যে কারণে বাবার জন্মদিনে কালো রঙের কেক বানিয়েছিলেন সোহেল চৌধুরীর মেয়ে

লামিয়া কেকটি বানিয়েছিলেন বাবার স্মরণে। ছবি: কোলাজ

আজ ১৯ অক্টোবর প্রয়াত নায়ক সোহেল চৌধুরীর জন্মদিন। ১৯৬৩ সালে আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে ছবি দিয়ে স্মরণ করছেন তাঁকে। অনেকে আবার তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা করছেন। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি স্ত্রী চিত্রনায়িকা দিতি এবং দুই সন্তান রেখে যান। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ না–ফেরার দেশে চলে যান দিতিও। তারকা দম্পতির দুই সন্তান লামিয়া ও দীপ্তর স্মৃতিতে প্রতিদিনই নানাভাবে ফিরে আসেন স্মৃতিতে। সেই স্মৃতি কখনো মনটা ভালো করে দেয়, হাসায়, কখনো ভীষণ মন ভার করে দেয়।
২০২০ সালে লামিয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর কেক কেটে বাসায় বাবাকে স্মরণ করেছেন প্রয়াত নায়কের মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। বাবা কী কেক পছন্দ করতেন, সেটা জানতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিলেন লামিয়া। বাবার পরিচিত অনেকেই সাড়া দিয়েছেন। জানিয়েছেন বাবার পছন্দের কেকের কথা। নিজের হাতে সেই কেক তৈরি করেছেন লামিয়া।

লামিয়া চৌধুরীর শখ রান্না করা। ভালো কেক বানাতে পারেন তিনি। পরিচিত ঘনিষ্ঠজনেরা চাইলেই তাঁদের কেক বানিয়ে দেন তিনি। নানাজন নান রকম কেক ভালোবাসেন। তাঁদের চাহিদামতো কেক বানাতে বানাতে একদিন মনে হলো, বাবার পছন্দের কেক বানাবেন তিনি। ফেসবুকে সেই ইচ্ছার কথাই জানিয়েছিলেন।

বাবা মা ও ভাইয়ের সঙ্গে লামিয়া চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া প্রসঙ্গে লামিয়া বলেন, ‘বাবা কী কেক পছন্দ করতেন, সেটা জানার জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই। পরে বাবার পরিচিত ও কাছের মানুষদের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, বাবা চকলেট কেক পছন্দ করতেন। সেটা জানার পর বাবার পছন্দের সেই কেক আমি নিজ হাতে বানিয়েছি।’ কেকটা কাটার সময় বেশ মন খারাপ ছিল লামিয়ার। বাবার জন্য বানানো সেই কেকে কিছুই লেখেননি তিনি। আর সেই কেকটি ছিল কালো রঙের।
শৈশব থেকে বাবাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা এখনো লামিয়াকে কাঁদায়। তিনি বলেন, ‘বাবা যখন মারা যান, তখন আমি অনেক ছোট। সেই সময় বাবা কী খেতে পছন্দ করতেন, কী কী করতেন, সেসবের অনেক কিছুই আমার মনে নেই। বাবাকে এখনো খুব মিস করি। বাবার জন্য খুব কষ্ট হয়। বাবার কথা যখন মনে পড়ে, তখন প্রবল দুঃখবোধ আমাকে গ্রাস করে। সেই দুঃখবোধ থেকেই বাবার জন্মদিনে কালো রঙের কেক বানিয়েছি।’

নতুন মুখ থেকে প্রতিষ্ঠিত নায়ক

সোহেল চৌধুরী অভিনয়ের পাশাপাশি গানও গাইতেন তিনি। গিটার বাজানো ছিল তাঁর শখ। ১৯৮৪ সালে অভিনেতা খুঁজে বের করার প্রতিযোগিতা

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী
ফাইল ছবি

‘নতুন মুখের সন্ধানে’ আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা। এতে বিজয়ী হয়ে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন সোহেল চৌধুরী, পারভীন সুলতানা দিতিসহ আরও বেশ কয়েকজন তরুণ। সহকর্মী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা সোহেল-দিতির মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। এফ কবীর চৌধুরীর পরিচালনায় সোহেল-দিতি অভিনয় করেছিলেন ‘পর্বত’ ছবিতে। এ ছবিতে অভিনয় করে আলোচিত হন তাঁরা দুজন। জুটি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয় তাঁদের। পরে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘হীরামতি’ ছবিতে অভিনয় করেন তাঁরা।

সোহেল চৌধুরী, লামিয়া ও দিতি। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। এ জুটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, একপর্যায়ে তাঁরা বিয়ে করেন। ১৯৮৭ সালে এ দম্পতির সংসারে জন্ম নেন মেয়ে লামিয়া চৌধুরী এবং ১৯৮৯ সালে ছেলে দীপ্ত। সোহেল চৌধুরীর ক্যারিয়ারে ছবির সংখ্যা ৩০। উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো ‘পর্বত’, ‘খুনের বদলা’, ‘লক্ষ্মী বধূ’, ‘হীরামতি’, ‘আমার ভালোবাসা’, ‘প্রেমের প্রতিদান’, ‘কালিয়া’, ‘প্রতিশোধের আগুন’, ‘হিংসার আগুন’, ‘চিরদিনের সাথী’, ‘অবরোধ’, ‘দাঙ্গা ফ্যাসাদ’, ‘প্রেমের দাবি’, ‘প্রিয় শত্রু’, ‘ভাই বন্ধু’, ‘দোষী’, ‘লেডি ইন্সপেক্টর’, ‘পাপী শত্রু’, ‘আজকের হাঙ্গামা’, ‘বিরহব্যথা’, ‘জুলি’, ‘মহান বন্ধু’ ইত্যাদি।

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দুইটার দিকে বনানীর একটি ক্লাবের পাশে খুন হন সোহেল চৌধুরী।

লামিয়া চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক

এ ঘটনায় তাঁর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা-কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে সোহেল তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় ভেতরে ঢুকতে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান।