তরুণ নির্মাতাদের লাখ লাখ টাকা সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ

এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে অনুদান পাওয়া ‘জালালের গল্প’ ও ‘সাবা’ সিনেমার পোস্টার। ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট (এপিএম)। এই মার্কেট এশিয়ার তরুণ নির্মাতাদের জন্য তৈরি করেছে বড় এক সুযোগ। তরুণ নির্মাতারা যেখানে প্রযোজক পেতে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে এই সিনেমাবাজার নানাভাবে সাহায্য করছে। তরুণেরা চাইলে এই তহবিলের জন্য আবেদন করতে পারেন। চলতি বছর নতুন করে তহবিল প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের এই শাখা।

‘জালালের গল্প’ ছবির দৃশ্য
নির্মাতার সৌজন্যে

আন্তর্জাতিক বুসান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিশিয়াল সাইটের সূত্র থেকে জানা যায়, তরুণ নির্মাতারা সিনেমা ও তথ্যচিত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। স্ক্রিপ্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের জন্য এর মধ্যেই গল্প জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে আবেদন জমা নেওয়া, চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত। এ শাখায় শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় সিনেমার জন্য আবেদন করা যাবে। গল্প পছন্দ হলে পূর্ণাঙ্গ চিত্রনাট্য করার জন্য পরিচালক বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ লাখ টাকার অর্থসহায়তা পাবেন। এ ছাড়া পোস্ট প্রডাকশন ফান্ডের বড় ধরনের সাহায্য করে এই প্রজেক্ট মার্কেট। এই শাখায় সহযোগিতা পেতে হলে সিনেমার শুটিং চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। পরে সিনেমাটি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে প্রজেক্ট মার্কেটকে। এ সুযোগ পাবেন শুধু এশিয়ার নির্মাতারাই। সহায়তা পাওয়া সিনেমাগুলো বাধ্যতামূলকভাবে ২৯তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার করতে হবে।

প্রজেক্ট মার্কেটে তথ্যচিত্র নির্মাতাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুযোগ। এমন তরুণ নির্মাতাদের জন্য এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ডকুমেন্টারি ফান্ড চালু থাকবে মার্চের ২৫ তারিখ থেকে আগামী এপ্রিলের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। তথ্যচিত্রটি কোন পর্যায়ে রয়েছে, সিনেমা হলে মুক্তির পরিকল্পনাসহ বিস্তারিত তথ্য এই সময়ের মধ্যে অনলাইনে জমা দিতে হবে। এখানে বিজয়ী প্রজেক্টগুলো পাবে প্রায় ১৮ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট শুরু থেকেই তরুণ নির্মাতাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে নামীদামি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কখনো এই ফিল্মবাজার কর্তৃপক্ষ নিজেরাই সিনেমার প্রযোজনা, সহপ্রযোজনায় সরাসরি অর্থ প্রদান করে। সে ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকার অর্থসহায়তা পাওয়ার সুযোগ থাকে তরুণদের। বেশির ভাগ নগদ অর্থ প্রদান করে থাকে এই মার্কেট।

এই প্রজেক্ট মার্কেটে এর আগে বাংলাদেশের ‘জালালের গল্প, ‘রেহানা’সহ একাধিক সিনেমা জায়গা করে নেয়। সম্প্রতিক সময়ে ‘সাবা’, ‘সুরাইয়া’সহ বেশ কিছু সিনেমা নির্বাচিত হয়েছে। ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা ‘সাবা’ দিয়ে বুসান প্রজেক্ট মার্কেটে জায়গা করে নেন তরুণ নির্মাতা মাকসুদ হোসেন। তিনি জানান, সিনেমায় বিভিন্ন দেশের নামীদামি প্রযোজক, সহপ্রযোজক, ডিস্ট্রিবিউটর, চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজকসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয় এ বাজার। মেলে আর্থিক সহযোগিতা। পাওয়া যায় প্রযুক্তিগত সাহায্যও। সব মিলিয়ে এশিয়ার অন্যতম বড় এই চলচ্চিত্রবাজার নিয়ে তরুণ নির্মাতাদের ব্যাপক আগ্রহ থাকে।

সিনেমার পোস্টারে মেহজাবীন চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

মাকসুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা “সাবা” সিনেমার পোস্টের কাজ শেষ করেছি। এখন মুক্তির পথে এগোচ্ছি। শুরুতে সিনেমাটির শুটিংয়ের জন্য কয়েকটি জায়গা থেকে অর্থ পেয়েছিলাম। পরে বুসানে যাই মূলত পোস্টপ্রোডাকশনের জন্য ফান্ডিং খুঁজতে। সেভাবেই প্রযোজক ও অন্যদের সঙ্গে মিটিং করি। পাশাপাশি ডিস্ট্রিবিউটর ও অন্যান্য শাখা নিয়েও কথা বলে আমরা সহযোগিতা পেয়েছিলাম। এটা তরুণ নির্মাতাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ।’

গত বছর এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে ৫০টি দেশ থেকে ৩৯৯টি চিত্রনাট্য জমা পড়ে। প্রজেক্ট মার্কেট শুরুর পর এ সংখ্যা এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রজেক্ট এসেছ চীন, হংকং, তাইওয়ান ও জাপান থেকে।

সেখানে অংশ নেওয়া ‘সুরাইয়া’ সিনেমার পরিচালক রবিউল আলম বলেন, ‘প্রজেক্ট মার্কেটে সিনেমাটিকে ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের তহবিল পাওয়া, কখনো পাওয়া যায় প্রযুক্তিগতসহ নানা সহযোগিতা। এ ছাড়া সরাসরি আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়। তরুণদের উচিত এসব শাখায় নিজেদের প্রজেক্ট তুলে ধরা।’

এপিএমে বেশ কয়েক বছর ধরে এশিয়ার তরুণ নির্মাতাদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে শুরু হয় এই আয়োজন। তখন নাম ছিল পুসান প্রোমোশন প্ল্যান। পরে ২০১১ সাল থেকে এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেট নামে যাত্রা শুরু করে। উদীয়মান তরুণ নির্মাতাদের সহযোগিতা করার জন্য শুরু থেকেই এই প্রজেক্ট মার্কেট আলোচিত নাম। এপিএমে অংশ নেওয়া নির্মাতারাই পরবর্তী সিনেমাগুলো দিয়ে কান, ভেনিস, বার্লিনসহ বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নেয়।