নানা ছাড়া প্রথম ঈদ: বিষাদে ভারাক্রান্ত পরীমনির উৎসব

নানা শামসুল হক গাজীর সঙ্গে চিত্রনায়িকা পরীমনি। ২ বছর আগের ছবিছবি : ফেসবুক

প্রথম নানাকে ছাড়া ঈদ করছেন ঢাকাই ছবির নায়িকা পরীমনি। গত বছর নভেম্বর মাসে মারা যান তাঁরা নানা। নানার মৃত্যুর পর আজ প্রথম ঈদ। প্রতিবারের মতো আনন্দ ঘেরা রঙিন দিনটি এবার রংহীন হয়ে আছে পরীমনির কাছে। ঈদ-আনন্দের দিনটি অনেকটাই বিষাদেই কাটছে এই অভিনেত্রীর।
প্রথম আলোকে পরীমনি বলেন, ‘আমার তো কেউ নাই। একমাত্র অভিভাবক, আপনজন ওই নানাভাই ছিলেন। তিনিই আমার জীবনের সবকিছু। গত পাঁচটা মাস কীভাবে চলে গেল নানা ছাড়া। ভাবলে আমি চাপ নিতে পারি না। আগে ভাবতাম, নানা ছাড়া পৃথিবীতে কীভাবে থাকব। হয়তো ওপরওয়ালা মানুষকে ধৈর্য ধারণ করতে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’
ছোটবেলা থেকেই ঈদের দিন নানার দেওয়া কাপড় পরেন পরীমনি। গত বছরের ঈদে তাঁকে ক্রিম রঙের একটি ড্রেস দিয়েছিলেন নানা। বলেন, ‘ড্রেসটি ঈদের দিন পরেছিলাম। সেটিই শেষ পরা। নানার কাছ থেকে এই ঈদে কিছু পেলাম না। আর কখনোই পাব না। আজ ঈদ, নানা বেঁচে থাকলে দু-তিন আগেই আমার ঈদের পোশাক চলে আসত। নানার কথা মনে করে আমি নিজের জন্য কিছুই কিনি নাই।’

আরও পড়ুন

প্রতি ঈদে নানা যেমন পরীমনিকে ড্রেস কিনে দিতেন, নানাকেও পরীমনি পাঞ্জাবি কিনে দিতেন। এবার নানার অনুপস্থিতিতে ছেলে পুণ্যেকে পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছেন পরী। তিনি বলেন, ‘নানাকে তো আর কিনে দিতে পারব না। নানার কথা ভেবে ওই পাঞ্জাবি ছেলেকে কিনে দিয়েছি। আবার ওর জন্যও আলাদা করে পাঞ্জাবি কিনেছি।’
প্রতিটি দিন, প্রতি রাত নানাকে মিস করেন পরী। গত মঙ্গলবার কলকাতা থেকে সিনেমার শুটিং শেষে ঢাকা ফিরেছেন তিনি। বলেন, ‘আসার সময় মনে হচ্ছিল ঢাকাতে তো আমার কেউ নেই। কোথায় যাচ্ছি আমি। মনে হচ্ছিল, আমি আর পুণ্য মিলে কোথায় চলে যাই।’

ছেলেকে নিয়ে পরীমনি। ফেসবুক

তবে ছেলে পুণ্যের মধ্যে নানাকে খুঁজে পান পরীমনি। পুণ্য যতই বড় হচ্ছে, অনেক কিছুই নানার মিল পাচ্ছেন ছেলের মধ্যে। পরীমনি বলেন, ‘আগে বোঝা যায়নি। এখন বড় হচ্ছে, নানার অনেক অভ্যাস পুণ্যের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছি। বিশ্বাস করেন, নানা পেছনে হাত রেখে দাঁড়াতেন, পুণ্যও ওভাবে দাঁড়ায়। আবার পুণ্য যখন খাবার খায় পুরাই নানার কপি মনে হয়। মনে হয় নানার ছোট ভার্সন পুণ্য। পুণ্য যতই বড় হচ্ছে, নানার কিছু অভ্যাস তার মধ্যে ফোকাস হচ্ছে। এসব দেখে আমার কাছে অবাক লাগে। ভাবি, এত মিল হতে পারে? হয়তো ওপরওয়ালা আমাকে উপহার দিয়েছেন এভাবে।’

রাজের সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই পুণ্যকে নিয়ে আলাদা থাকেন পরীমনি। সন্তানের প্রতিটি মুহূর্তই তাঁর কাছে যেন নতুন জীবন। তিনি বলেন, ‘সন্তান না থাকলে মনে হয় আমি বাঁচতে পারতাম না। অনেক সংগ্রামের মধ্যে পুণ্যের স্পর্শ, ছায়া আমাকে শান্তি দেয়, আনন্দ দেয়। তাঁর প্রতিটি মুহূর্তই আমি কাছে থেকে উপভোগ করি। আমার যতই মন খারাপ বা সমস্যায় থাকি না কেন, যখন পুণ্য কাছে আসে, গলাটা জড়িয়ে ধরে আমার, সবকিছুই দূর হয়ে যায়। মনে হয় পুরো পৃথিবীই আমার কাছে। আর কী লাগে।’

পরীমনি
ফেসবুক থেকে

পরী আরও বলেন, ‘পুণ্য প্রতিদিন বড় হচ্ছে, তাঁর পাশে থেকে প্রতিটি সময় আমার কী যে মজা, কী যে আনন্দে কাটছে। বিষয়টি আমি ছাড়া আর কেউই অনুভব করতে পারবে না।’
কথায় কথায় স্বামী রাজের প্রসঙ্গে এলে এড়িয়ে যেতে চান পরী। শুধু বলেন, ‘তাঁকে নিয়ে কথা বলতে চাই না। সে তো আমার কাছে মৃত। তাকে নিয়ে আর কী কথা বলব। মরা মানুষ নিয়ে কথা না বলাই ভালো। যেদিন আমার জীবন থেকে চলে গেছে, সেদিন থেকেই রাজ নামে কাউকে আমি চিনি না, জানি না। আর সে যে আগে ছিল, সেটাও আমি মনে করতে চাই না।’

বছরের বিশেষ দিন ঈদ উপলক্ষে রাজের সঙ্গে ছেলের দেখা হবে কি না বা পুণ্যের জন্য ঈদের উপহার পাঠিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে কিছুটা রেগেই পরীমনি বলেন, ‘একজন বাউন্ডুলে মানুষের সন্তানের খবর নেওয়ার দরকার আছে নাকি? আর আসলেও কি আমি দেখতে দেব? সন্তানের ঈদ উপহারের বিষয়টি সে বুঝে কি না, সেটাও একটা ব্যাপার।’

নানা শামসুল হক গাজীর কোলে পরীমনির সন্তান, পাশে মা পরীমনি
ফাইল ছবি

আক্ষেপ করে তিনি আরও বলেন, ‘এত কষ্ট করে আমি সন্তানকে বড় করছি, কোনো দিন খবর নিতে আসেনি, বাবার দায়িত্ব পালন করেনি। এখন এসে লাভ নাই। কষ্টের দিনে তাঁর সহযোগিতা পাইনি, এখন বড় হয়েছে, আনন্দের দিনে তাঁর আসার দরকার নেই। সুযোগও নাই।’
পরীমনি জানিয়েছেন ঈদের দিন কোথাও বের হচ্ছে না। সন্তান পুণ্যকে সঙ্গে নিয়ে বাসায়ই সময় কাটছে তাঁর। বলেন, ‘ঈদের দিন আমার নানাবাড়ির কিছু আত্মীয় এসেছে আমার বাসায়। নিজ হাতে রান্না করে তাঁদের খাওয়াচ্ছি। এতটুকুই। আগামীকাল আমার কাছের কিছু বন্ধু, সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হতে পারে।’
এদিকে দেবরাজ সিনহার কলকাতার সিনেমা ‘ফেলুবকশি’-এর তাঁর অংশের ১৪ দিন শুটিং শেষ করে দেশে ফিরেছেন পরী। জানালেন আউটডোরে আর এক দিনের শুটিং বাকি আছে। চলতি মাসের শেষে বাকি শুটিং শুরুর কথা আছে। ছবিতে পরীর বিপরীতে অভিনয় করছেন কলকাতার সোহম চক্রবর্তী।