বেয়াদবি কখনোই স্পষ্টবাদিতা নয়, কাকে ইঙ্গিত করে বললেন বুবলী

শবনম বুবলীপ্রথম আলো

গত ২১ মার্চ ছিল শাকিব-বুবলীর সন্তান বীরের জন্মদিন। ওই দিন সন্তানকে নিয়ে একটি আবেগঘন বার্তা দেন বুবলী। এর পরপরই ঢাকাই সিনেমার আরেক আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনির রহস্যঘেরা পোস্ট নিয়েই শুরু হয় নতুন বিতর্ক। এরপর আরেকটি রহস্যজনক পোস্ট দেন বুবলীও। এরপর পরীও নতুন করে পোস্ট দেন। কেউ কারও নাম নেননি, তবে ঢাকাই ছবির দুই নায়িকার এই ‘ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ’-এ সরগরম হয়ে ওঠে অন্তর্জাল। মাঝে বেশ কিছুদিন চলে গেছে। আজ শুক্রবার চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে প্রায় ১০ মিনিটের একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বুবলী। সেখানে এমন কিছু কথা বলেছেন তিনি, যা শুনে অনেকে মনে করছেন, কথাগুলো হয়তো কাউকে ইঙ্গিত করে বলা।

আরও পড়ুন

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে পরীমনি নিজেকে ‘স্পষ্টবাদী’ হিসেবে দাবি করেছেন। কারোর নাম উল্লেখ না করলেও চ্যানেল আইয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘স্পষ্টবাদী’ প্রসঙ্গটি ধরেও বক্তব্য দিয়েছেন বুবলী। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের মধ্যে কেউ যদি আমার আবেগের জায়গাকে অন্যভাবে আনেন, সেটি আমার জন্য কষ্টের। কেউ যদি কারোর সঙ্গে অসভ্যতা করেন, কাউকে হার্ট করেন, সেটি যদি তাঁর কাছে মনে হয় বা প্রমাণ করতে চান “আমি স্পষ্টবাদী”, তাহলে তো একসময় বড়দেরও অসম্মান করবেন। যে কেউই বড়দেরও কোনো কিছু একসময় হুটহাট বলে ফেলবেন।’

বুবলী আরও বলেন, ‘ কাউকে অসম্মান করা, কাউকে কষ্ট দেওয়া, কাউকে  হার্ট করা কখনোই স্পষ্টবাদিতা নয়। বেয়াদবি কখনোই স্পষ্টবাদিতা নয়।’

ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধে লিপ্ত বুবলী আর পরীমনি
কোলাজ

সাক্ষাৎকারে বুবলী আরও বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এখনকার সময়ে একটা ট্রেন্ড চলছে। কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলা, কারোর সঙ্গে অসভ্যতা করা, হার্ট করা—এসব করে যদি কেউ নিজেকে “স্পষ্টবাদী” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে বড়দের যে কেউই অসম্মান করবে। ছোটদেরও বাজেভাবে কথা বলবে। বলবে, “আমি স্পষ্টবাদী, তাই বলে ফেললাম।” এটি খারাপ চর্চা। স্পষ্টতা সেটাই, যেটি কাউকে হার্ট করে না, শুধু নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারে। এমন সব ঘটনায় বেশির ভাগ সময়ই আমি চুপ থাকি। অনেকে ভাবেন, আমি কথা বলি না কেন। আগে ভাবতাম, বোবার শত্রু নাই। এখন মনে হয়, বোবারই শত্রু বেশি।’

সন্তান বীরের জন্মদিনে মা বুবলী আবেগঘন বার্তা দেওয়ার পর থেকেই পরস্পরের নাম ধরে না বললেও বুবলী ও পরীমনির মধ্যে ইঙ্গিত পূর্ণভাবে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট চলতে থাকে।

