ফিল্ম বাজারে চোখ নির্মাতাদের

শুধু প্রযোজক বা ডিস্ট্রিবিউটর পাওয়া নয়, ফিল্ম বাজারের সিনেমাগুলো বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও সুযোগ পায়কোলাজ

এশিয়ার অন্যতম কো-প্রোডাকশন মার্কেট ইন্ডিয়ান ফিল্ম বাজার। সম্প্রতি ফিল্ম বাজার নির্বাচিত সিনেমার তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় বিশ্বের ১১টি দেশের ২০ সিনেমা নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জায়গা পেয়েছে দুটি সিনেমার চিত্রনাট্য—‘খেকশিয়াল’ ও ‘রায়ার বিয়ে’। সিনেমা দুটি নির্মাণ করছেন গোলাম মুস্তাকিম ফাহিম ও মাকসুদ হোসাইন। আগামী ২০ থেকে ২৪ নভেম্বর ভারতের গোয়ায় বসবে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়া (ইফি)। সেখানে ফিল্ম বাজারের কো-প্রোডাকশনে অংশ নেবে নির্বাচিত ২০টি সিনেমা। ফিল্ম বাজারের উদ্যোক্তা ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা এনএফডিসি।

তরুণ নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত প্রথম সিনেমার নির্মাণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। তখনো জানতেন না কীভাবে সিনেমাটির জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট জোগাড় করবেন বা আন্তর্জাতিক প্রযোজকদের কাছে তুলে ধরবেন। ২০১৬ সালে প্রথমবার ইন্ডিয়ান ফিল্ম বাজারের কো-প্রোডাকশন মার্কেটে জমা দেন ‘নোনা জলের কাব্য’ সিনেমার চিত্রনাট্য। সেই সিনেমাটি নির্বাচিত হয়।

‘খেকশিয়াল’ সিনেমার প্রাথমিক পোস্টার। ছবি : পরিচালকের সৌজন্যে

সেখানে পেয়ে যান ফ্রান্সের এক প্রযোজককে। পরে সিনেমাটি ফ্রান্স থেকেও অনুদান পায়। সঙ্গে যুক্ত হয় আন্তর্জাতিক পরিবেশক। তার পর থেকেই এই নির্মাতা অনুধাবন করেন, তরুণ নির্মাতাদের জন্য ফিল্ম বাজারে সিনেমার চিত্রনাট্য নিয়ে অংশগ্রহণ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভাবনা থেকেই এবার প্রযোজক হিসেবে জমা দেন ‘খেকশিয়াল’ সিনেমার চিত্রনাট্য। গত বৃহস্পতিবার তিনি জানতে পারেন, তাঁদের সিনেমাটি কো-প্রোডাকশন মার্কেটে নির্বাচিত হয়েছে।

রেজওয়ান বলেন, ‘এটা আমার জন্য দারুণ অনুভূতি। এবার প্রযোজক হিসেবে যুক্ত হয়ে বেশি ভালো লাগছে। চরকির “তেলাপোকা” দেখে ফাহিমকে নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। একজন মানুষের অতীত নিয়ে দারুণ একটি গল্প। আশা করছি, প্রযোজকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাব।’

‘‘রায়ার বিয়ে’ সিনেমার প্রাথমিক পোস্টার। ছবি : নির্মাতার সৌজন্যে

দুই বছর আগে ‘সাফা’ সিনেমা দিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন মাকসুদ হোসাইন। এবার তিনি অংশ নিচ্ছেন দ্বিতীয় সিনেমার চিত্রনাট্য নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমরা সবেমাত্র চিত্রনাট্য করেছি। সিনেমাটি নিয়ে প্রথমেই দারুণ একটা খবর পেলাম। ফিল্ম বাজারের সিনেমাগুলো সব সময় আলাদা একটা নজরে থাকে। ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলে প্রযোজক পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ, এখানে প্রফেশনাল প্রযোজকেরাই বেশি আসেন।’

আরও পড়ুন

গত কয়েক বছরে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’, আবু শাহেদ ইমনের ‘অপদার্থ’, রেজওয়ান শাহরিয়ারের ‘নোনা জলের কাব্য’ ও ‘নিউ প্রফিট’, বিপ্লব সরকারের ‘আগন্তুক’, তানহা জাফরীনের ‘জলছবি’, মাকসুদ হোসাইনের ‘সাফা’, লিসা গাজীর ‘বাড়ির নাম শাহানা’সহ বেশ কিছু সিনেমা ভারতের এই কো-প্রোডাকশন মার্কেটে অংশ নেয়। এখানে অংশ নেওয়া সিনেমাগুলো বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সুযোগ পেতে দেখা গেছে। কো-প্রোডাকশন মার্কেটে দেশের সিনেমার নিয়মিত অংশগ্রহণে বদলে যাচ্ছে দেশের তরুণ নির্মাতাদের ভাবনা। এসব তরুণ এখন আর দেশের প্রযোজকদের ওপর নির্ভর করে বসে নেই।

পরিচালক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ‘আমাদের নির্মাতাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ ইন্ডিয়ান ফিল্ম বাজার। দেখা যায়, যখন কোনো পরিচালক তাঁর সিনেমার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে পারছেন না, তখন চাইলেই ফিল্ম বাজারে আবেদন করতে পারেন। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রযোজকদের মিলনমেলা ঘটে। বাংলাদেশের কোনো প্রযোজক চাইলেই ইউরোপের অনেক ফান্ডে অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারেন না। কিন্তু যখন সেসব দেশের কেউ বাংলাদেশের সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হন, তখন নানা সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায়। সিনেমার কনসেপ্ট দিয়েই কোটি টাকার অনুদান পাওয়া যায়।’

কীভাবে অনুদান পাওয়া যায়

প্রথমেই চিত্রনাট্য জমা দিতে হবে। পরে সিনেমাটি নির্বাচিত হলে প্রযোজকদের কাছে সিনেমাটির গল্প ও নির্মাণ পরিকল্পনা জানিয়ে পিচ করতে হবে। প্রযোজকেরা সন্তুষ্ট হলেই সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হবেন তাঁরা। বলে রাখা ভালো, শুধু প্রযোজক বা ডিস্ট্রিবিউটর পাওয়া নয়, ফিল্ম বাজারের সিনেমাগুলো বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও সুযোগ পায়। পরিচালক মাকসুদ বলেন, ‘এনএফডিসি ফিল্ম বাজার ইন্ডিয়ার সহযোগী প্রোডাকশন মার্কেট ফিচার ফিল্মের জন্য একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। বিশ্বের চলচ্চিত্র অঙ্গনে সিনেমাগুলোকে আলাদা করে তুলে ধরে।’