কেন ১৪ বছর সিনেমায় নাম লেখাননি মেহজাবীন

সিনেমায় নাম লেখালেন মেহজাবীন চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

ছোট পর্দার অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর অভিনয় অঙ্গনে ১৪ বছরের পদচারণ। এ দীর্ঘ সময়ে নাটক থেকে ওয়েব সিনেমা, সিরিজে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কিন্তু সিনেমায় তাঁকে দেখা যায়নি। অবশেষে সেই সিনেমায় নাম লিখিয়ে চমকে দিলেন ভক্তদের। নাম ভূমিকায় বড় পর্দায় ‘সাবা’ হয়ে আসছেন এই অভিনেত্রী। তাঁকে দেখা যাবে ‘সাবা’ সিনেমায়। এটি পরিচালনা করেছেন মাকসুদ হোসেন।

মেহজাবীন চৌধুরী ১৪ বছর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি নাম লেখান টেলিভিশন নাটকে। ক্যারিয়ারের বিশেষ এই দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে গতকাল সিনেমার পোস্টার ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খুশির খবর দেন। মেহজাবীন জানালেন, গত বছর সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কারণে এত দিন গোপন রেখেছিলেন। ভক্তদের উদ্দেশে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৪ বছর আগে এই দিনেই টিভি নাটকে আমার অভিনয়–যাত্রা শুরু হয়েছিল। আর আজ এই বিশেষ দিনেই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধুদের জানাতে চাই বড় পর্দায় আমার অভিষেক হতে যাচ্ছে।’

সিনেমার পোস্টারে মেহজাবীন চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একের পর এক সিনেমায় প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সেসব গল্পে নাম লেখাননি। কেন তাঁর মনে হয়েছে ‘সাবা’ সিনেমাটি দিয়ে বড় পর্দায় নাম লেখানো যায়? এমন প্রশ্নে মেহজাবীন বলেন, ‘সিনেমার অনেক গল্প পেয়েছি। কিন্তু এ গল্পটি আমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ তৈরি করে। পরিচালক মাকসুদ যখন প্রথম সিনেমাটির গল্প শোনায়, তখনই তার কনফিডেন্স এবং তার ইমোশন যতটুকু এই গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল, সেটা আমাকে টেনেছে। পরিচালক হিসেবে গল্প নিয়ে ডেডিকেশন আমাকে মুগ্ধ করেছে। কারণ, গল্পটা তার ব্যক্তিগত জীবনের। এটাই গল্প দেখে রাজি হওয়ার কারণ।’
এ সময় মেহজাবীন তাঁর চরিত্র প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাবা যা করে, হয়তো আমরা বাস্তবে এমন সিদ্ধান্ত নিই না। চরিত্রটি অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা। এটা ছিল নতুন ব্যাপার। আমার চরিত্র গল্প দিয়ে পরিচালক যা বোঝাতে চাইছেন, সেই বার্তাটিকে খুব শক্তিশালী মনে হয়েছে। আমি আগেও অনেক চরিত্র পেয়েছি। সেগুলো ভালো না, বলব না; কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে যে ধরনের গল্প দিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমায় নাম লেখাতে চাই, এটা ঠিক সে রকম গল্প।’

মেহজাবীন চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

‘সাবা’র পরিচালক মাকসুদ হোসেন জানান, শুটিং শেষে সিনেমাটির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজও সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এখন তিনি সিনেমাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রিমিয়ার ও বিপণনের দিকে এগোতে চান। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের গল্প। আমরা বহুসংখ্যক দর্শকের কাছে গল্পটি নিয়ে যেতে চাই। শুধু দেশের বাইরেই নয়, দেশের মধ্যেও বড় সংখ্যার দর্শকের কাছে গল্পটি নিয়ে যেতে চাই। “সাবা” সবার কথা বলবে। সিনেমায় যেমন আছে মানবিক গল্প, তেমনি ভালোবাসা ও জীবনবোধের নানা বিষয় এখানে উঠে এসেছে।’
‘সাবা’র গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই যুগ আগের একটি সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায় ২৪ বছর আগে দুর্ঘটনায় আহত হন ১২ বছরের এক কিশোরী ও তার মা। সেই ঘটনায় কিশোরী মানসিকভাবে আঘাত পায়, মায়ের সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। পরে সেই কিশোরীকে বিয়ে করেন পরিচালক মাকসুদ। স্ত্রী ও শাশুড়ির জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে নিজের প্রথম ছবির প্রেরণা নেন পরিচালক।

মাকসুদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও জানান, সেই সড়ক দুর্ঘটনা–পরবর্তী ঘটনা নিয়েই এগিয়ে যাবে ‘সাবা’র গল্প। এখানে মেহজাবীন ছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী, মোস্তফা মন্ওয়ার প্রমুখ।

সিনেমাটির গল্প লিখেছেন ত্রিলোরা খান ও পরিচালক নিজেই। এটি প্রযোজনা করেছে ফিউশন পিকচার্স। ২০২১ সালে ভারতের ফিল্ম বাজারে জায়গা করে নিয়েছিল ‘সাবা’। পরে ২০২২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের কো-প্রোডাকশন মার্কেটে নির্বাচিত হয়। কোরিয়ার এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে এ সিনেমার চিত্রনাট্য অংশ নিয়েছিল। সিনেমাটি আন্তর্জাতিক উৎসবে পাঠাতে চায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরই সিনেমাটি মুক্তি পেতে পারে।