যাদের জন্য এত করলাম, তাদের হিংসার আগুনে আমি পুড়ে মরছি: পপি

পারিবারিক বিরোধের জেরে চিত্রনায়িকা পপির বিরুদ্ধে করা জিডির তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সোনাডাঙ্গা থানা-পুলিশ। সম্প্রতি খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ আবেদন করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক খালিদ উদ্দিন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম।

জিডির তদন্তের বিষয়ে ওসি মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিত্রনায়িকা পপির বিরুদ্ধে জিডি করেছেন তাঁর ছোট বোন। সেটির তদন্তের অনুমতি চেয়ে খুলনা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর জিডির ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে।’

অবশ্য ওসি শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘পপির বোনের জিডির পর আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘটনার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। যতটুকু জেনেছি, তাতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, জমি দখলের কোনো বিষয় সেখানে নেই। ওয়াসা ও বিদ্যুতের নামজারির বিষয়ে তাঁদের মধ্যে বাতচিত হয়েছে। অভিযোগকারী পপির ছোট বোন যে ফুটেজ আমাদের দিয়েছিল, সেটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে পপি মারধর করেছেন এমন কোনো ফুটেজ সেখানে নেই। যা আছে, সেটি হচ্ছে কোনো নায়িকা গেলে উৎসুক লোকের ভিড় জমে যায়, সেখানেও তাই হয়েছিল। তবে ফুটেজে একটি মোবাইল ফোনসেট পড়ে যেতে দেখা গেছে।’

সাদিকা পারভীন পপি
ছবি : পপির ফেসবুক থেকে

এ বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শেখ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘চিত্রনায়িকা পপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে। একজন এসআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষেই বলা সম্ভব হবে, বাস্তবে সেখানে কী ঘটনা ঘটেছিল। তদন্ত করে যা পাওয়া যাবে, তা আদালতকে প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানানো হবে।’

মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পপির বিরুদ্ধে ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনার সোনাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ করেন পপির বোন ফিরোজা বেগম খেয়ালি।
পপি, তাঁর মা ও তাঁর ছোট বোনের সঙ্গে কথা বলে যে চিত্র পাওয়া যায়, সেটি হচ্ছে পপির কাছে খুলনার ওয়াসা ও বিদ্যুৎ অফিস থেকে দুটি পৃথক নোটিশ আসে। সেই নোটিশ পাওয়ার পর পপি তাঁর স্বামী আদনান কামালকে নিয়ে খুলনার সোনাডাঙ্গায় যান ৩ ফেব্রুয়ারি। তখন সময় দুপুর ১২টা। পপি ও তাঁর স্বামী বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান, বিদ্যুৎ ও ওয়াসার কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে কাজ করছেন। পপি তাঁর জমি ও অন্যান্য প্রমাণপত্র তাঁদের দেখাচ্ছিলেন।

অন্যদিকে পপির মা মরিয়ম বেগম ও তাঁর বোন ফিরোজা বেগম খেয়ালি তাঁদের সপক্ষের কাগজপত্রসহ অন্যান্য যুক্তি তুলে ধরছিলেন। একপর্যায়ে পপির ছোট বোন ফিরোজা বেগমের সঙ্গে একজন স্থানীয় নারীকে দেখতে পান। এ নিয়ে পপি তাঁর বোনের কাছে জানতে চান, ওই নারী কে? এ নিয়ে এক কথা দুই কথায় হঠাৎ দুই বোনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।

সাদিকা পারভীন পপি
ছবি : পপির ফেসবুক থেকে

পপির বোন ফিরোজার দাবি, পপি তাঁর গায়ে হাত তুলেছিলেন। মারধর করেছেন। পপির স্বামী তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এর প্রমাণপত্র তাঁদের কাছে আছে। সিসিটিভির ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। তবে মারধর কিংবা হুমকির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেন চিত্রনায়িকা পপি।

পপির দাবি, তাঁর সম্পত্তি জোর করে ভোগদখল করছেন তাঁর মা ও ভাইবোনেরা। তাঁর বৈধ জমিতে বিদ্যুৎ ও ওয়াসার মিটার নেওয়ার জন্য খুলনার সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করেছিলেন। নিয়মমাফিক আবেদন যাচাইবাছাই শেষে সরেজমিনে কর্মকর্তারা সেদিন এসেছিলেন। তাঁর জমির কাগজ থেকে শুরু করে সব প্রমাণ দেখাচ্ছিলেন। কোনো কিছু না বলে তাঁর বোন ফিরোজা তাঁকে মারধর করেন। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁর যে সম্মান, সেটি ধ্বংস করার জন্য মা ও ভাইবোনেরা মিলে তাঁর নামে থানায় মিথ্যা জিডি করেছেন। এই জিডির কোনো সত্যতা নেই।

পপি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার মা ও ভাইবোনের অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি। আর সহ্য করব না। ওরা আমার নামে অনেক মিথ্যা, কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। আমি যাদের জন্য এত করলাম, আমার জীবনের সর্বস্ব নিংড়ে দিলাম, তারাই আমাকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমার মানসম্মান নষ্ট করছে। আমাকে হয়রানি করছে। আমি তাঁদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেব।’

অপর দিকে অভিযোগকারী পপির বোন ফিরোজা বেগম প্রথম আলোকে বললেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সেদিন পপি আমাকে মারধর করেছে। আর তাঁর স্বামী আমাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছে। আমি নিজের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের জন্য বাধ্য হয়ে নিজের বোনের বিরুদ্ধে জিডি করেছি। আমি বিচার চাই।’

মায়ের হাত ধরে পপির সিনেমাযাত্রা

ছয় ভাইবোনের মধ্যে পপি সবার বড়। তাঁর বাবা আমির হোসেন পেশায় একজন ঠিকাদার। মা মরিয়ম বেগম গৃহিণী। তাঁর জন্ম খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গায়। তিনি যখন খুলনার একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়তেন, তখন লাক্স আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতা চলছিল। পত্রিকায় এই খবর দেখে তাঁর মা পপির ছবি পাঠান। এরপর মায়ের ইচ্ছায় পপি ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।

মা মরিয়ম বেগমের সঙ্গে চিত্রনায়িকা পপি
ছবি : পপির ফেসবুক থেকে

কিশোরী পপি সবাইকে অবাক করে লাক্স আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর তাঁকে নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। এর মধ্যে শেষ হয় স্কুলজীবন। এরপর মাকে সঙ্গে করে পপি চলে আসেন ঢাকায়। ভর্তি হন লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। দারোগার মেয়ে পপির মা মেয়েকে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এর মধ্যে পরিচয় হয় পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে। তাঁর হাত ধরেই পপির সিনেমাযাত্রা শুরু। প্রথম সিনেমা ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’। নায়ক শাকিল খান। তবে এই ছবিতে প্রথম অভিনয় করলেও পপিকে মানুষ চেনে ‘কুলি’ সিনেমা দিয়ে। তাঁর নায়ক ছিলেন ওমর সানী, পরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর।

ব্যবসাসফল ‘কুলি’ সিনেমার জনপ্রিয়তার পর পপিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প বয়সেই পপি বিরাট তারকাখ্যাতি পেয়ে যান। হাতে আসতে থাকে একের পর এক সিনেমা। দিনরাত অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হতো। যে কারণে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারলেও উচ্চশিক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। পপির ভীষণ আক্ষেপ, লেখাপড়াটা যদি শেষ করতে পারতেন, তাহলে আর আফসোস থাকত না এই জীবনে।

