শাকিব, নিশোকে নিয়ে সরগরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, কী বলছেন দুই তারকার ভক্তরা
ঈদুল আজহার বাকি আর দুই দিন। প্রেক্ষাগৃহে পাঁচটি ছবি মুক্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে—‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘লাল শাড়ি, ‘প্রহেলিকা’ ও ‘ক্যাসিনো’। মুক্তির আগেই ছবিগুলো নিয়ে কমবেশি আলোচনা আছে। তবে সব ছাপিয়ে ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ ছবি দুটি নিয়ে কথা হচ্ছে বেশি। সিনেমাপাড়া থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি দুটির আলোচনা এখন তুঙ্গে। আর এই আলোচনার মধ্যমণি শাকিব খান ও আফরান নিশো।
ছবি মুক্তির আগে ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানকে নিয়ে সব সময় কমবেশি আলোচনা থাকেই। কিন্তু নিশোর ক্ষেত্রে এটি ব্যতিক্রম। ছোট পর্দায় দারুণ জনপ্রিয় নিশো। নাটকে দেশ-বিদেশে অনেক ভক্ত-দর্শক আছেন তাঁর। বড় পর্দায় এটি তাঁর প্রথম সিনেমা। তাই ‘সুড়ঙ্গ’ ঘিরে নিশোর ভক্তদের আগ্রহ চরমে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাকিব খান ও নিশোকে নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনা চলছেই। প্রিয় তারকাকে এগিয়ে রাখতে ফেসবুকে তারকাদের নামে গড়ে ওঠা গ্রুপে গ্রুপে ছবির লুক, গান ও পোস্টার পোস্ট করে চলছে ভক্তদের নানা ধরনের বিশ্লেষণ।
আবার তার মধ্যেই এসব পোস্টের নিচে মন্তব্যের ঘরে শাকিব ও নিশোর ভক্তরা প্রিয় তারকার দুর্বলতা-সবলতা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন ‘ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধে’।
এক শাকিব-ভক্ত যেমন প্রশ্ন তুলেছেন নিশোর নাচ ও অ্যাকশনের দক্ষতা নিয়ে। বিজয় সেতুপাতি, মনোজ বাজপায়ী, পঙ্কজ ত্রিপাঠিদের উদাহরণ দিয়ে পাল্টা বলেছেন নিশো-ভক্তরাও।
টিজার, ফোরটেস্টের পর চলতি মাসের ১২ তারিখে প্রকাশিত ‘কলিজা আর জান’ গান দিয়ে আলোচনায় আসে ‘সুড়ঙ্গ’। গানটিতে নুসরাত ফারিয়ার আবেদনময়ী অবতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শর্ট ভিডিও, রিলস, টিকটকে ছড়িয়ে পড়ে। নিশোর ভক্তরা তখন গানটিতে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
এর কিছুদিন পরই বাজিমাত করেন শাকিব খান। ‘প্রিয়তমা’ সিনেমায় তাঁর অশীতিপর বৃদ্ধের লুক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সাধারণ ভক্ত-দর্শক তো বটেই, অনেক তারকাও তাঁর লুক শেয়ার করেন। এরপর সিনেমার ‘কোরবানি’ গানটিও আলোচিত হয়।
এ দিকে প্রিয় তারকার জন্য নানা রকম পাগলামি করছেন ভক্তরা। দল বেঁধে প্রিয় তারকার ছবি দেখার জন্য গ্রুপে গ্রুপে আহ্বান জানাচ্ছেন শাকিব ও নিশোর ভক্তরা। যেসব এলাকায় পোস্টার পৌঁছে গেছে, পোস্টার হাতে ছবিও পোস্ট করছেন তাঁদের কেউ কেউ। দুই নায়কের কোনো কোনো ভক্ত আগাম টিকিট সংগ্রহ করে ফেসবুকে পোস্ট করছেন।
সৌদিপ্রবাসী সংগ্রাম আহমেদ নামের এক নিশো–ভক্ত দেশে আসতে না পারলেও বাংলাদেশের ভক্তদের জন্য ঈদের পরদিন শ্যামলী সিনেপ্লেক্সের ২০০ টিকিট কিনেছেন। টিকিটের ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে জানান দিয়েছেন ওই ভক্ত।
হলসংখ্যার দিক থেকে ‘সুড়ঙ্গ’-এর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকছে ‘প্রিয়তমা’। যেসব জেলায় হল আছে, ওই এলাকার শাকিব–ভক্তরা ‘প্রিয়তমা’ ছবিটি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু হলসংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে অনেক জায়গায় নিশো–ভক্তরা ‘সুড়ঙ্গ’ দেখতে পারবেন না। নিশোর ফ্যানপেজে ট্যাগ করে ছবিটি না দেখতে পারার আফসোসও জানাচ্ছেন ভক্তরা। চুয়াডাঙ্গা থেকে নিশোর এক ভক্ত রায়হান লিখেছেন, ‘চুয়াডাঙ্গার ভক্তরা কি নিশোর ছবি দেখা থেকে বঞ্চিত হবে?’
ছবি মুক্তির আগেই দুই নায়ককে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন উন্মাদনা ইতিবাচক বলে মনে করেন প্রযোজক সমিতির সাবেক নেতা খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘এমন আলোচনা সিনেমার জন্য ইতিবাচক। হয়তো তারকাদের ভক্তরা তাঁদের প্রিয় তারকার পক্ষ নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করছেন। কিন্তু দিন শেষে এটিও সিনেমার প্রচার-প্রসারে কাজ হচ্ছে।’ তবে তিনি মনে করেন, ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ দুই ধরনের ছবি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবার সব জায়গায় বাংলা সিনেমা নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে দুটি নিয়ে বেশি মাতামাতি হচ্ছে। আলোচনা বেশি হলে সিনেমার জন্য ভালো। মানুষের কাছে সিনেমার খবর বেশি বেশি পৌঁছাবে।’
এই প্রযোজকের ভাষ্য, ‘এই আলোচনা–উন্মাদনা দুভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। শাকিব খান সিনেমা ঘরানার আর নিশো টেলিভিশন ঘরানার। উভয় জায়গায় তাঁদের প্রচুর ভক্ত ও অনুসারী আছেন। তাই দুই জায়গা থেকেই প্রিয় তারকাকে এগিয়ে রাখতে ভক্তরা পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করে মন্তব্য করছেন। আমি মনে করি, প্রিয় তারকার পক্ষ নিয়ে অন্য তারকাকে আক্রমণ করে ভক্তদের বিদ্বেষ না ছড়ানো ভালো।’