ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাস করা মেজবাউর রহমান সুমন শুরুর দিকে ব্যান্ড সংগীত করতেন। এরপর নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণে জড়ান। দুই মাধ্যমে কাজ করে হাত পাকিয়ে আসেন চলচ্চিত্রে। প্রথম চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’ দিয়েই বাজিমাত। দর্শকেরা এ ছবিকে দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন। সুমন তাঁর পরিচালিত ‘হাওয়া’ দিয়ে দেশ–বিদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে নতুন হাওয়া বইয়ে দিয়েছেন বলে সবার অভিমত। প্রেক্ষাগৃহে এ চলচ্চিত্র দেখতে দেশের দর্শক যেমন টিকিট–সংকটে পড়েছেন, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষাগৃহেও অগ্রিম টিকিট বিক্রির খবর পাওয়া গেছে।
সুমনের মতো এ বছর আরও কয়েকজনের চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে কেউ লম্বা সময় ধরে প্রতিষ্ঠিত কোনো পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন, কেউ আবার নাটক আর বিজ্ঞাপনচিত্র বানিয়ে এসেছেন। কাজ করতে করতে একদিন স্বপ্নের বড় পর্দায় নির্মাতা হিসেবে অভিষেক। বছর শেষ হতে হতে আরও কয়েকজনের অভিষেক হতে চলেছে।
প্রথম ছবি বানানো কারও কাছে আবার শিক্ষণীয় একটা ব্যাপার। যেমন ‘হাওয়া’ মেজবাউর রহমান সুমনের কাছে। তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক নির্মাতার প্রথম ছবিটি তার লেসন। আমি তো কোনো ফিল্ম স্কুল থেকে পড়িনি। আমি আসলে সিনেমা বানাতে বানাতে সিনেমা বানানো শিখব। ওটাই হয়েছে। ‘হাওয়া’ আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, সিনেমা বানানোর সময়টা বেশি উপভোগ করেছি। স্ক্রিপ্ট যখন লিখেছি, তখন ছিল আমার জীবনের সুন্দর সময়। শুটিং ও এডিটিংয়ের সময়টাও দারুণ।’
চার বছর নাটক বানিয়েছেন সুমন। ২০১০ সালে তা বন্ধ করে দেন। তবে এই নাটক বানানোর ব্যাপারটাও ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল আয়ত্ত করার একটা উপায়। কথায়–কথায় জানিয়ে রাখলেন, পরের ছবি বানাতে খুব বেশি সময় নেবেন না। পরিকল্পনা শুরুও করে দিয়েছেন। আগামী বছর তাঁর নতুন ছবির ঘোষণা আসবে।
আগামী শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ‘বিউটি সার্কাস’। এ চলচ্চিত্র দিয়ে মাহমুদ দিদারেরও বড় পর্দায় নির্মাতা হিসেবে অভিষেক ঘটছে। প্রথম ছবি মুক্তির আগে একসময়কার নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা মাহমুদ দিদারের অনুভূতি, ‘ভীষণভাবে উত্তেজনা কাজ করছে। ছবিপ্রেমীরা আমাকে আশাবাদী করে তুলছে।’
‘বিউটি সার্কাস’ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। দেশসেরা এই অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে জীবনের প্রথম নাটক বানান মাহমুদ দিদার। শুধু কি তা–ই, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নাটকের শিল্পীও ছিলেন জয়া। তখন থেকেই মনে মনে চূড়ান্ত করেছিলেন, প্রথম সিনেমাও তাঁকে নিয়েই বানাবেন।
দিদার প্রথম নাটক বানান ২০১১ সালে, নাম ‘আগামাসী লেনের সন্ধ্যায় জয়লতার কাছে কোনো এক আগন্তুক’। প্রথম ছবিতে জয়া আহসানকে রাখার কারণ হিসেবে দিদার বললেন, ‘একজন শিল্পী কতটা কাজে নিমগ্ন থাকতে পারেন, জয়া আহসানের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি। আর এভাবে যখন একজন শিল্পী কাজ করেন, তখন পরিচালক ক্রমে আরও ভালো পরিচালক হয়ে ওঠেন।’
বছরের শেষ দিকে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটতে পারে নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা তপু খানের। তিনি ৩৫০ টির বেশি নাটক আর বিজ্ঞাপনচিত্র বানিয়েছেন ডজনখানেকের বেশি। প্রথম থেকে ইচ্ছা ছিল তরুণ্য, রাজনীতি, দেশপ্রেম—এমন সব বিষয় নিয়েই আবর্তিত হবে তাঁর প্রথম ছবির প্লট। আর সেটিতে নায়ক হিসেবে শাকিব খানকেই চাইবেন। হয়েছেও তা–ই, ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে তিনি পেয়েছেন শাকিব খানকে। নভেম্বরে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা, জানালেন তপু খান।
এ বছরের ঈদুল ফিতরে ‘শান’ ছবি দিয়ে পরিচালক হিসেবে এম রাহিমের অভিষেক হয়। এ ছবি বানানোর আগে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। যেসব ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্রেম কয়েদী’, ‘নবাব’, ‘ইয়েতি অভিযান’, ‘নূরজাহান’, ‘প্রেম আমার টু’, ‘রাজত্ব’, ‘জান আমার জান’। প্রথম ছবি ‘শান’ দিয়ে বাজিমাত করেছেন এম রাহিম। ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে ছিল উপচে পড়া ভিড়। রাহিম বললেন, ‘প্রথম ছবিটি যেভাবে বানাতে চেয়েছি, সেভাবে সন্তুষ্টি নিয়ে বানিয়েছি। তবে আরও ভালো করতে পারতাম। পরের ছবির প্রস্তুতি নিচ্ছি, সামনে আরও ভালো করার চেষ্টা থাকবে।’
মার্চে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র ‘মুখোশ’। নিজের লেখা উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র বানিয়ে বড় পর্দার নির্মাতা হয়ে সবার সামনে এসেছেন ইফতেখার শুভ। ২০১১ সালে যখন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছেন, তখনই প্রথম নাটক বানান তিনি। এরপর ধারাবাহিক, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, গানের ভিডিও বানিয়েছেন তিনি। শুভ বললেন, ‘লেখালেখি করতাম। একটা সময় নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। শুরুতে নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র বানাই। অভিজ্ঞতা বাড়লে সিনেমা। প্রথম সিনেমা মুক্তির পর সবার কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছি। সংলাপের জন্য আলাদাভাবে সবাই প্রশংসা করেছে।’ ‘মুখোশ’ ছবির এই পরিচালক জানিয়ে রাখলেন, দ্বিতীয় ছবির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই ছবির নাম ঘোষণা আসবে।
এ বছরের জুনে মুক্তি পেয়েছে ইমন ও মম অভিনীত চলচ্চিত্র ‘আগামীকাল’। এই ছবিটি পরিচালনা করেন অঞ্জন আইচ। এই পরিচালক দীর্ঘ সময় ধরে একক নাটক ও ধারাবাহিক বানিয়েছেন। এর মধ্যে এক ঘণ্টার নাটক ২৬৭টি। আর ধারাবাহিক নাটক ১৫টি। ‘আগামীকাল’ চলচ্চিত্র দিয়ে বড় পর্দার পরিচালক হিসেবে অঞ্জন আইচকে পাওয়া গেছে। তাঁর পরিচালিত আরও দুটি চলচ্চিত্র ‘কানামাছি’ ও ‘আবার ফিরব’ মুক্তির অপেক্ষায়। অঞ্জন আইচ বললেন, ‘নিয়মিতভাবে চলচ্চিত্রই বানাতে চাই। তবে বিশেষ দিবসে নাটকও বানাতে হচ্ছে।’
কিছুদিন আগে ‘বীরত্ব’ চলচ্চিত্র দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক ঘটেছে সাইদুল ইসলাম রানার। জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র দিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি ঘটেছে তাঁর।