ফেসবুকে মন্তব্য দেখা বন্ধ করে দিয়েছি: সুনেরাহ

‘ন ডরাই’ সিনেমার পর স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘মশারি’ দিয়ে আলোচনায় আসেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। ঈদে ‘অন্তর্জাল’-এ তাঁকে দেখা যাবে। সম্প্রতি সিনেমাটির টিজার ও গান দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন এই তরুণ অভিনেত্রী। ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে গতকাল তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’
সুনেরাহ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

কেমন আছেন?

ভালোই আছি, কিন্তু দৌড়ের ওপর আছি। এখন ব্যাংকে এসেছিলাম। আবার অফিসে যাচ্ছি। আমি তো জব করি। এ ছাড়া টিভিসির কাজ রয়েছে। প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। সিনেমার প্রচারণায় যতটুকু পারি সময় দিই। দম ফেলার সময় নেই।

প্রশ্ন :

এত ব্যস্ততার মধ্যে নিজেকে সময় দেন কখন?

কাজ শেষে কিছুটা কম ঘুমানো হয়। তখন নিজেকে সময় দিই।

প্রশ্ন :

অনেক রাত জাগেন?

আগে তো বাজে অভ্যাস ছিল, ভোরে ঘুমাতাম। এখন মাঝেমধ্যে রাত জাগা হয়। গত তিন মাসে খুব তাড়াতাড়ি বাসায় যাই। একটার মধ্যে চেষ্টা করি ঘুমানোর। পরিবারে বয়স্ক মা–বাবা আছেন, তাঁদের সময় দিতে হয়। শুটিং থাকলে গাড়ি ও গ্রিন রুমে ঘুমানো হয়।

সুনেরাহ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

ঈদে আপনার ‘অন্তর্জাল’ মুক্তির কথা। এবার তো আপনাকে নাচতেও দেখা যাবে।

‘ন ডরাই’ সিনেমার জন্য এর আগে রোদে পুড়ে তামাটে হতে হয়েছিল। দীর্ঘদিন কক্সবাজারে থেকে ভাষা, সার্ফিং শিখতে হয়েছে। এবার এতটা সময় না দিলেও আমাকে রোবোটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে হয়েছে। রোবট বানানো দেখতে হয়েছে, এসব ল্যাঙ্গুয়েজ শিখতে হয়েছে। প্রতিটি দৃশ্য বুঝে শুটিং করেছি। অভিনয়ে কোনো ছাড় দিতে চাই না। আমি বাণিজ্যিক সিনেমাতে অভিনয় করতে চাই। আমার ভাগ্য ভালো ‘ন ডরাই’–এর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আবার কপাল ততটাই খারাপ, এ সময়ে আর কোনো সিনেমার শুটিং হয়নি। তাহলে হয়তো আগে কমার্শিয়াল সিনেমায় নাম লেখাতাম।

প্রশ্ন :

সহ-অভিনেতা সিয়াম আহমেদের সঙ্গে বোঝাপড়া কেমন?

আমরা অনেক দিনের বন্ধু। কিন্তু আমাদের এটা প্রথম সিনেমা। প্রচুর মজা করেছি। দেখা যেত, সিরিয়াস কোনো দৃশ্যের আগে আমরা হাসছি। পরিচালক রেগে বকা দিচ্ছেন। আবার রোমান্টিক কোনো দৃশ্যে পরিচালক বলেছেন একটা, আমরা করছি আরেকটা। সেটাই ভালো হয়েছে। সেটাই ওকে।

সুনেরাহ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

দেশের তারকাদের মধ্যে কার কাছ থেকে বেশি অনুপ্রাণিত হন?

এটা হয়তো ডিপ্লোমেটিক উত্তর হবে, আমি সবার কাছ থেকে শিখতে চাই। যার যেটা বেস্ট, সেটা গ্রহণ করি। নেতিবাচক বাদ দিয়ে ইতিবাচকগুলো নিই।

প্রশ্ন :

জয়া আহসানের কাছ থেকে কোনো কিছু শিখেছেন?

জয়া আপুর একটা বিষয় আমার খুব ভালো লাগে। তাঁকে নিয়ে কে কী চিন্তা করছে, তিনি কেয়ারই করেন না। তিনি তাঁর মতো করে চলেন। পেছনে তাকান না। এটা খুব বড় বিষয়। এমন মানুষদের নিয়ে প্রাউড ফিল করি।

সুনেরাহ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক বিষয়গুলো কীভাবে মোকাবিলা করেন?

