সমাজকে বোঝার জন্য তারেক মাসুদ গুরুত্বপূর্ণ
প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদকে নিয়ে ‘মনীষী স্মরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ।
রোববার বিকেলে জাতীয় নাট্যশালা ভবনের সেমিনার হলে এই অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রাবন্ধিক আ–আল মামুন। সভাপতিত্ব করেন কবি ও প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
অনুষ্ঠানে তারেক মাসুদকে নিয়ে রচিত ‘তারেক মাসুদ ও তাঁর চলচ্চিত্রের প্রাসঙ্গিকতা—আজ’ শিরোনামে প্রবন্ধ পাঠ করেন আ-আল মামুন। প্রবন্ধে তারেক মাসুদের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন তিনি। আ–আল মামুন বলেন, ‘তারেক মাসুদকে নিয়ে আমার চিন্তাভাবনার রিফ্লেকশন (প্রতিফলন) এই প্রবন্ধে পাবেন।’ প্রবন্ধে সেক্যুলার বনাম ধর্মান্ধতা, নেশন-স্টেটের ধারণা, ভাববাদ নিয়ে তারেক মাসুদের ভাবনাকে তুলে এনেছেন আ–আল মামুন।
প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন তিন আলোচক; তাঁরা হলেন শব্দগ্রাহক ও তারেক মাসুদের সহোদর নাহিদ মাসুদ, চিত্রসমালোচক সাদিয়া খালিদ ঋতি ও নির্মাতা অন্তু আজাদ।
নাহিদ মাসুদ বলেন, ‘তারেক (মাসুদ) ভাইয়ের জার্নিটা অনুকূলে ছিল না। প্রতিকূলে যাত্রা করেছেন তারেক ভাই। তারেক ভাই বলতেন, এটা খুবই অসম একটা যুদ্ধ। মুক্তির গান নিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। রাষ্ট্র বনাম ব্যক্তি।’
নাহিদ মাসুদ জানান, ছবিটি মুক্তির পর ঢাকায় পাবলিক লাইব্রেরিতে মাসখানেক ধরে চলেছিল। ছবিটি দেখতে দর্শকেরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। এর মধ্যে ছবিটি নিষিদ্ধের চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন ভোরের কাগজ-এ বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশের পর সেদিনের সব পত্রিকা গায়েব করে দেওয়া হয়েছিল।
তারেক মাসুদ আরও কয়েকটি সিনেমা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে করে যেতে পারেননি বলে জানান নাহিদ।
সাদিয়া খালিদ ঋতি বলেন, ‘আমাদের জেনারেশনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তারেক মাসুদ। ওনার সিনেমায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, ওই সময় অন্য কারও সিনেমায় কেমন কিছু পাইনি আমরা। উনি আমাদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন।’
আরেক আলোচক নির্মাতা অন্তু আজাদ বলেন, ‘আমরা ফেস্টিভ্যালে সিনেমা পাঠাতে গিয়ে কোনোটা কোরিয়ান সিনেমা, কোনোটা আবার ইরানের মতো সিনেমা বানাচ্ছি। সেটা না করে আমাদের নিজেদের সিনেমা বানানো উচিত।’ তারেক মাসুদের দেখানো পথ ধরে নিজেদের সিনেমা নির্মাণের তাগিদ দেন এই তরুণ নির্মাতা।
প্রবন্ধের সূত্র ধরে সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর সাংস্কৃতিক জায়গায় ভালো-মন্দ দুই রকমই ঘটছে। সেখানে তারেক (মাসুদ) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি, আমাদের সমাজ, সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য। ইতিহাসের কতগুলো প্রশ্ন আছে, যেমন সেক্যুলার বনাম ধর্মান্ধতা, নেশন-স্টেটের ধারণা, ভাববাদ নিয়েও তিনি কথা বলেছেন।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। এতে তারেক মাসুদকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।