আপস করে তো ভিতু মানুষ, আপস করে তো মেরুদণ্ডহীন প্রাণী: হুমায়ুন ফরীদি
হুমায়ুন ফরীদির জন্মদিন আজ। জাগতিক ভ্রমণে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো ৭৩। তিনি নেই, সে-ও ১৩টি বছর পেরিয়ে গেল। অথচ কী জীবন্ত হুমায়ুন ফরীদি! একজন অভিনেতার সঙ্গে তিনি যেন ছিলেন একজন দার্শনিক। এ অভিনেতাকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন, ফরীদির ভেতরেও একজন দার্শনিক বাস করতে পারে। জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে তিনি দিয়েছেন নানান উক্তি। কেউ কেউ নিজের জীবনের নানান মুহূর্তে স্মরণ করেন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলে যাওয়া এই অভিনেতার দার্শনিক উক্তিগুলো।
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৃত্যু নিয়ে হুমায়ুন ফরীদি বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর মতো এত স্নিগ্ধ, এত গভীর সুন্দর আর কিছু নেই। কারণ, মৃত্যু অনিবার্য। তুমি যখন জন্মেছ, তখন মরতেই হবে। মৃত্যুর বিষয়টি মাথায় থাকলে কেউ পাপ করবে না। যেটা অনিবার্য, তাকে ভালোবাসাটাই শ্রেয়।’
ফরীদি আরও বলেছিলেন, ‘মৃত্যুকে ভয় পাওয়া মূর্খতা। জ্ঞানীরা মৃত্যুকে ভয় পায় না। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করো, গ্রহণ করো, বরণ করে নাও। তাহলে দেখবে জীবন কত সুন্দর।’
অনেক অনুপ্রেরণার কথাও এসেছে ফরীদির উক্তিতে। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি তোমার সম্পর্কে মানুষ তোমার পেছনে কিছু বলে, জেনো তুমি কিছু একটা করছ, যা ওরা করতে পারছে না। মাথায় নিয়ো না। তোমার কাজ তুমি করে যাও মন দিয়ে। জয়ী হবে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘লাইফ ইজ নাথিং, বাট আ জার্নি টুওয়ার্ডস ডেথ। আপস করে তো ভিতু মানুষ। আপস করে তো মেরুদণ্ডহীন প্রাণী।’
হুমায়ুন ফরীদির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৯ মে, ঢাকায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৭০ সালে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জৈব রসায়ন বিভাগে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্থগিত হয়ে যায় তাঁর পড়াশোনা। স্বাধীনতার পর অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেধার স্বাক্ষর রাখেন প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলে।
নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা মঞ্চ—সবখানেই ছিল হুমায়ুন ফরীদির অবাধ বিচরণ। মঞ্চ দিয়েই শুরু তাঁর পথচলা। প্রথম মঞ্চনাটক কিশোরগঞ্জে মহল্লার নাটকে ১৯৬৪ সালে। প্রথম মঞ্চনাটক নির্দেশনা দেন স্কুলজীবনে—‘ভূত’।
১৯৭৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্যোৎসব আয়োজনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দিনগুলোতেই ফরীদি সম্পৃক্ত হন ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবেও অভিনয়ের আলো ছড়িয়ে বেড়ান সারা দেশে। যদিও এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তনাট্য প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। এখানে তিনি ‘আত্মস্থ ও হিরণ্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক লেখেন, নির্দেশনা দেন এবং অভিনয় করেন। নাটকটি পাঁচটি নাটকের মধ্যে সেরা নির্বাচিত হয় বিচারকদের কাছে। এ নাটকের সুবাদে পরিচয় ঘটে ঢাকা থিয়েটারের নাসির উদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে। মূলত এখান থেকেই হুমায়ুন ফরীদির অভিনয়যাত্রা শুরু। ঢাকা থিয়েটারের মধ্য দিয়ে হুমায়ুন ফরীদির মঞ্চযাত্রা শুরু হয়।