বুবলী ও বীর। ছবি : অভিনেত্রীর ফেসবুক থেকে

ওই সময়কার বিষয়টি ধরে প্রতিবেদকের এক প্রশ্নে বুবলী জানান, প্রত্যেক সন্তানই তার মায়ের কাছে আবেগের, ভালোবাসার। সেখান থেকে বীরকে নিয়ে তাঁর জার্নি সবাই জানেন। জন্মের আগে-পরে যুক্তরাষ্ট্রের দিনগুলোর যুদ্ধটাও জানেন। সব মায়েরই সন্তানের প্রতি ভালোবাসার টোন, প্রকাশ, অনুভূতি একই রকমের। বলেন, ‘আমি দুই বছর বীরকে সামনে আনতে পারিনি। না আনলেও ওই সময়ে বীরকে নিয়ে আমারও একটা জার্নি ছিল। এই জার্নির ভেতরের খবর অনেকে জানেন না। কেউ যদি মা হিসেবে এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে, সেটি দুঃখজনক। বীরকে নিয়ে আমার কষ্টের দিন ছিল, আবেগের দিন ছিল। সেগুলো নিয়ে যদি কেউ কোনো খোঁচা দেয়, তাহলে কষ্ট ছাড়া কিছুই নয় এটি।’

এই অভিনেত্রীর কথা, ‘আমরা মা হিসেবে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে জার্নি পার করছি। এখানে তো সন্তানের প্রতি মায়ের আবেগ-ভালোবাসার প্রকাশে কোনো প্রতিযোগিতা থাকার কথা নয়। এটি তো কোনো অ্যাওয়ার্ড শো নয় যে তাকেই সেরা হতে হবে। এসব বিষয় বাইরের মানুষের কাছে অন্য রকমের বার্তা দেয়। প্রত্যেক মায়ের প্রতি আমার সম্মান আছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সন্তানদের প্রতি এসব যেন প্রভাব না পড়ে। দিন শেষে তাদেরও একটা সার্কেল তৈরি হবে।’

ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির অপেক্ষায় রাজ-বুবলীর সিনেমা ‘দেয়ালের দেশ’
ফেসবুক পেজ থেকে

এই ঈদুল ফিতরে বুবলী অভিনীত ‘মায়া’ ও ‘দেয়ালের দেশ’ নামে দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। কতটুকু আশাবাদী? এমন প্রশ্নে বুবলী বলেন, ‘দর্শকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। দর্শকের ভালোবাসায় অনেকগুলো বছর হয়ে গেল, ঈদের মতো বড় উৎসবে আমার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এবারও দুটি সিনেমা আসছে, খুবই রোমাঞ্চিত। দুটি ছবি দুই ধরনের। এমনিতেই ঈদের উৎসব আনন্দের। তার সঙ্গে যদি  ঈদে সিনেমা থাকে, তাহলে তো কথাই নেই।’

ঈদে শাকিব খানের ‘রাজকুমার’ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। শাকিবের ছবিতে হলের সংখ্যা বেশি থাকে। সেই ক্ষেত্রে চাপ অনুভব করছেন কি না? এমন আরেক প্রশ্নে বুবলীর উত্তর, ‘একদমই চাপ নেই। এত বড় অভিনেতা শাকিব। সিনেপ্লেক্স বা একক হলে উনার ছবির হলের সংখ্যা অন্য রকম। দর্শকের মধ্যে অন্য উন্মাদনা কাজ করে। দর্শকেরা তাঁর ছবিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। সে ক্ষেত্রে আমাদের ছবির কোনো প্রতিযোগিতাই নেই তাঁর ছবির সঙ্গে। তবে তাঁর সিনেমাও সবাই দেখুক, পাশাপাশি আমাদের সিনেমাও।’

কিছুদিন আগে একটা ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ছেলে বীর বাবা শাকিবের জন্মদিনে উইশ করছে, বাবার পক্ষ থেকে কী উত্তর এসেছে? প্রতিবেদকের করা  প্রশ্নে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘বীরের বাবা তো ভীষণ খুশি। আমি বলি, মার্চ মাসটা বাবা-ছেলের মাস। ২১ মার্চ ছেলের জন্মদিন, ২৮ মার্চ বাবার জন্য দিন। বাবা, দাদা-দাদি, আমিসহ সবাই মিলে ছেলের বার্থডে পালন করলাম। খুব সুন্দর সময় পার করেছে বীর। এরপর আবার বাবার বার্থডে উইশ করল বীর। বাবাও খুশি হয়েছে। আমি চাই, বীর যেন উপযুক্তভাবে বাবা, দাদা-দাদি, ফুপা-ফুপি সবার সঙ্গে পারিবারিক আবহে বড় হয়। সুন্দর একটি পরিবেশে বেড়ে উঠুক বীর।’