জেনেভা ক্যাম্পে মানবেতর জীবন কাটছে ৭০০ সিনেমার অভিনেতা ফকিরার

ইসমাইল হোসেন ফকিরার সঙ্গে সনি রহমানছবি : সনির সৌজন্যে

নায়ক–নায়িকার প্রেমকাহিনিতে উত্তেজনা বাড়াতে পর্দায় হাজির হতেন যিনি, সেই পরিচিত মুখ ইসমাইল হোসেন, যিনি সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ফকিরা নামে পরিচিত। ফকিরা আজ বাস্তব জীবনে এক নির্মম গল্পের নায়ক। বাংলা সিনেমার পর্দায় যিনি ৭০০টির বেশি ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি রাজ্জাক–আলমগীর থেকে শুরু করে সালমান শাহ, রিয়াজ, মান্না ও শাকিব খান—সব প্রজন্মের নায়কদের সঙ্গী ছিলেন, সেই ফকিরা আজ প্রায় বাক্শক্তিহীন।

৬৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা তিনবার স্ট্রোক করার পর থেকে শয্যাশায়ী। এক বছর ধরে তিনি প্রায় কথা বলতে পারেন না। চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝরে, মাঝেমধ্যে শিশুর মতো কিছু অস্পষ্ট আওয়াজ করেন। তবু মানুষের মুখ চিনতে পারেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সনি রহমান সম্প্রতি ফকিরার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে।

ইসমাইল হোসেন ফকিরার সঙ্গে সনি রহমান
ছবি : সনির সৌজন্যে

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘ফকিরা ভাইকে দেখে মনটা ভেঙে গেল। একসময় যিনি মোটরসাইকেলে এফডিসিতে ঘুরে বেড়াতেন, তিনি এখন বিছানায় পড়ে আছেন। কথা বলতে পারছেন না। মিশা ভাইকে ভিডিওকলে চিনতে পেরেছেন, হাত নাড়িয়েছেন—এটাই এখন সবচেয়ে বড় স্বস্তি।’

একসময় রেস্তোরাঁ ব্যবসা ছেড়ে অভিনয়ে ঝুঁকে পড়েছিলেন ফকিরা। অভিনয়ের পাশাপাশি ফাইটার হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল। তাঁর সাদা মোটরসাইকেলটি একাধিক সিনেমায় ব্যবহার করেছিলেন সালমান শাহ—এমন কথাও সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে প্রচলিত। সেই ব্যস্ত অভিনেতা করোনার পর থেকেই সিনেমা থেকে একেবারে দূরে সরে যান। মূলত সেই সময় থেকে অসহায় জীবনযাপন করছেন তিনি।

ফকিরার স্ত্রী, এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তান রয়েছে। চিকিৎসা ও সংসারের খরচ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারকে। চিকিৎসার জন্য ঢাকার একাধিক হাসপাতালে তাঁকে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু খুব বেশি উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে বলে জানালেন সনি রহমান। তিনি বলেন, ‘সমিতির সর্বশেষ সভায় ফকিরা ভাইয়ের চিকিৎসা ও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাঁর পাশে দাঁড়াতে।’

খবরটি শুধু একজন অভিনেতার গল্প নয়, এটি এক প্রজন্মের স্মৃতির গল্প। যিনি দর্শকের জন্য খলনায়ক হয়েছিলেন, আজ তিনি জীবনযুদ্ধে অসহায় নায়ক হয়ে লড়ছেন। এখন দরকার তাঁর পাশে দাঁড়ানোর মতো হাত, যাতে তিনি অন্তত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন।