নিজের ছাপ রাখতে চান অথৈ

গত শুক্রবার স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে মানিক মানবিক পরিচালিত সিনেমা ‘আজব ছেলে’। সরকারি অনুদানের এই শিশুতোষ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তরুণ অভিনেত্রী তাহমিনা অথৈ। তাঁর শুরু, অভিনয়-দর্শন, স্বপ্ন নিয়ে লিখেছেন লতিফুল হক

তাহমিনা অথৈ
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

ফোনে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না। গত রোববার সন্ধ্যায় যখন পাওয়া গেল, জানালেন ব্যস্ততার কারণ। তার দুই দিন আগে শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে তাহমিনা অথৈ অভিনীত সিনেমা ‘আজব ছেলে’। সিনেমা মুক্তির পর শিল্পীদের ব্যস্ততা আর আশ্চর্যের কথা কী! তবে জানা গেল, নতুন একটি ওয়েব সিরিজে কাজ করবেন অথৈ, সেটারই মহড়া চলছে।

পরের কাজ নিয়ে এই ব্যস্ততার ফাঁকে কি ‘আজব ছেলে’ দেখলেন? অথৈ জানান, দেখেছেন মুক্তির প্রথম দিনই। এ পর্যন্ত চারটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তরুণ এই অভিনয়শিল্পী। সাইদুল আনাম টুটুলের ‘কালবেলা’র পর, মানিক মানবিকের সিনেমাটি তাঁর মুক্তি পাওয়া দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। একে তো দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, শহরের বিভিন্ন স্কুলে চলছে পরীক্ষাও; সঙ্গে মুক্তির দিন (শুক্রবার) ছিল প্রবল বর্ষণ। অথৈ জানান, প্রথম দিন তাঁর দেখা শোতেও দর্শকসংখ্যা বেশি ছিল না। তবে বড় পর্দায় নিজেকে আবার দেখা তাঁর জন্য রোমাঞ্চকর অনুভূতি। তিনি বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে যতটা আশা করেছিলাম, তার চেয়ে ভালো সাড়া পেয়েছি। স্টার সিনেপ্লেক্সের দুটি শাখায় চলছে সিনেমাটি। শুনেছি, মিরপুরে আরও বেশি দর্শক হচ্ছে।’

তাহমিনা অথৈর মুক্তি পাওয়া প্রথম দুই সিনেমাই সরকারি অনুদানের, দুটোই ভিন্ন ঘরানার। পুরোপুরি গ্ল্যামারহীন চরিত্র করার সিদ্ধান্ত কি সচেতনভাবেই? উত্তরে অথৈ যা বললেন, তাতে তাঁর সিনেমা-দর্শন ফুটে উঠল অনেকটাই।

তাহমিনা অথৈ
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

তিনি বলেন, ‘গল্পভিত্তিক কাজগুলোয় চরিত্র হয়ে ওঠার একটা যাত্রা থাকে। নিজের চরিত্র নিয়ে ভাবা, গবেষণা, প্রস্তুতি মিলিয়ে বেশ সময় লাগে। যখন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা কালবেলায় কাজ করেছিলাম, তখন সময়টা সম্পর্কে জানতে হয়েছে, মানুষের জীবনের ছোট ছোট ঘটনার ওপর আলো ফেলতে হয়েছে, তখনকার মেয়েরা কীভাবে ভাবত, সেটা জানার চেষ্টা করেছি। আজব ছেলের যাত্রাও প্রায় এমনই ছিল। এ ধরনের চরিত্র হয়ে উঠতে অনেক শ্রম দিতে হয়, কিন্তু আমি ব্যাপারটা উপভোগ করি।’ তবে তিনি এ-ও জানান, পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধাঁচের সিনেমার সঙ্গে তাঁর কোনো শত্রুতা নেই। মনমতো চরিত্র পেলে নিশ্চয়ই করবেন।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্রী তাহমিনা অথৈ। সঞ্চালনা ও টিভি নাটকের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ব্যস্ত বড় পর্দায়। তা নাট্যকলা নিয়ে পড়াশোনা অভিনয়ের ক্ষেত্রে কতটা কাজে লাগছে?

অভিনেত্রী জানান, শ্রেণিকক্ষে পড়া বিভিন্ন তত্ত্ব তাঁকে চরিত্র নির্মাণে সাহায্য করে। এ ছাড়া নাট্যকলায় পড়ার সময় যোগব্যায়াম, সেট, লাইটিং, পরিচালনা, লেখা থেকে শুরু করে অভিনয়সংশ্লিষ্ট প্রায় সব বিষয় নিয়েই কাজ করা হয়। এগুলোও তাঁকে তৈরি হয়ে উঠতে সাহায্য করছে।

তাহমিনা অথৈ
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

সবচেয়ে ভালো যেটা হয়েছে, পেশাদার অভিনয়–দুনিয়ায় পা রাখার আগেই তাঁর গ্রুমিং হয়ে গেছে।নাট্যকলায় পড়ে অনেকেই অভিনয়ে এসেছেন, অনেকে আবার অভিনয়ে আসবেন বলে নাট্যকলায় পড়েছেন। তাঁর ক্ষেত্রে কী হয়েছে জানান অথৈ, ‘স্কুল থেকেই সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকতাম, অভিনয়ের ইচ্ছাটা ছোটবেলা থেকেই ছিল। নাট্যকলায় পড়ার সময় সেটা আরও বেড়েছে। তাই শুরুতে অন্য বিভাগে সুযোগ পেলেও পরে নাট্যকলায় চলে আসি। মা-বাবাকে না জানিয়েই নাট্যকলায় ভর্তি হয়েছিলাম, অনেক দিন তাঁরা আমার পড়ার বিষয় জানতেনও না। পরে জানার পর আর কিছু বলেননি।’

তাহমিনা অথৈ
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

২০১৮ সাল থেকে কাজ করছেন তাহমিনা অথৈ। দুই বছর কাজ করার পর দুই বছর ‘করোনা-বিরতি’। এখন চেষ্টা করছেন আবার অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত হতে। আরও পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

জানতে চাইলে বলেন, ‘অবশ্যই একটা পর্যায়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করতে চাই। কারণ, আমি কেবল করে গেলাম, কোনো প্রতিক্রিয়া পেলাম না; এ ধরনের কাজের কোনো সার্থকতা আমার কাছে নেই। যা-ই করি, নিজের ছাপ রাখতে চাই। অভিনয় দিয়ে নিজেকে আলাদাভাবে প্রমাণ করতে চাই। বিষয়টা যদিও সহজ নয়, কিন্তু আমার মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

তাহমিনা অথৈ
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

কাজের বাইরে প্রচুর সিনেমা, সিরিজ দেখেন অথৈ। চেষ্টা করেন, প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিছু না কিছু দেখতে। তাঁর ভাষ্য, ‘অভিনয়শিল্পীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ দেখা আবশ্যক। যত দেখব, তত অভিজ্ঞতা হবে; ততই শিখব।’ সুবর্ণা মুস্তাফা, স্মিতা পাতিল, শাবানা আজমি, টম ক্রুজ, টম হ্যাংকস থেকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তাঁর প্রেরণা। তবে এ-ও জানান, যাঁর কাজ ভালো লাগে, তাঁরই ভক্ত বনে যান তিনি। সেটা যদিও একেবারে নতুন কেউ হন, তাহলেও।