শাকিবের ‘বরবাদ’ সিনেমার আয় ১০০ কোটি টাকা হতে পারে যেভাবে
ঈদের সিনেমার মধ্যে ব্যবসায়িক দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করে আলোচনায় রয়েছে শাকিব খানের ‘বরবাদ’। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, মুক্তির সাত দিনে টিকিট বিক্রি থেকে সিনেমাটির আয় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা। এই আয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ধারণা, সিনেমাটি ঢালিউডে মাইলফলক হয়ে থাকবে। তাদের প্রত্যাশা, শিগগিরই সিনেমা শত কোটি টাকা আয়ের পথে হাঁটবে। এই আয় আদৌ সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন, সিনেমাটি শত কোটির লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। কোন পথে বরবাদ শত কোটি আয় করতে পারে?
হলিউড বা বলিউডে ১০০ কোটি আয় করা আহামরি কোনো ব্যাপার নয়। একের পর এক দেশ–বিদেশের সিনেমাগুলো শত শত কোটি টাকা আয় করে রেকর্ড গড়ছে। অন্যদিকে বাংলা সিনেমার কত টিকিট বিক্রি হলো, সেই হিসাব পাওয়াই কঠিন। এখন পর্যন্ত সর্বাধিক সিনেমায় আয় কত, সেটা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। সেখানে কোনো হিসাবে ‘বরবাদ’ ১০০ কোটির ক্লাবে পা দেবে?
ঈদে সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১২৩টি সিনেমা হলে চলছে ‘বরবাদ’। সেখানে মাল্টিপ্লেক্স থেকে সঠিক হিসাব পেলেও সিঙ্গেল হল থেকে সঠিক হিসাব পাচ্ছেন না বলে জানালেন প্রযোজক শাহরিন আক্তার। এরপরও তিনি জানালেন, তাঁদের সিনেমাটি শত কোটি টাকা আয় করতে পারে।
কীভাবে এই আয় আসবে, এ প্রসঙ্গে প্রযোজক বলেন, ‘আমাদের সিনেমার এখনো তুমুল চাহিদা। দিন দিন সিনেমার দর্শক বাড়ছে। কিন্তু সেই অর্থে আমাদের শো বাড়ানো হচ্ছে না। সঠিকভাবে আমাদের সিনেমাকে মূল্যায়ন করলে এই আয় বাড়বে। বাংলাদেশের সিনেমার মধ্যে নতুন রেকর্ড গড়বে। আমাদের অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে যে শত কোটি পার করতে খুব বেশি সময় লাগবে না।’
এই সময় তিনি শত কোটি টাকা আয়ের একটি চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, বর্তমান সাত দিনে সিনেমাটির গ্রস কালেকশন সাড়ে ২৭ কোটি টাকা। পরে গত চার দিনে আয় কম হলেও ১০ কোটির বেশি। তাহলে এই অঙ্ক দাঁড়ায় ৩৭ কোটি টাকা। আগামী সপ্তাহে মাল্টিপ্লেক্সে হাউসফুল গেলে সেখানে থেকেও বড় অঙ্কের টাকা আসবে। এর সঙ্গে যোগ হবে সিঙ্গেল স্ক্রিনের আয়। আগামীকাল ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঠিকঠাক শো পেলে আয় হতে পারে আরও ১৫ কোটি টাকার বেশি; যা সব মিলিয়ে দাঁড়ায় ৫২ কোটি টাকা।
কীভাবে এই আয়ের হিসাব করেছেন, এমন প্রশ্নে শাহরিন বলেন, ‘মাল্টিপ্লেক্সের হিসাব পাওয়া সহজ। শোর সংখ্যা হাউসফুল দিয়েই জানা যায়, কত টাকা আয় করল। তা ছাড়া কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো হিসাব দেয়। অন্যদিকে সিঙ্গেল হলে তো আমাদের লোক আছে। এ ছাড়া হল থেকে একটা হিসাব দেয়। যদিও সেটা কম। সেই হিসাব থেকেই আমরা তথ্য পেয়েছি। আমাদের তো বক্স অফিস নেই, কর্তৃপক্ষ যা বলবে, সেটার ওপরেই নির্ভর করতে হবে। সেভাবেই আয়ের হিসাব করা। যদিও সেটা বাস্তবে আরও অনেক বেশি।’
আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত যদি ৫০ কোটি টাকার বেশি আয় হয়, তাহলে বাকি ৫০ কোটি টাকা কীভাবে আসবে? প্রযোজক বলেন, ‘সিঙ্গেল প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ঈদের সিনেমা হিসেবে দেওয়া রয়েছে। পরে নতুন করে আবার সিনেমাটি বহুসংখ্যক সিনেমা হলে চলবে। সেসব নিয়ে এখনই কথা হচ্ছে। অন্যদিকে দর্শকদের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, সেখানে শুধু মাল্টিপ্লেক্সে আগামী কোরবানি ঈদ পর্যন্ত চললেই আমাদের সিনেমার ১০০ কোটি টাকা আয় হয়ে যাবে। আমাদের হাতে এখনো দেড় থেকে দুই মাস রয়েছে। এর মধ্যে তিন সপ্তাহ টানা হাউসফুল গেলেই সম্ভাবনার দুয়ারে পৌঁছে যাব।’
এর সঙ্গে প্রযোজক যোগ করলেন, তাঁদের সিনেমাটি বড় পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মুক্তি পাবে। পরবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে মুক্তি পাবে। বিদেশের এই বাজার থেকে তারা ১০-১৫ কোটি টাকা আয় করতে চান। এ জন্য ‘বরবাদ’কে আয় করতে হবে প্রায় ১০ লাখ ডলার। এর আগে বিদেশের বাজার থেকে সর্বাধিক আয় করা সিনেমাটি ছিল ‘হাওয়া’। প্রায় ৪ লাখ ডলার আয় করে সিনেমাটি।
সিনেমাটির আয় প্রসঙ্গ নিয়ে মাল্টিপ্লেক্সের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের বাজার থেকে ‘বরবাদ’–এর ১০০ কোটি টাকা আয় সম্ভব? ইতিবাচক উত্তর দিলেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে “বরবাদ”–এর সেল হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা যদি টানা তিন থেকে চার সপ্তাহ চলে, তাহলে বাংলাদেশের সিনেমায় ইতিহাসে, ছোট ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে বিশাল অর্জন হয়ে দাঁড়াবে। শত কোটি টাকা আয় অসম্ভব নাও হতে পারে। তবে এখন দর্শক গতানুগতিক থাকলেও এর আয় ৬০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।’
এদিকে স্টার সিনেপ্লেক্সের অনলাইন সাইট থেকে দেখা যায়, সিনেমাটির শোর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। হলিউড সিনেমাকে সরিয়ে সেখানে জায়গা দেওয়া হয়েছে দেশের ‘বরবাদ’কে। সিনেমাটির শোর সংখ্যা ৩৪ থেকে বাড়িয়ে ৪১টি করা হয়েছে।
সিনেমার পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, বাণিজ্যিক এ সিনেমা দর্শক গ্রহণ করেছেন। এটা যেমন অ্যাকশননির্ভর, তেমনই রয়েছে রোমান্স। একটি সামাজিক বার্তা দেওয়া হয়েছে। সিনেমার একাধিক ডায়ালগ দর্শকদের মুখে মুখে। এসব কারণেই তিনি মনে করেন সিনেমাটি আরও বিপুল পরিমাণ দর্শকের কাছে পৌঁছাবে।
শত কোটি টাকা আয়ের হিসাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা শত কোটি টাকার ব্যবসা করবে, সেই আস্থা দর্শকদের কাছ থেকে পেয়েছি। আমরা মাল্টিপ্লেক্স ও সিঙ্গেল হল, সিনেমার কপিরাইট, ওটিটি ও বিদেশের বাজার থেকে শত কোটি আয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’