসা করতেন।
`প্রিয়তমা' সিনেমায় শাকিব খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

সে সময় শাকিবের ক্যারিয়ারও ছিল ভয়ংকর এক পরীক্ষার মতো অধ্যায়। এ নিয়ে শাকিবও পরবর্তীকালে বলেছেন, সময়টাতে যেন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। তাঁর কাছের মানুষেরাও বলছিলেন, শাকিবের দিন শেষ। সেই শাকিব সিনেমার থ্রিলারের মতো ঘুরে দাঁড়ান ‘প্রিয়তমা’ সিনেমা দিয়ে।

সিনেমাটির পরিচালনা করেন হিমেল আশরাফ। শাকিবের ক্যারিয়ারে এটাই ছিল তখন সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা। শোনা যায়, এই সিনেমার জন্য তিনি পারিশ্রমিক নেন ৩৫–৪৫ লাখ টাকার মতো। সিনেমাটি বক্স অফিসে সাফল্যের মুখ দেখলে শাকিব এবার একই পরিচালকের পরবর্তী সিনেমায় নাম লেখান।

শাকিব সিনেমার থ্রিলারের মতো ঘুরে দাঁড়ান ‘প্রিয়তমা’ সিনেমা দিয়ে। সে সময়ে শাকিবের ক্যারিয়ারে এটাই ছিল তখন সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমা। শোনা যায়, এই সিনেমার জন্য তিনি পারিশ্রমিক নেন ৩৫–৪৫ লাখ টাকার মতো। সিনেমাটি ফল্যের মুখ দেখলে শাকিব এবার একই পরিচালকের পরবর্তী সিনেমায় নাম লেখান।

‘রাজকুমার’ সিনেমার জন্য এবার আরেক ধাপ পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দেন শাকিব। একলাফে বাড়ে ২০ লাখ টাকা, যা ছিল তখনো ঢালিউডের জন্য আলোচিত ঘটনা। সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, শাকিব সিনেমার জন্য শুরুতে কোনো পারিশ্রমিক চাননি। শুধু হেসে বলেছিলেন, ‘সিনেমা ব্যবসা করছে। পারিশ্রমিক বাড়াও। লভ্যাংশ দাও।’ পরে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৬০ থেকে ৭০ লাখের মধ্যে পারিশ্রমিক ধার্য হয়। কেউ কেউ জানান, ৬৫ লাখ টাকার মতো পারিশ্রমিক নেন শাকিব খান।

‘রাজকুমার’ সিনেমার জন্য এবার আরেক ধাপ পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দেন শাকিব। একলাফে বাড়ে ২০ লাখ টাকা, যা ছিল তখনো ঢালিউডের জন্য আলোচিত ঘটনা। সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, শাকিব সিনেমার জন্য শুরুতে কোনো পারিশ্রমিক চাননি। শুধু হেসে বলেছিলেন, ‘সিনেমা ব্যবসা করছে। পারিশ্রমিক বাড়াও। লভ্যাংশ দাও।’
‘দরদ’ ছবির ফার্স্টলুকে এভাবেই আলোচিত হয়েছিলেন শাকিব খান। ছবি: ফেসবুক থেকে

এরপর শাকিব ‘দরদ’ সিনেমায় নাম লেখান। সিনেমাটি পরিচালনা করেন অনন্য মামুন। শুরুতে শোনা যাচ্ছিল, এই সিনেমায় কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন শাকিব খান। তিনি সিনেমার বাজেট কত ছিল ও শাকিব খানের পারিশ্রমিক নিয়ে কথা বলতে চান না। বললেন,‘এগুলো গোপনই থাকুক। পারিশ্রমিক আমরা বলতে চাই না।’

তবে সিনেমাটি প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৭০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন শাকিব খান। সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে সেই অর্থে সফলতা পায়নি। বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়েছে প্রযোজদের।

তত দিনে শাকিব খান নাম লিখিয়েছেন সে সময় ‘পরাণ’ দিয়ে আলোচনায় আসা নির্মাতা রায়হান রাফীর ‘তুফান’ সিনেমায়। সিনেমাটির পোস্টার, ট্রেলার, টিজার, ‘কিরে তুফান ভয় পাইছিস’–এর মতো অনেক সংলাপ ও ‘দুষ্টু কোকিল’ গান তুমুল আলোচনায় আসে। সিনেমাটি দিয়ে তুমুলভাবে আলোচিত হন ঢালিউডের এই নায়ক। দেশের সব শ্রেণির দর্শক সিনেমাটি দেখতে ভিড় করেন। আয়েও এটি রেকর্ড গড়ে।

এই সিনেমার জন্য শাকিব খান পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন ৮০–৯০ লাখ টাকা, যা আলোচনায় আসে। তখন কোটি টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া তালিকায় শাকিবের নাম কবে যুক্ত হবে, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। কেউ কেউ বলছিলেন, সিনেমাটির জন্য কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন শাকিব খান, তবে তথ্যটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

‘তাণ্ডব’–এ শাকিব খান। চরকির সৌজন্যে
ঢালিউডের একচ্ছত্র নায়ক শাকিব খান
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষ জনপ্রিয়তার আসনে রয়েছেন শাকিব খান। প্রকৃত নাম মাসুদ রানা। ১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই নায়কের শৈশব কেটেছে নারায়ণগঞ্জে। ১৯৯৯ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। একই বছর আফতাব খানের ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’ সিনেমায় প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। শুরুটা কঠিন হলেও আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ‘মাই নেম ইজ সুলতান’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সাহসী মানুষ চাই’, ‘জানের জান’, ‘সুভা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘১ টাকার বউ’, ‘কোটি টাকার কাবিন’, সহ অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করে তিনি হয়ে উঠেছেন ঢালিউডের একচ্ছত্র তারকা। করোনার পর ‘প্রিয়তমা’ সিনেমা দিয়ে তিনি ফের আলোচনায় আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তির অপেক্ষায় ‘রাজকুমার’, ‘তুফান’, ‘বরবাদ’, ‘তাণ্ডব’সহ একের পর এক বিগ বাজেট সিনেমা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন শাকিব খান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন।
আরও পড়ুন
‘তুফান’–এর পোস্টারে মিমি, শাকিব খান ও নাবিলা। প্রযোজনা সংস্থার সৌজন্যে
‘তুফান’ সিনেমাটি দিয়ে তুমুলভাবে আলোচিত হন ঢালিউডের এই নায়ক। দেশের সব শ্রেণির দর্শক সিনেমাটি দেখতে ভিড় করেন। আয়েও এটি রেকর্ড গড়ে। এই সিনেমার জন্য শাকিব খান পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন ৮০–৯০ লাখ টাকা, যা আলোচনায় আসে। কেউ কেউ বলছিলেন, সিনেমাটির জন্য কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন শাকিব খান, তবে তথ্যটির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

একসময় যে শাকিব খানের বছরে ১০ থেকে ১২টির বেশি সিনেমা মুক্তি পেত; সেখানে বদলে যাওয়া ‘নতুন’ শাকিব সিদ্ধান্ত নেন যে বছরে দুটি সিনেমায় অভিনয় করবেন। দুই ঈদে মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাগুলো। ‘তুফান’ সিনেমার পরে শাকিব খান চুক্তিবদ্ধ হন ‘বরবাদ’-এ। শুটিং হয় বাংলাদেশ ও ভারতে। সিনেমাটির নির্মাণে ব্যয় হয় ১৫ কোটির বেশি টাকা।

সিনেমাটিতে কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন শাকিব খান, এ প্রসঙ্গে সিনেমার প্রযোজক শাহরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা বললে তো একটা বেঞ্চ মার্ক দাঁড় হয়ে যাবে। কোনো তারকা সিনেমার বাজেট অনুযায়ী পারিশ্রমিক নেন। এটা তো আমাদের ঢালিউডের জন্য অনেকটা গোপন রাখতে হয়। এটা যেকোনো তারকার যোগ্যতা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সেখানে কাউকে কেউ দুই–তিন কোটি টাকা দিয়ে নিতেই পারেন।’

সিনেমাটির একটি সূত্র জানায়, তারা কোটি টাকার বেশি পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন শাকিব খানকে। এই সিনেমা দিয়ে শাকিব খান প্রথম কোটি টাকা পারিশ্রমিক পান।

‘বরবাদ’ সিনেমার পোস্টার
আরও পড়ুন

পরবর্তীকালে ঈদুল আজহার সিনেমা ‘তাণ্ডব’ থেকেও এক কোটি টাকার বেশি পারিশ্রমিক নেন শাকিব খান। এ নিয়ে প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল কোনো কথা বলতে চান না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাকিব আমাদের কাছের মানুষ। তাঁর সঙ্গে আমাদের আলাদা সম্পর্ক। এখানে পারিশ্রমিক মুখ্য নয়।’ তবে সিনেমাটির জন্য ১ কোটি ২০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পারিশ্রমিক গুনতে হয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে।
এবার নতুন করে পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনায় এলেন শাকিব খান। শোনা যাচ্ছে, আবু হায়াত মাহমুদ পরিচালিত ‘প্রিন্স’ সিনেমার শুটিং শুরু হতে যাচ্ছে অক্টোবর–নভেম্বরে।

এই সিনেমার জন্য তিন কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন শাকিব খান। এ প্রসঙ্গে সিনেমার পরিচালক আবু হায়াত বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের প্রযোজক তিন কোটি পারিশ্রমিক দিচ্ছেন, এমন কোনো কথা বলেননি। তিনি শুধু এটাই বলেছেন যে আমরা সম্মানজনক একটা অর্থ দিচ্ছি, যা শাকিব খানের বাজার অনুযায়ী চাহিদা। তবে সেটা কত, এটা আমাদের প্রকাশ করা ঠিক হবে না। গোপনীয় একটি বিষয়। তবে যা ছড়িয়েছে, সেটা যারা ছড়িয়ে তারাই জানেন কীভাবে তথ্য পেয়েছেন। আমরা সিনেমার পারিশ্রমিক নিয়ে সরাসরি কোনো অর্থের কথা বলিনি।’

শাকিবঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছিল, শাকিব খান তিন কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না। তবে পারিশ্রমিক দুই কোটির মতো। কত, সেটা অবশ্য জানা যায়নি।
‘তাণ্ডব’–এর গানের দৃশ্যে শাকিব ও সাবিলা। শাকিব খানের ফেসবুক থেকে

এর আগে শাকিবঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছিল, শাকিব খান তিন কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না। তবে পারিশ্রমিক দুই কোটির মতো। কত, সেটা অবশ্য জানা যায়নি। সাইনিং মানি সম্পর্কে সূত্রটি আরও জানায়, শাকিব বর্তমানে সিনেমার জন্য কোটি টাকার বেশি সাইনিং মানি নিচ্ছেন। ‘প্রিন্স : ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন ঢাকা’ সিনেমার সাইনিং মানিই নিয়েছেন ৭০ লাখ টাকার বেশি।

এদিকে তরুণ নির্মাতা সাকিব ফাহাদ পরিচালিত ‘সোলজার’ সিনেমার জন্য শাকিব পারিশ্রমিক নিচ্ছেন প্রায় দুই কোটি টাকা। আগামী মাস থেকে সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে।

‘প্রিন্স : ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন ঢাকা’ সিনেমার পোস্টার
আরও পড়ুন