হলমালিকেরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পাচ্ছে সেই সিনেমাই

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার একটি দৃশ্যছবি: সংগৃহীত

‘একটা সিনেমা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে গেল, অথচ কোনো সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল কি না, জানলাম না! প্যানেলের সবাই সন্তুষ্ট হয়েছেন বলেই সিনেমাটি পুরস্কার পেল, অথচ দর্শককে দেখানো হলো না। এটা কোনো কথা! সিনেমাটি কি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত, আর দেখার কোনো ব্যবস্থা আছে কি না, জানতে ইচ্ছা করছে...।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমনটাই লিখেছেন মাঈনুল হক নামের এক তরুণ। তিনি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমা প্রসঙ্গে এমনটা লিখেছেন বাংলা চলচ্চিত্র পেজে। ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ ২০২২ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দিয়েছে।
বড় অর্জনের পাশাপাশি অনেক গল্পও আছে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাড়ে তিন বছরের চেষ্টায় সীমিত বাজেটে জীবনের প্রথম সিনেমা নির্মাণ করেছেন ৬০ বছর বয়সী কাইউম। ছবিটির মুক্তিকালে পরিচালক প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, সিনেমার কাঙ্ক্ষিত একটি দৃশ্য পেতে পাক্কা আড়াই বছর অপেক্ষা করেছেন তিনি। সিনেমার এক দৃশ্যে দেখা যায়, হাওরে ধান কাটার মৌসুমে হড়কা বান নামে, ২০১৯ সালে সেই বানের দৃশ্য ধারণের পর আর বানের দেখা মেলেনি; কাইউমের অপেক্ষা বছরের পর বছর পেরিয়ে দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়। ২০২১ সালের শেষে এসে সেই দৃশ্য ধারণ করেন তিনি। এটা তো গেল মাত্র একটি দৃশ্য, পুরো সিনেমার দৃশ্য ধারণের জন্য দিনের পর দিন হাওরে পড়ে ছিলেন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা। হাওর অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামের গল্প পর্দায় তুলে আনতে মুহাম্মদ কাইউমকেও রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে।

এখানে শেষ নয়। সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পর সিনেমাটি মুক্তি দিতে গিয়ে মুদ্রার উল্টা পিঠ দেখতে হয়েছে নির্মাতাকে। সিনেমা হলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন নির্মাতা, সিনেমায় কথিত তারকা নেই বলে সিনেমাটি চালাতে চাননি হলমালিকেরা। অনেক বলেকয়ে ২০২২ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় মাত্র এক সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়েছে সিনেমাটি। এরপর চট্টগ্রামের সুগন্ধা সিনেমা হল ও নারায়ণগঞ্জের সিনেস্কোপে কিছুদিন প্রদর্শিত হয়েছে।

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমার পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল কাইউম
সংগৃহীত

এ সিনেমা নিয়ে দর্শকের মধ্যে তুমুল আগ্রহ থাকলেও হলগুলো সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নামিয়ে ফেলে, এর মধ্যে ছবিটি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠান নির্মাতা। বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ এ উৎসবের আন্তর্জাতিক বিভাগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৪টি সিনেমার সঙ্গে মনোনীত হয়েছে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’। উৎসবের মধ্যে টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ ভারতের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সিনেমাটি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। স্পেনের সিনেমা ‘আপঅন এন্ট্রি’র সঙ্গে যৌথভাবে উৎসবের সেরা সিনেমার (গোল্ডেন রয়েল বেঙ্গল টাইগার) পুরস্কার জিতেছে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’।

আরও পড়ুন
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের ছবি ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’
প্রথম আলো

সে সময় পুরস্কৃত হওয়ার পর সিনেমাটি তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সিনেমাটি ভারতসহ বিশ্বজুড়ে মুক্তি দিতে মুহাম্মদ কাইউমের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করেছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক পরিবেশক সংস্থা কন্টিনেন্টাল এন্টারটেইনমেন্ট পিটিই লিমিটেড; সংস্থাটি ভারতে বাংলাদেশের আরেক সিনেমা ‘হাওয়া’ মুক্তি দিয়েছে। সেই সময় প্রতিষ্ঠানটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী শ্রেয়সী সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে জানান, দুই মাস আগে থেকেই সিনেমার নির্মাতার সঙ্গে কথা বলেছেন তাঁরা; ভারত তো থাকছেই, ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে ছবিটি পরিবেশন করবেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

আজ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার ঘোষণার পর প্রথম আলোকে ছবিটির পরিচালক ও প্রযোজক বলেন, ‘পুরস্কার পেলে সাধারণত ভালোই লাগে। আমি বেশি খুশি হয়েছি, আমার চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি একটা-দুটো পুরস্কার যা-ই পাই না কেন, চলচ্চিত্রটা পাওয়া মানে হচ্ছে এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত পুরো টিমের সব সদস্যের অর্জন বা সবার কৃতিত্ব। কারণ, চলচ্চিত্র নির্মাণ একটা টিমওয়ার্ক।’

সিনেমার একটি দৃশ্য।
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন

ধ্রুপদি চিত্রলোক নিবেদিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবিশ, উজ্জ্বল কবির, সুমী ইসলাম, সামিয়া আখতার, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম ও আবুল কালাম আজাদ। সংগীতায়োজন করেছেন সাত্যকি ব্যানার্জি।