তেজগাঁও স্টেশন রোডের বাড়িতে ‘নায়ক আলমগীর’কে আবিষ্কারের গল্প
চলচ্চিত্র ৫৩ বছর পার হতে চলল চিত্রনায়ক আলমগীরের। এখন অবশ্য অভিনয়ের চেয়ে নিজের ব্যবসায় বেশি সময় দিয়ে থাকেন। তবে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট কাজে তাঁর উপস্থিতি থাকে ঠিকই। চলচ্চিত্রে ৫৩ বছর পার করে আসা এই নায়কের শুরুটা একটু অন্য রকম। পরিচালক তাঁর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ পেয়েছিলেন, এক ফেসবুক পোস্টে এমনটাই জানালেন আলমগীরের সংগীতশিল্পী মেয়ে আঁখি আলমগীর। নিজেদের পুরোনো বাড়ির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বাবার নায়ক হওয়ার গল্পটাও জানিয়ে দিলেন আঁখি।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘আমার জন্মভূমি’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় চিত্রনায়ক আলমগীরের। আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ছবিটি ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায়। ছবিতে আরও অভিনয় করেন রাজ্জাক, কবরী, সুমিতা দেবী প্রমুখ। আলমগীরের বাবা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ছিলেন ঢালিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’–এর অন্যতম প্রযোজক। ১৯৮৫ সালে ‘মা ও ছেলে’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন আলমগীর। বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আজীবন সম্মাননা পদক পাওয়ার রেকর্ড নায়ক আলমগীরেরই রয়েছে। পরিচালক হিসেবেও পরিচিত তিনি। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম ‘নিষ্পাপ’ নামের একটি সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর পরিচালনায় নির্মিত সর্বশেষ সিনেমা হচ্ছে ‘একটি সিনেমার গল্প’।
আঁখি আলমগীর তাঁর বাবার নায়ক হওয়ার প্রস্তাব পাওয়ার গল্পটি বলতে গিয়ে তাঁদের ঢাকার তেজগাঁও স্টেশন রোডের বাড়ির গল্পটাও বললেন। বাড়িটি ১৯৫৫ সালে নির্মিত জানিয়ে আঁখি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পুরোটা দেখা যাচ্ছে না, এল শেফড এই বাড়িটি তেজগাঁও স্টেশন রোডে। আমার দাদার বাড়ি, আমার জন্যে অনেক বেশি আবেগের। কারণ, জন্মের পর থেকে অনেক বছর এখানে ছিলাম...। যতটা সামনে দেখা যাচ্ছে, পেছনে তার চেয়েও বড় জায়গা। সন্ধ্যা হলে বিশাল জমির উপরে বানানো বিরাটাকার এই বাড়িতে ভয় পাওয়ার গল্প যেমন মনে আছে, তেমনি মনে আছে চাচা–ফুফু আর কাজিনদের সাথে কাটানো সুন্দর সময়ের গল্পও।’
আঁখি আলমগীর এখন থাকেন ঢাকার উত্তরায়। আর বাবা থাকেন মোহাম্মদপুরের আসাদ অ্যাভিনিউতে। যৌথ পরিবারের অন্য সবাই দেশ–বিদেশে ছড়িয়ে আছে। তবে তেজগাঁও স্টেশন রোডের বাড়ির গল্পও এখনো মনে হয়। নানা স্মৃতি রয়েছে সেই বাড়ি ঘিরে। নিজের বেড়ে ওঠার গল্পের কথা বলতে গিয়ে আঁখি লিখেছেন, ‘এখানেই আমাদের সবার বেড়ে ওঠা। ছোট্ট আমার কাছে দাদার বাথরুমের বাথটাব ছিল সবচেয়ে মজার জায়গা...। আরেকটা বাথটাব বাড়ির পেছনে গাছের নিচে কেন ফেলা ছিল, তার উত্তর আজও আমার জানা নাই। ছাদে যাওয়া আমাদের ছোটদের একদম নিষেধ ছিল, আমরা কি আর কথা শুনতাম! চলে যেতাম যখন–তখন, পরে ভূতের ভয় দেখিয়ে আমাদের থামানো হলো...। মনে পড়ে, দাদি এখানেই মারা যান, তাঁর অনেক আগে দাদা, তবে আমি দেখিনি দাদাকে।’
ছবির বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে এখন অ্যাপার্টমেন্ট। সেই গল্প বলতে গিয়ে বাবা আলমগীরকে নায়ক হিসেবে খুঁজে পাওয়ার গল্পটাও বললেন আঁখি আলমগীর। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাড়িটি ভেঙে ফেলার আগের এই ছবি। এখন এখানে অনেক অ্যাপার্টমেন্ট, এত বছর পরও যখন যাই, আগের বাড়ির একটা বাতাস কোথা থেকে যেন গায়ে হাত বুলিয়ে যায়...। আধুনিক যান্ত্রিক জীবনের পরতে পরতে আমি বারবার অতীতকে ফিরে পাই, খুঁজতে হয় না, অতীত আমাকে খুঁজে নেয়...। এই বাড়ির একটা অংশ ভাড়া নিতে এসেছিলেন শ্রদ্ধেয় পরিচালক আলমগীর কুমকুম। তাঁর ভালো লাগে এই বাড়ির এক সুদর্শন তরুণকে। এভাবেই আবিষ্কৃত হন বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা আলমগীর। পরবর্তীকালে কুমকুম আঙ্কেল আমার নাম রাখেন “আঁখি”।’