২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বাস্তব জীবনে কেমন ছিলেন রাজীব ও মিজু আহমেদ

অভিনেতা রাজীব ও মিজু আহমেদকোলাজ

পর্দায় মূলত খল অভিনেতা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছিলেন রাজীব ও মিজু আহমেদ। তাঁদের অভিনয়ের জায়গাটা এমনই সমৃদ্ধ ছিল যে দর্শক যখন পর্দায় দেখতেন, রীতিমতো গালমন্দও করতেন সিনেমা হলে। কিন্তু বাস্তব জীবনে কেমন ছিলেন তাঁরা? পর্দার বাইরে এই খল অভিনেতারাই ছিলেন অনেকের আদর্শ।
শুরুতে শুনি অভিনেতা ওয়াসীমুল বারী রাজীবের কথা। রাজনীতিবদ ছিলেন, তবে অভিনেতা হিসেবেই তাঁর নামডাক। তাঁর গম্ভীর ঝাঁজালো কণ্ঠ, রহস্যভরা চোখের চাহনি, বৈচিত্র্যময় অভিব্যক্তি যেমন দর্শককে দিত টান টান উত্তেজনা, তেমনি করত আতঙ্কিত। খল অভিনেতা রাজীব চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। পর্দায় খলনায়ক হলেও পরিবার, সন্তান, ভক্ত, সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন মিশুক, হাস্যোজ্জ্বল আর আড্ডাবাজ এক মানুষ। রাজীবের দুই মেয়ে (রানিসা রাজীব ও রাইসা রাজীব) আর এক ছেলে (সায়নুল বারী দ্বীপ)—কেউই এখন ঢালিউডের সঙ্গে যুক্ত নন।

ছেলের সঙ্গে রাজীব
পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

২০১৯ সালে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিনেতার ছেলে বলেন, ‘বাবা চলচ্চিত্র নিয়ে বাসায় কখনো কথা বলতেন না। বাবার পারিবারিক জীবন আর চলচ্চিত্রজগৎ আলাদা ছিল। খোলামনের একজন সাদামাটা মানুষ ছিলেন আমার বাবা।’ মার্শাল আর্টের ওস্তাদ জাহাঙ্গীর আলমের চাচাতো বোন ইসমত আরাকে বিয়ে করেন রাজীব। জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘সিনেমায় দেখানো চরিত্রগুলো থেকে বিপরীত ছিলেন রাজীব। শুটিং সেটে কখনো উচ্চ স্বরে বা চড়া মেজাজে কথা বলতেন না।’ ১৯৮২ সালে কাজী হায়াতের হাত ধরে ‘খোকন সোনা’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন। ২২ বছরের ক্যারিয়ারে চার শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন রাজীব। ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালীতে তাঁর জন্ম। ২০০৪ সালে ১৪ নভেম্বর ৫২ বছর বয়সে ক্যানসারে মারা যান এই শক্তিমান অভিনেতা।

মিজু আহমেদ
চলচ্চিত্রে মিজু আহমেদ নামে পরিচিতি পেলেও তাঁর প্রকৃত নাম মিজানুর রহমান। এই অভিনেতা ভক্তদের মুখোমুখি হতে ভয় পেতেন। একবার নাকি ফেরি পার হয়ে ভক্তদের মুখোমুখি পড়ে যান অভিনেতা মিজু আহমেদ।

ঢালিউডের দাপুটে খলনায়ক ছিলেন মিজু আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

গাড়ির সামনে ভক্তরা দাঁড়িয়ে অনুরোধ করে বসেন, প্রিয় খল অভিনেতার মুখ থেকে সরাসরি গালি শুনবেন! পরে উপায় না পেয়ে মিজু আহমেদ ভক্তদের ‘হালকা ঝাড়ি’ শোনান। আর তা শুনে ভক্তরা খুশিতে করতালি দিতে শুরু করেন। এমনই ছিল খল অভিনেতা মিজু আহমেদের জনপ্রিয়তা। চরিত্রের প্রয়োজনে ছবিতে অশালীন শব্দ ব্যবহার করে সংলাপ বলতে হতো মিজু আহমেদকে। কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি নাকি কখনোই কোনো আপত্তিকর কথা মুখে আনতেন না, স্বভাবে ছিলেন স্বল্পভাষী। ২০১৯ সালে প্রথম আলোকে মিজুর স্ত্রী পারভিন আহমেদ বলেন, ‘তাঁর মতো স্বামী পাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের।’ দুই মেয়ে তাসনিম আহমেদ, আফিয়া আহমেদ ও ছেলে হারসাত আহমেদের আদর্শ তাঁদের বাবা মিজু আহমেদ।

পরিবারের সঙ্গে মিজু আহমেদ
সংগৃহীত

বড় মেয়ে তাসনিম একটি ব্যাংকে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মুখে কোনো দিন কোনো বাজে কথা তো দূরে থাক, কখনো আমাদের সামনে কাউকে “তুই” বলেও সম্বোধন করেননি। এতটাই স্বল্পভাষী ছিলেন যে বোঝাই যেত না তিনি বাড়িতে আছেন, নাকি নেই।’ শৈশব থেকেই থিয়েটারের প্রতি ঝোঁক ছিল মিজু আহমেদের। ১৯৭৮ সালে ‘তৃষ্ণা’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। দুবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি। ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর মিজু আহমেদ কুষ্টিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ তিনি হৃদ্‌রোগে মারা যান।
[এ প্রতিবেদনের তথ্য ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট প্রথম আলোয় ছাপা হওয়া ‘পর্দায় যেমন দেখাতেন তেমন ছিলেন না’ প্রতিবেদন থেকে সংগৃহীত]