প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিলেন শিল্পীরা

গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয়ীদের হাতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে পুরস্কার পাওয়া শিল্পী–কলাকুশলীদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন তিনি।ছবি: বাসস

দুই সপ্তাহ আগে ২০২২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ও কলাকুশলীরা অপেক্ষায় ছিলেন, কবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করবেন। মঙ্গলবার ছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালক, নায়ক, নায়িকাসহ শিল্পী ও কলাকুশলীরা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৭ বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২২ প্রদান করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে আজীবন সম্মাননার পদক গ্রহণ করছেন অভিনেত্রী রওশন আরা রোজিনা। ছবিতে আরও আছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
ছবি: বাসস

এ বছর যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন কামরুল আলম খান খসরু ও রোজিনা। দেশে না থাকায় খসরুর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন চিত্রনায়ক আলমগীর। এদিকে পুরস্কার গ্রহণ শেষে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে রোজিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশে এফডিসি প্রতিষ্ঠাসহ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যার ফলে আমরা অনেকেই কাজের সুযোগ পেয়েছি, আমি আপনাদের রোজিনা হতে পেরেছি। এই পুরস্কার পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমার দীর্ঘ পথচলায় যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, পরিচালক, প্রযোজক, সহকর্মী, সাংবাদিক ও দর্শক সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার পুরস্কার তাঁদের সবার প্রতি উৎসর্গ করলাম।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হুমায়ুন কবির খন্দকার।

‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’, ‘প্রিয়তমেষু’র মতো প্রশংসিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি। এই প্রতিটি সিনেমা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে, তবে মিমি পাননি। চলচ্চিত্রে তিন দশকের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন আফসানা মিমি। নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘পাপ পুণ্য’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। মিমি বলেন, ‘জীবনে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম, খুব ভালো লেগেছে। সিনেমাটি আমার খুব প্রিয়, প্রিয় কাজ নিয়ে পুরস্কার পেলে ভালো লাগে।’

হালের আলোচিত অভিনেতা নাসির উদ্দিন খানও প্রথমবার পুরস্কার পেলেন, ‘পরাণ’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন তিনি। যেদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন, সেদিন ছিল তাঁর বিয়ের ২২তম বছর। বিবাহবার্ষিকীর দিনে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার প্রসঙ্গে এই অভিনেতা বলেন, ‘এটা কাকতালীয়। বিষয়টি নিয়ে সকালে কথা বললাম স্ত্রীর সঙ্গে। দুই সন্তান নিয়ে সে চট্টগ্রামে থাকে। আমি বলেছি, তুমি আছ বলেই সব সম্ভব। আর বিবাহবার্ষিকীর দিন পুরস্কার হাতে পাচ্ছি, এটা আনন্দের।’

পুরস্কার প্রদান ও বক্তব্য শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পর্ব। চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার উপস্থাপনায় বেশ কয়েকটি গানের সঙ্গে মঞ্চে নেচেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ, অপু বিশ্বাস, তমা মির্জা, সোহানা সাবা, পূজা চেরি, সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, আঁচল, নুসরাত ফারিয়া, আদর আজাদ, দীঘি প্রমুখ। গান শুনিয়েছেন মমতাজ, বালাম ও কোনাল, কনা ও ইমরান, সাব্বির ও লিজা, ঐশী প্রমুখ। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলছিল।

যাঁরা পেলেন পুরস্কার


আজীবন সম্মাননা

খসরু ও রোজিনা


শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: যৌথভাবে কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া ও পরাণ
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: ঘরে ফেরা
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক: সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন শিমু
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা: চঞ্চল চৌধুরী
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী: যুগ্মভাবে জয়া আহসান বিউটি সার্কাস, রিকিতা নন্দিনী শিমু শিমু
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা: নাসির উদ্দিন খান পরাণ
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী: আফসানা মিমি পাপ পুণ্য
শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা: সুভাশীষ ভৌমিক দেশান্তর
শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা: দীপু ইমাম অপারেশন সুন্দরবন
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: যুগ্মভাবে বৃষ্টি আক্তার রোহিঙ্গা ও মুনতাহা এমিলিয়া বীরত্ব
শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার: ফারজিনা আক্তার কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: রিপন খান, ‘পায়ের ছাপ’
শ্রেষ্ঠ গায়ক: যুগ্মভাবে বাপ্পা মজুমদার অপারেশন সুন্দরবন ও চন্দন সিনহা হৃদিতা
শ্রেষ্ঠ গায়িকা: আতিয়া আনিসা, ‘পায়ের ছাপ’
শ্রেষ্ঠ গীতিকার: রবিউল ইসলাম জীবন পরাণ
শ্রেষ্ঠ সুরকার: শওকত আলী ইমন, ‘পায়ের ছাপ’
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: ফরিদুর রেজা সাগর দামাল ও খোরশেদ আলম গলুই
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: মুহাম্মদ আব্দুল কাইউম কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: এস এ হক অলিক গলুই
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: সুজন মাহমুদ শিমু
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: হিমাদ্রি বড়ুয়া রোহিঙ্গা
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: আসাদুজ্জামান মজনু রোহিঙ্গা
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ হাওয়া
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: তানসিনা শাওন শিমু
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান: খোকন মোল্লা অপারেশন সুন্দরবন