অস্ট্রেলিয়ায় সৌম্য-দিব্যকে জড়িয়ে কাঁদলেন শাহনাজ খুশি, বৃন্দাবন দাস

মা ও বাবার সঙ্গে সৌম্য ও দিব্য জ্যোতি। ছবি: ভিডিও থেকে

দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও দর্শকদের কখনো হাসাচ্ছে, কখনো কাঁদাচ্ছে ঈদে মুক্তি পাওয়া তানিম নূরের সিনেমা ‘উৎসব’। অস্ট্রেলিয়ায়ও সিনেমাটির অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে ছেলে অভিনীত সিনেমা দেখার কোনো টিকিটই পাচ্ছিলেন না অভিনেতা সৌম্য জ্যোতির মা অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি। দীর্ঘ অপেক্ষা পর গতকাল শুক্রবার প্রবাসীদের সঙ্গে দেখলেন ছেলে অভিনীত সিনেমা। সেই সিনেমা দেখে দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে দর্শকদের সামনে কাঁদলেন অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি ও নাট্যকার বৃন্দাবন দাস।

অস্ট্রেলিয়ায় সিনেমা মুক্তির সূচি ঘোষণার পরই টানা ১৩ দিনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এ নিয়ে একদিকে যেমন আনন্দ, তেমনি অন্যদিকে ছেলের সিনেমার টিকিট কাটতে না পেরে অনেকটাই মন খারাপ হয়েছিল শাহনাজ খুশির। এই অভিনেত্রী অস্ট্রেলিয়া থেকে বলেন, ‘সিনেমাটা ঈদে মুক্তির পর থেকে এত এত প্রশংসা দেখছিলাম। সবাই ভালো বলছিল। কেউ কেউ লিখেছিলেন টিনএজ নতুন এক জুটি পেল ঢালিউড। কেউ আবার আমির খানদের সঙ্গে তুলনা করছিলেন। ছেলেকে নিয়ে এত কথা হচ্ছিল, অথচ ছেলেটার অভিনয় দেখার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আবার সন্তানকে ছাড়া সিনেমা কীভাবে দেখি, সেটাও ভাবছিলাম।’

মায়ের সঙ্গে সৌম্য ও দিব্য জ্যোতি। ছবি: শাহনাজ খুশির সৌজন্যে

গত মে মাস থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় শাহনাজ খুশি। পুরো পরিবারই একসঙ্গে ছিল। পরে সিনেমা মুক্তি উপলক্ষে সৌম্য জ্যোতি ও তাঁর বাবা বৃন্দাবন দাস দেশে চলে আসেন। শাহনাজ খুশি জানান, সম্প্রতি সৌম্য ও বৃন্দাবন দাস অস্ট্রেলিয়া পৌঁছেছেন। পরে তাঁরা একসঙ্গে সিনেমাটি দেখার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু চারটি টিকিট মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য পরিবেশকদের বলেও রেখেছিলেন।

অবশেষে গতকাল অসুস্থতার কারণে একটি পরিবার চারটি টিকিট করে ফেরত দেয়। সেই টিকিট পেয়ে আর দেরি করেননি তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে চলে যান সিনেমা দেখতে, ‘সব মায়েরা বুঝতে পারবে আমার এই আবেগ। আমি এমনিতেই প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ মানুষ। সিনেমা দেখে আনন্দ-বেদনা এবং পরিপূর্ণ সুখানুভূতিতে পুরো কুয়াশায় ডেকে গেলাম। কাছ থেকে দেখলাম, দর্শকেরা কতটা আগ্রহী সিনেমাটি নিয়ে। কীভাবে ছেলেকে জড়িয়ে ধরছিলেন।’
সিনেমা দেখতে বসে ছেলের জন্য গর্বে কেঁদেছেন এই মা। সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ, ছেলের প্রশংসা তাঁর জীবনে স্মরণীয় ঘটনার একটি হয়ে থাকার মতো জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমরা যে সিনেমা দেখব, এটা দর্শকেরা কেউ জানতেন না। পরে সিনেমা শেষে জানাজানি হয়ে গেল। তখন সবাই আমাদের স্টেজে উঠতে বলেন। সেখানে ছেলেকে নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ আর ভালোবাসা দেখে আমার কান্না চলে আসে। দুই ছেলে ও তাদের বাবা বৃন্দাবন দাসও কাঁদতে থাকেন। তখন আমরা লক্ষ করেছি, হলের দর্শক আসনের সবাই কাঁদছিলেন। এই ভালোবাসা ছিল অনন্য প্রাপ্তি।’

সৌম্য ও দিব্য জ্যোতি। ছবি: শাহনাজ খুশির সৌজন্যে

শাহনাজের ভাগাভাগি করা ভিডিওতেও দেখা যায় সেই চিত্র। দর্শকদের সামনে মা ও বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন দুই ছেলে। এর পরে তাঁরা দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেন। ‘উৎসব’ সিনেমার জাহিদ হাসান অভিনীত ‘জাহাঙ্গীর’ চরিত্রের তরুণ বয়সে দেখা গেছে সৌম্য জ্যোতিকে। এত দিন দেশের দর্শকদের প্রশংসায় ভাসছিলেন সৌম্য।
এবার প্রবাসী দর্শকদের সঙ্গে সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌম্য বলেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ার দর্শকদের এত ভালোবাসা পাব ভাবিনি। এমনকি আমাদের শো শেষ হওয়ার পর প্রত্যেক দর্শকের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে হয়েছে, ছবি তুলতে হয়েছে। তাঁরা অনেকেই দীর্ঘ সময় আমাদের জড়িয়ে ধরে শুভকামনা জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছিলেন, সিনেমায় যে চিত্রটা পেয়েছেন, সেটা টিকিটের তুলনায় অনেক বেশি। দেশের প্রতি, দেশের গল্পের প্রতি প্রবাসীদের যে ভালোবাসা, সেটা এককথায় ভাবানোর মতো। তাঁরা সিনেমাটি পছন্দ করেছেন, সবাই যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, সেটা মনে রাখার মতো।’

ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ কাজই পরিবারের সঙ্গে দেখা হয় সৌম্যের। কিন্তু এবার সেই সুযোগ হতে বেশ দেরি হয়ে যায়। মাকে ছাড়া দেশের সিনেমা হল পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সৌম্য বলেন, ‘আমি যখনই কোথায় বের হই, মা-ই সব পোশাক ঠিক করে দেন। সঙ্গে থাকেন, কিন্তু এবার সেটা হয়নি। সবকিছুই আমাকে করতে হয়েছে। মা দূর থেকে পাশে ছিলেন। এ জন্য মন খারাপ ছিল। তা ছাড়া সিনেমাগুলো, দেশে দর্শক যে ভালোবাসা দেখাচ্ছেন, সেটা সরাসরি মা কাছ থেকে দেখতে পারলেন না, এ জন্যই মন খারাপ হতো প্রতিদিন।’

সৌম্য আরও জানালেন, তিনি সিনেমা হল পরিদর্শন করে বাসায় ফিরেই সারা দিন যা ঘটত, সেগুলো মায়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করতেন। এসব শোনার জন্য তাঁর মা অস্ট্রেলিয়ায় অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। শাহনাজ খুশি বলেন, ‘সারা দিন হল পরিদর্শনে কী হয়েছে, সেগুলোর অভিজ্ঞতা বলত আর কাঁদত ছেলে। আমরা দুজনই কাঁদতাম। আমার খারাপ লাগত, ছেলেটার পাশে থাকতে পারলাম না। ছেলেদের পাশে থাকাই তো মায়ের আনন্দ। ফোনেই খবর রাখতাম। আবার সাদিয়া আয়মানও ফোন দিয়ে বলত, “সৌম্য শুধু কান্না করে।” ছেলেকে নিয়ে দর্শকদের ভালোবাসা এবার অস্ট্রেলিয়ায় বুঝতে পারলাম।’

ছেলের সঙ্গে শাহনাজ খুশি। ছবি: শাহনাজ খুশির সৌজন্যে

এর আগে সৌম্য প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, শৈশব থেকেই মা ও বাবা তারকা হওয়ার কারণে সব সময়ই দর্শকেরা মা ও বাবাকে ঘিরে ধরতেন। এটা তাঁদের আনন্দ দিত। কিন্তু তাঁর মা-বাবা চাইতেন সন্তানদের এভাবে একদিন ঘিরে ধরলেই তাঁরা খুশি হবেন। ‘এবার দেখলাম দর্শক আমাকে ঘিরে ধরছেন। আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চাইছেন। আগেও ঘিরে ধরত, কিন্তু এবার সংখ্যা ছিল আগের চেয়েও বেশি। মা যদি কাছ থেকে এগুলো দেখতেন, তাহলে আমি আরও বেশি সার্থক হতাম। মা পাশে থাকলে নির্ভার থাকতাম। মায়ের জন্যই খারাপ লেগেছিল,’ বলেন তিনি।

সবশেষে ছেলের অভিনয় নিয়ে কী বললেন শাহজান খুশি? ‘আমি হয়তো পক্ষপাতিত্ব করে বলব। কারণ, আমি মা। আমি একটু বেশিই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। পর্দায় সৌম্যকে দেখে বহুবার কান্না পেয়েছে। তাকে আমি প্লাস মার্ক দেব। আমরা শৈশব থেকে যেভাবে ওদের শিখিয়েছি, ওরা যেভাবে দেখে বড় হয়েছে; সেখানেই একটা চাওয়া থাকে, ওদের কাজ দেখে যেন দর্শকেরা কখনোই আশাহত না হয়। কিন্তু ছেলে আমার আশাহত করেনি। এটাই আমার অন্য রকম ভালো লাগার। আমরা যে সম্মানটা ধারণ করি, সেখানে ছেলে আমাদের মান রাখতে পেরেছে। ও আরও ভালো করুক, এটাই চাই,’ বলেন তিনি।

সিনেমাটির অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে জাহিদ হাসান, সৌম্য ছাড়া আরও ছিলেন জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সাদিয়া আয়মান। এটি পরিচালনা করেছেন তানিম নূর। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ডোপ প্রোডাকশনস। সহপ্রযোজনায় আছে চরকি।