ফেসবুকে মন্তব্য দেখা বন্ধ করে দিয়েছি। তারা আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অ্যাটাক করে, গালিগালাজ করে। একটা মানুষকে কেন তারা বাজে মন্তব্য করবে। সমালোচনা করুক, ভালো না লাগলে ইগনোর করো। এ কারণে ফেসবুকে অনেকটা ইন–অ্যাকটিভ। ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করতে ভালো লাগে। এখানে মানুষ বাজে মন্তব্য কম করে।

প্রশ্ন :

কোনো ঘটনায় কখনো খুব কাঁদতে ইচ্ছা হয়েছিল?

আমি খুবই ইমোশনাল মানুষ। ইনজাস্টিস সহ্য করতে পারি না। আমি চাই, যেটা সত্য সেটা মানুষ বলুক। কিন্তু অনেক সময় আমাকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়। কিন্তু আমাকে যারা চেনে–জানে, তারা বলতে পারবে আমি কেমন। আমি যতটুকু দেখাই, ঠিক ততটুকুই দেখানো যায়। তার বাইরে মানুষ আমাকে কীভাবে চিনবে। এখন যদি আমাকে অন্যভাবে উপস্থাপন করা হয়, তখন তো আমি কাজ বাদ দিয়ে সবাইকে বলতে যাব না—এটা আমি না, এটা আমি করিনি।

সুনেরাহ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

প্রশ্ন :

সম্প্রতি শরীফুল রাজকে জড়িয়ে আপনার কিছু ভিডিও...

এ ঘটনায় খারাপ তো লাগছে, মাঝে কান্না পেয়েছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। অনেকেই অনেক মিথ্যা কিছু বিশ্বাস করে। এখন তো আমি জনে জনে বিশ্বাস করাতে পারব না যে আমি তেমন নই। আশা করি, এগুলো আমার ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

প্রশ্ন :

ঘটনাগুলো কি আপনার ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব ফেলেছে?

যারা শিক্ষিত মানুষ, আমার আশপাশে যারা ডিরেক্টর বা যাদের কথাই বলি, সবাই তো আমাকে চিনে। আমাদের মিডিয়ার জায়গাটা ছোট। যে কারণে বলতে গেলে সবাই সবাইকে চিনি। এখানে কে কী রকম, কে কেমন—আমরা সবাই জানি। এখানে ক্যারিয়ারে কেন ক্ষতি হবে। আমার অভিনয়ে মনোযোগ দিয়েছি। অভিনয়ে নিয়মিত শিখছি। আশা করি, এগুলো আমার ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

গানের দৃশ্যে সিয়াম ও সুনেরাহ
ছবি: ফেসবুক

প্রশ্ন :

আপনি যেমন কাজ দিয়ে দর্শকদের ভালোবাসা পেতেন চান, এমনকি দেখেছেন কাজ ছাড়া বিতর্ক দিয়ে কেউ কেউ আলোচনায় আসতে চায়?

আমার কাজ থাকলে তো আমি কাজ করব। কাজ দিয়ে আলোচনায় আসব। যাদের কাজ নেই, আলোচনায় আসতে চায়, তাদের জন্য আমার মায়া লাগে। তাদের কাজ নেই, তারা চাইছে যেন হারিয়ে না যায়। কিন্তু তাদের জায়গায় নিজেকে রেখে যখন চিন্তা করি তখন মনে হয়, কাজ নেই আলোচনা নেই, ওকে ঠিক আছে, চুপচাপ থাকি। কিন্তু অনেকেই হয়তো এটা নিতে পারে না। এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। কারণ, সবাই এক রকম নয়। এগুলো নিয়ে কথা না বলাই ভালো।

প্রশ্ন :

‘মশারি’র পর নুহাশ আহমেদের আর কোনো কাজে যুক্ত হয়েছেন?

নুহাশের কি সব কাজ আমাকে নিয়ে করতে হবে (হাসি)! অপেক্ষা করেন, ভালো কিছু হবে। আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ, কাজের বোঝাপড়া ভালো। এই একটা ভালো বন্ধু, যাকে শুটিংয়ের সময় অপরিচিত মনে হয়, ডেডিকেটেড।

সুনেরাহ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে