রাজ্জাকের কোলে বসা শিশুটি শাকিবের নায়িকা, নায়করাজকে নিয়ে আফসোস তার

নায়করাজের কোলে বসা শিশুটি আজ শাকিবের সিনেমার নায়িকা। ফেসবুক থেকে

আট বছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন নায়করাজ রাজ্জাক। জীবিত থাকতে যাঁরা এই নায়কের সান্নিধ্যে এসেছিলেন, সেই মুহূর্তটা অনেকেই সযত্নে তুলে রেখেছেন। জন্মদিন ও মৃত্যুবার্ষিকী বা বিশেষ দিনে রাজ্জাকের সঙ্গে তোলা সেসব স্থিরচিত্র তারকাসহ অন্যরা প্রকাশ্যে আনেন। দেশের চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত একজন নায়িকা রাজ্জাকের সঙ্গে তাঁর তোলা একটি স্থিরচিত্র কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে এনেছেন। মাত্র এক বছর বয়সে রাজ্জাকের কোলে বসে তোলা সেই স্থিরচিত্র নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। রাজ্জাকের সঙ্গে এই নায়িকার তোলা ছোট্টবেলার সেই স্থিরচিত্র দেখে অনেকে অবাক হয়েছেন।

রাজ্জাকের পরনে পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি—হঠাৎ করে প্রথম দেখায় কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেছেন, নায়করাজ রাজ্জাকের কোলের এই শিশুটি কে? কোথায় এই স্থিরচিত্র তোলা। জানা গেছে, রাজ্জাকের কোলে তোলা সেই স্থিরচিত্র বাংলাদেশের বিনোদন অঙ্গনের ব্যস্ত একজন তারকার, যিনি একটা সময় নিয়মিত উপস্থাপনা করতেন। এরপর বিজ্ঞাপনচিত্র ও নাটকে অভিনয় করেছেন। একটা সময় এসে অভিষেক হয় বড় পর্দায়ও। সর্বশেষ এই তারকাকে দেখা গেছে শাকিব খানের নায়িকা হিসেবে। ২০২৩ সালের শাকিব খানের বিপরীতে ব্লকবাস্টার সিনেমারও অংশ হয়েছেন তিনি। তার আগে ‘বনলতা সেন’ নামের আরেকটি সিনেমার শুটিংও শেষ করেছেন তিনি।

মাসুমা রহমান নাবিলা
ছবি : নাবিলার ফেসবুক থেকে

নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে এই স্থিরচিত্র পোস্ট করেছেন তিনি আর কেউ নন, ‘তুফান’ সিনেমার অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, স্থিরচিত্রটি আশির দশকে তোলা। তখন তাঁরা সৌদি আরবের জেদ্দায় থাকতেন। বাবার চাকরিসূত্রে নাবিলার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে সেখানে। পড়াশোনাও সেখানে। নায়করাজ রাজ্জাক তখন উমরাহ পালন করতে গিয়েছিলেন। উমরাহ পালন শেষে এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেই নিকটাত্মীয় ও নাবিলারা পাশাপাশি বাসায় থাকতেন।

মাসুমা রহমান নাবিলা
ছবি : নাবিলার ফেসবুক থেকে

নাবিলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেদ্দায় আমাদের একজন পারিবারিক বন্ধু আছেন, তাঁর পরিচিত ছিলেন নায়ক রাজ্জাক। আমাদের সেই নিকটাত্মীয় অভিনয়শিল্পী খলিলউল্লাহ খানের ছেলে। তাঁরা আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন। তাঁদের বাসায় দাওয়াতে এসেছিলেন তিনি। তখন তাঁদের মাধ্যমে আমাদের দেখা হয়।’
নাবিলা জানালেন, তখন তাঁর বয়স এক বছর। বাসায় ছাড়াও সেদিন পরিবারের সবাই মিলে জেদ্দার সমুদ্রসৈকতেও গিয়েছিলেন তাঁরা, সঙ্গে ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাকও। নাবিলা বললেন, ‘ফেসবুকে যে ছবি পোস্ট করেছি, এটি ছাড়াও আমাদের আরও কয়েকটা ছবি আছে। সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তিনিও আমাদের সাথে গিয়েছিলেন। এই জীবনে ওটাই তাঁর সঙ্গে প্রথম ও শেষ দেখা।’

মাসুমা রহমান নাবিলা
ছবি : নাবিলার ফেসবুক থেকে

দাদার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় হলে নাবিলার বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে। জন্মও সেখানেই। বাবার চাকরিসূত্রে কৈশোরের সবচেয়ে আনন্দময় দিনগুলো কেটেছে জেদ্দা শহরে। এসএসসির পর ২০০০ সালে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসেন। ভর্তি হন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে। এখানে এসে কিছু নতুন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁদের উৎসাহে একটা সময় উপস্থাপনা করার প্রতি আগ্রহ জন্মে। উপস্থাপনা দিয়েই নাবিলা টেলিভিশনের পর্দায় আসেন। ২০০৫ সালের শেষের দিকে বাংলাভিশনে ‘এবং ক্লাসের বাইরে’ অনুষ্ঠান দিয়ে টিভি পর্দায় আগমন। এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়া। দীর্ঘ সময় ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করলেও কখনো রাজ্জাকের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়নি। এ নিয়ে আফসোসও রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে শোনেন, রাজ্জাক মারা গেছেন।

নাবিলা বললেন, ‘দেশে এলাম। কাজ করছি। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, কিন্তু নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে কোথাও দেখা হয় না। এরপর তো ২০১৭ সালের আগস্টে মৃত্যুর খবরটা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল। মনে হয়েছিল, আহা রে, একটাবার যদি দেখা করতে পারতাম। কিন্তু কখনো তাঁর সঙ্গে আমার কোথাও দেখা হয়নি। হঠাৎ ছবিটা কীভাবে যেন পেয়ে গেলাম। ফোনের গ্যালারিতে, খুঁজতে খুঁজতে চোখের সামনে এল। একটা সুন্দর স্মৃতি। মনে হলো, এই সুন্দর স্মৃতিটা সবার সঙ্গে শেয়ার করি, তাই ফেসবুকে পোস্ট করি।’

(লেখাটি পুনঃপ্রকাশিত)