অগ্রিম ৪০ লাখ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টাকা দাবি শাকিবের, পরিচালকের আক্ষেপ

‘প্রিয়তমা’ ছবির ‘কোরবানি কোরবানি’ গানের দৃশ্যে শাকিব খানছবি : এসকে ফিল্মসের সৌজন্যে

নির্ধারিত পারিশ্রমিকে চূড়ান্ত হওয়ার পরেও ‘নীল দরিয়া’ নামের সিনেমায় কাজ করছেন না নায়ক শাকিব খান। শাকিবের দাবি করা বাড়তি পারিশ্রমিকে কাজটি করতে রাজি হননি প্রযোজক। ছয় মাস আগে পারিশ্রমিক বাবদ নেওয়া ৪০ লাখ টাকা প্রযোজককে ফেরত দিয়েছেন শাকিব খান।

গত ঈদুল ফিতরের আগের ঘটনা। পরিচালক বদিউল আলম তার নতুন ছবি ‘নীল দরিয়া’-তে অভিনয়ের জন্য চূড়ান্ত করেন শাকিব খানকে। সে সময় পারিশ্রমিক বাবদ ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয় শাকিব খানকে। ছবির শুটিং শিডিউল ছিল ২০ জুলাই থেকে। তার আগে ফাইট ডিরেক্টর আরমান ও চিত্রগ্রাহক মজনুকে নিয়ে কক্সবাজারের জেলেপল্লিতে লোকেশন দেখে আসেন পরিচালক। কক্সবাজারে তাঁদের লোকেশন দেখার একটি ভিডিও পরিচালকের ফেসবুক আইডিতে প্রকাশ হয়েছিল।

‘নিষ্পাপ মুন্না’ ছবির পোষ্টার

পরিচালক শুটিংয়ের সব প্রস্তুতি নিলেও ‘প্রিয়তমা’ ছবির কারণে শুটিং পিছিয়ে যায় ‘নীল দরিয়া’ ছবির। তাড়াহুড়া করে ‘প্রিয়তমা’ নির্মাণ করে ২৯ জুলাই ঈদুল আজহায় মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর ছবিটি হিট হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

‘প্রিয়তমা’ সুপারহিট হওয়ার পর শাকিব খান তাঁর পারিশ্রমিকও বাড়িয়ে দেন। কয়েক মাস আগেও ৩৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ছিল শাকিবের পারিশ্রমিক। ‘প্রিয়তমা’ মুক্তির পর এখন ছবিপ্রতি চাইছেন ১ কোটি টাকা।

পরিচালক বদিউল আলমের সঙ্গে জুটি হিসেবে শাকিব খানের বেশ কিছু ছবি করেছেন। ‘
সংগৃহীত

আর এতেই ‘নীল দরিয়া’ ছবিটি আটকে গেছে। শতভাগ পারিশ্রমিক নিয়েও ছবির কাজটি করতে চাচ্ছেন না শাকিব খান। এখন ‘নীল দরিয়া’ তৈরি করতে হলে ৪০ লাখ টাকার সঙ্গে আরও ৬০ লাখ যোগ করে দিতে হবে—এমনটিই দাবি করছেন শাকিব খান। ফলে ছবিটি আর হচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, পারিশ্রমিক বাবদ তাঁকে দেওয়া ৪০ লাখ টাকা শাকিব খান প্রযোজককে ফেরতও দিয়েছেন। তথ্যটি জানিয়েছেন ছবিটির পরিচালক বদিউল আলম।

‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’ সিনেমার পোষ্টার
আরও পড়ুন

বদিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন টাকাটা শাকিব খানকে দিই, ওই সময় ৩৫ থেকে ৫০ লাখের মধ্যে পারিশ্রমিক ছিল শাকিবের। আমরা বরং বাড়িয়ে ৪০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। ২০ জুলাই থেকে শুটিংয়ের শিডিউল দিয়েছিলেন। সেভাবে লোকেশনসহ শুটিংয়ের সব প্রস্তুতি নেওয়া ছিল আমার।

‘প্রিয়তমা’ ছবিতে শাকিব খান ও ইধিকা পাল
ছবি: সংগৃহীত

কিছুদিন পর হঠাৎ করেই শাকিব জানান, ঈদুল আজহার জন্য ‘প্রিয়তমা’ করে পরে এই ছবি করবেন। আমিও মেনে নিলাম। ঈদে ‘প্রিয়তমা’ হিট হয়ে গেল। শাকিব মত পাল্টালেন, পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিলেন। আগের চূড়ান্ত করা পারিশ্রমিকেও এখন কাজ করতে চাইছেন না। এখন তাঁকে নিয়ে কাজ করতে হলে আগের ৪০ লাখের সঙ্গে অযৌক্তিকভাবে আরও ৬০ লাখ দিতে হবে।, মোট এক কোটি। কিন্তু আমরা যখন তাঁর সঙ্গে কাজের ব্যাপারে চূড়ান্ত করি, তখন যে পারিশ্রমিক ছিল, সেটি দিয়েই তাঁকে চূড়ান্ত করেছিলাম।’
এই পরিচালক আফসোস করে আরও বলেন, ‘এখন নতুন কোনো ছবিতে চুক্তি করতে সে এক কোটি বা দুই কোটি নিতেই পারেন। সেটি তাঁর একান্ত নিজের ব্যাপার। কিন্তু আমরা তো আগের পারিশ্রমিকে চূড়ান্ত করেছি তাঁকে। এখন শাকিব আমাদের ছবির টিমের সঙ্গে এই দাবি করতে পারেন না। এটি তাঁর নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। কমিটমেন্ট ঠিক না থাকলে তো হবে না। এটি অন্যায়।’

শাকিবের কাছে প্রশ্ন রেখে পরিচালক বদিউল আলম বলেন, ‘যদি ‘প্রিয়তমা’ হিট না হতো তাহলে কি তাঁকে দেওয়া চল্লিশ লাখ থেকে ২০ লাখ প্রযোজককে ফেরত দিতেন শাকিব?’ এ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে সোমবার সাড়ে চারটার দিকে প্রথম আলো থেকে মুঠোফোনে একাধিকবার শাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, ফোন ধরেননি ঢাকাই ছবির এই নায়ক।

২০০৪ সালে ধর শয়তান ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বদিউল আলমের পরিচালনায় প্রথম কাজ করেন শাকিব খান
কোলাজ

পরিচালক বদিউল আলমের সঙ্গে জুটি হিসেবে শাকিব খানের বেশ কিছু ছবি করেছেন। ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’, ‘নিঃশ্বাস আমার তুমি’, ‘ভালোবেসে মরতে পারি’, ‘একবার বলো ভালোবাসি’, ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’, ‘বস নম্বর ওয়ান’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘নিষ্পাপ মুন্না’, ‘ডন নম্বর ওয়ান’, ‘হিরো; দা সুপারস্টার’, ‘রাজা বাবু’সহ ডজনেরও বেশি হিট ছবি উপহার দিয়েছেন এই জুটি।

‘ভালোবেসে মরতে পারি’ সিনেমার পোষ্টার

স্মৃতিচারণ করেন বদিউল আলম বলেন, ‘এক সময় শাকিব খানের সঙ্গে অনেক ভালো ভালো ছবি করেছি। অনেক দিন পর একটা কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর কারণে সেটি হলো না। শাকিব খানের সঙ্গে আর কাজ করছি না। সমস্যা নাই। কারণ কারোর জন্য কেউ তো বসে থাকে না। নতুন ছেলে মেয়ে নিয়ে আরেকটি কাজ হাতে নিয়েছি। শুটিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

আরও পড়ুন