শুদ্ধতম সিনেমার অনুসারী ছিলেন তিনি
প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক জাহিদুর রহিম অঞ্জনকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেন তাঁর পরিবারের সদস্য, বন্ধু, সহকর্মী, শিক্ষার্থীসহ বিশেষ শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে স্মরণসভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নির্মাতা।
স্মরণসভায় অঞ্জনকে নিয়ে কথা বলেন অগ্রজ, বন্ধু ও অনুজরা। কেউ শিক্ষক অঞ্জন, কেউ নির্মাতা অঞ্জন, কেউবা ব্যক্তি অঞ্জনকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।
বিকেলে অনুষ্ঠানের শুরুতে অঞ্জনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন আমন্ত্রিত অতিথি ও উপস্থিত দর্শকেরা। এরপর স্মরণাঞ্জলি পড়ে শোনান শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। তিনি বলেন, অঞ্জনের ধ্যান–জ্ঞানের কেন্দ্রে ছিল চলচ্চিত্র।
অঞ্জনকে নিয়ে স্ত্রী, কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতারের একটি লেখা পাঠ করেন আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। আবেগঘন লেখায় অঞ্জনের শেষ দিনের স্মৃতিচারণা করেন শাহীন আখতার।
মঞ্চে আসেন নির্মাতা অঞ্জনের ছোট ভাই সাজ্জাদুর রহিম ও ছোট বোন সোনিয়া নিজাম। ভাইকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন তাঁরা। সাজ্জাদুর রহিম বলেন, ‘ওর পুরো জীবনটা যদি দেখি, একটা দুর্ধর্ষ জীবন। ছোটবেলা থেকে নিয়মের বেড়াজালে ওকে বাঁধা যায়নি। সারাটা জীবন নতুন সৃষ্টির সন্ধান করে গেছে। লেখালেখি করেছে, আবৃত্তি করেছে, অভিনয় করেছে, বেহালা বাজাত।’
বড় ভাই অঞ্জনের অনুপ্রেরণায় সংগীতে পড়াশোনা করেছেন সোনিয়া নিজাম। ভাইকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমার গানের পেছনে ভাইয়ার অনেক অবদান। ভাইয়ার জন্যই আমার ভারতে পড়তে যাওয়া, পড়া।’
অঞ্জনকে নিয়ে অগ্রজদের মধ্যে কথা বলেন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা মানজারে হাসীন মুরাদ। তিনি বলেন, ‘অঞ্জন খুবই সরব ছিল। অনেকটা তুড়ি মেরে সবকিছুকে উড়িয়ে দিতে পারত। পুরো পরিবেশটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারত। কখনোই মন খারাপ করে থাকত না।’
অঞ্জনের বন্ধুদের মধ্যে কথা বলেছেন কবি ও প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ। তিনি বলেন, ‘আমরা বলি, যখন আমাদের বন্ধুরা চলে যায় তখন আমাদেরও কিছু মৃত্যু ঘটে। কারণ, আমাদের বন্ধুরা আমাদের অংশ। আবার এটাও সত্য, বন্ধুরা যখন চলে যায়, বন্ধুদের কিছু অংশ আমাদের মধ্যে থেকেও যায়। আমরা হয়তো কিছু পরিমাণে বহনও করে চলি।’
বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘একটা জীবনের অভিজ্ঞতা যতভাবে নেওয়া দরকার, সব অভিজ্ঞতাকে আহরণ করেছেন। শুদ্ধতম সিনেমার অনুসারী ছিলেন তিনি।’
স্মরণসভায় খ ম হারুন, সলিমুল্লাহ খান, ঢালী আল মামুন, জুনায়েদ হালিম, তরুণ ঘোষ, শহীদুজ্জামান সেলিম, নুরুল আলম আতিক, এন রাশেদ চৌধুরী, আকরাম খান, জয়ীতা মহলানবিশ, জুয়েইরিযাহ মউসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।
ইফতারের বিরতির পর অঞ্জনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মেঘমল্লার’ প্রদর্শিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান।