ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্য উদ্বিগ্ন শিল্পীরা, সুস্থতা কামনায় দোয়া
তাঁর জীবনের গল্পটি ফিল্মি। পর্দায় অনেক সময় যেমন দেখা যায়। তিলে তিলে গড়ে ওঠেন গল্পের নায়ক। ইলিয়াস কাঞ্চন তেমন সত্যিকারের নায়ক। দিনের পর দিন সংগ্রাম করে, শিখে, বুঝে, শুনে তিনি নায়ক হয়েছেন। সামাজিক চলচ্চিত্রে তাঁকে যেমন মানিয়ে যায়, তেমনি লোকগল্প, রোমান্টিক—এমনকি অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্রে নানা সময়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তাঁর শুরু করা আন্দোলন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। সেই প্রিয়মুখ ইলিয়াস কাঞ্চন গুরুতর অসুস্থ। তিনি ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। তিনি সাত মাস ধরে অসুস্থ। ছয় মাস ধরে লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন সহশিল্পীরা। শিল্পীরা কেউ বিশ্বাস করতে পারছেন না—সবারই অনুপ্রেরণার মানুষ আজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাই ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষী থেকে শুরু করে সহশিল্পীরা সবাই এক সুরে প্রার্থনা করছেন তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য।
রোববার ৫ অক্টোবর বিকেলে এফডিসিতে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে এক বিশেষ দোয়া–মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের উদ্যোগে আয়োজিত এই দোয়ায় শিল্পীরা হাত তুলে প্রার্থনা করেন, প্রিয় সহকর্মী ইলিয়াস কাঞ্চন আবারও যেন সুস্থ হয়ে তাঁদের মধ্যে ফিরে আসেন। সভায় মিশা সওদাগর বলেন, ‘ইলিয়াস কাঞ্চন শুধু আমাদের চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র নন, তিনি সচেতন নাগরিক, সমাজকর্মী এবং আমাদের সবার প্রেরণা। তাঁর অসুস্থতার খবর শুনে আমরা ভীষণভাবে ব্যথিত। আজ আমরা সবাই মিলে দোয়া করেছি—আল্লাহ যেন তাঁকে দ্রুত আরোগ্য দান করেন। তিনি সুস্থ–স্বাভাবিক হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আবার কাজ শুরু করবেন।’
মিশা আরও জানান, প্রায় ১০ দিন আগে অভিনেত্রী রোজিনার কাছ থেকে প্রথম কাঞ্চনের অসুস্থতার খবর পান তিনি। তখন পরিবারের অনুরোধে বিষয়টি প্রকাশ করেননি, তবে অন্তর থেকে তাঁর জন্য দোয়া করেছেন। পরে কাঞ্চনের পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসার খবর জানালে সমিতির পক্ষ থেকে দোয়া–মাহফিলের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দোয়া–মাহফিলে উপস্থিত শিল্পীরাও আবেগাপ্লুত হয়ে কাঞ্চনের দীর্ঘায়ু কামনা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রোজিনা, জয় চৌধুরী, ডি এ তায়েবসহ আরও অনেকে।
বর্তমানে ইলিয়াস কাঞ্চন লন্ডনের হার্লি স্ট্রিট ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। আগস্টে লন্ডনের উইলিংটন হাসপাতালে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়, টিউমারের কিছু অংশ অপসারণ করা হয়। পুরো টিউমার অপসারণ করা সম্ভব হয়নি ঝুঁকির কারণে। এখন তিনি রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি—‘টার্গেট থেরাপি’ নিচ্ছেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন করে ছয় সপ্তাহ এই চিকিৎসা চলবে। এরপর চার সপ্তাহ তাঁকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে।
ইলিয়াস কাঞ্চনের ছেলে ও নিসচার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মিরাজুল মইনও দেশবাসীর কাছে তাঁর বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। আর ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিশ্বাস করছেন, এই লড়াই জিতে অভিনেতা আবারও ফিরবেন সবার মধ্যে।