সাদিকা পারভীন পপি
ছবি: সংগৃহীত

ছায়ার মতো সঙ্গী মা

পপির মায়ের নাম মরিয়ম বেগম। তাঁর জন্ম নড়াইলে।  তবে বহুবছর আগে মরিয়ম বেগমের দারোগা পিতা সপরিবার খুলনায় গিয়ে থিতু হন। আর পপির জন্মদাতা পিতা আমির হোসেনদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনার সোনাডাঙ্গায়। অবস্থাসম্পন্ন আমির হোসেন ঠিকাদারি করতেন। সোনাডাঙ্গার বেশ প্রভাবশালী পরিবার ছিল পপিদের। একনামে এ বাড়ির সবাইকে চিনত। ৪৬ বছর আগে মরিয়ম ও আমির দম্পতির ঘর আলো করে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। তাঁর নাম রাখা হয় সাদিকা পারভীন পপি। এরপর একে একে পপির আরও তিন বোন ও এক ভাইয়ের জন্ম হয়। পপির আরও একটি ভাই এই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। সবার বড় সন্তান হওয়ায় পপি ছোটবেলা থেকে তাঁর ভাইবোনদের প্রতি অন্য রকম টান ছিল।

খুলনা থেকে পপির পরিবার ঢাকায় এলেও জীবনের প্রথম ভাগে ভাইবোনদের সঙ্গে তাঁর মধুর সম্পর্ক বজায় ছিল। সেই সময় পপি যেখানে শুটিংয়ে যেতেন, সেখানে তাঁর মা ছায়ার মতো সঙ্গী হয়েছেন। এমনও গেছে, মধ্যরাত, কনকনে ঠান্ডায় সিনেমার শুটিং চলছে। মা মরিয়ম মেয়ের জন্য রাতেও সেখানেই অপেক্ষায় থাকতেন। শুটিং যত রাতেই শেষ হোক, মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই মা বাসায় ফিরতেন। তখন পপির একদিকে লেখাপড়া, অন্যদিকে শুটিং। মেয়ের খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু এক হাতে দেখভাল করতেন মা।

পপির মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিই পপিকে সিনেমায় এনেছিলাম। মেয়ের নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য অনেক কষ্ট করেছি। মেয়েও আমার অভিনয়পাগল। সে–ও অনেক কষ্ট করে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে তিনবার। সবকিছুই ভালো চলছিল। মাঝখানে কী যেন আমাদের মধ্যে ঘটে গেল। গত পাঁচ বছর পপির সঙ্গে আমার সেভাবে কোনো যোগাযোগ নেই।’

বাবা আমীর হোসেনের জন্মদিন উদযাপনের মুহূর্তে পপি ও তাঁর বোন সুমী
ছবি : পপির ফেসবুক থেকে

দ্বন্দ্বের শুরু

মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা পপি কিশোরী বয়স থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে তিলোত্তমা নগরী ঢাকায় নিজের একটা অবস্থান করে নেন। তাঁর সমসাময়িক অন্য জনপ্রিয় নায়িকাদের আর্থিক উন্নতির চিত্র দেখে পপি নিজের মুখোমুখি হন। হিসাব মেলাতে শুরু করেন। সেই যে নবম শ্রেণিতে কাজ শুরু, আরও পার হয়েছিল ২০ বছরের বেশি সময়।

পপি বলছিলেন, আয়ব্যয়, ব্যাংক–বিমার খোঁজ তিনি রাখতেন না। খোঁজ রাখতেন তাঁর মা–বাবা। ঢাকার বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সংসারের অন্য সব ব্যয় তিনিই করতেন। ব্যাংকে কত টাকা জমা হলো, কোথায় কত খরচ হলো, কোনো দিন তিনি খোঁজ রাখেননি। বরং একদিন জানতে পারলেন, তাঁর পিতার সঙ্গে তার যে যৌথ ব্যাংক হিসাব ছিল, সেই হিসাবে যে অর্থ ছিল, সেটি অন্য আরেকজনের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। এই খবর শোনার পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

সাদিকা পারভীন পপি
ফাইল ছবি

কাঁদতে কাঁদতে পপি প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমি এক হতভাগা মেয়ে। নিজের হাতে ভাইবোনদের মানুষ করেছি। নিজের আয়ে মা–বাবা, পরিবার–পরিজনকে ভালো রাখতে চেষ্টা করেছি। যে মা–বাবা আমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তারাই আমার অর্থ ব্যাংক থেকে সরিয়ে ফেলবে, সেটি কোনো দিন কল্পনাও করিনি। কিন্তু বাস্তবে সেটিই ঘটেছে। আমি যখন জানলাম, আমার ব্যাংকে জমানো টাকা অন্য একজনের ব্যাংক হিসাবে দিয়ে দিল, আমি মা–বাবার কাছে কৈফিয়ত চাইলাম। কোনো জবাব পাইনি। উল্টো আমি হয়ে গেলাম শত্রু। আজও আমি তাদের কাছে শত্রু হিসেবে গণ্য হলাম।’

তবে পপির এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন তাঁর মা মরিয়ম বেগম। মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করার গল্প বলতে গিয়ে বারবার তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছিলেন। তিনি বলছিলেন, পপি তো তাঁর একমাত্র সন্তান না। তাঁর আরও পাঁচটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু পপিকে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি যেভাবে দিনের পর দিন সময় ব্যয় করেছেন, অর্থকড়ি দিয়ে সহায়তা করেছেন, সেই পপি তাঁর সব অবদান অস্বীকার করবে, অসম্মান করবে, ভাত খাওয়ানোর খোঁটা দেবে—সেটি তিনি কল্পনাও করেননি।

মরিয়ম বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার তো চার মেয়ে দুই ছেলে। আমার স্বামী ছিলেন ব্যবসায়ী। সোনাডাঙ্গায় আমাদের পরিবারকে সবাই জমিদারবাড়ি হিসেবে চেনেন। আমার স্বামীর ধানি জমির পাশাপাশি শহরে বেশ কয়েক কাঠা সম্পত্তি রয়েছে। পপিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমরা একসময় ঢাকায় গিয়ে থিতু হই। আমার স্বামীর আয় ও পপির সহযোগিতায় আমরা ভালোই ছিলাম। ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছি। সবাই বিয়েশাদি করেছে। তবে আজ থেকে ১৮ বছর আগে পপির পাগলামি আমাদের পরিবারে অশান্তির জন্ম দেয়।’

আরও পড়ুন
মা–বাবা ও ভাইবোনের সঙ্গে চিত্রনায়িকা পপি
ছবি : পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

পপির মায়ের ভাষ্যে, একসময় পপি দাবি করলেন, সে যেহেতু পরিবারের সংসার ব্যয়সহ সব ধরনের ব্যয় মিটিয়ে চলেছেন, সুতরাং সোনাডাঙ্গায় তাঁর স্বামীর যে ১১ কাঠা সম্পত্তি রয়েছে, তার ৬ কাঠা তাঁকে লিখে দিতে হবে। পপির এই বক্তব্য শোনার পর সংসারে রীতিমতো ঝড় ওঠে।

পপির এই দাবি কোনোমতেই মানতে রাজি নয় তাঁর স্বামীসহ অন্য সন্তানেরা। নাছোড়বান্দা পপি পিতাকে একপ্রকার জিম্মি করে সেই ছয় কাঠা সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেন।

পপির বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালি দাবি করেন, যে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে তাঁর বাবার কাছ থেকে পপি ছয় কাঠা জমি জোরপূর্বক লিখে নিয়েছিল, সেই টাকা কোন ব্যাংকে, কার হাতে দিয়ে দিয়েছিলেন, তার কি কোনো প্রমাণ আছে? আর পপির মা বললেন, ‘যেভাবেই পপি ওই ছয় কাঠা জমি আমার স্বামীর কাছ থেকে লিখে নিক, টাকা দিয়ে নিক বা টাকা না দিয়ে নিক—তাতে আমার বা আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু পপি আমার স্বামীর ১১ কাঠার জমি নিজের নামে নামজারি করে নিয়েছে, এই খবর পেয়েছিলাম কয়েক দিন আগে। আমি তো ভাবতেও পারিনি পপি এমন কাজ করবে। আমার কি অন্য সন্তান নেই? তারা কি তাদের বাবার সম্পত্তিতে ভাগ পাবে না। পপি নাহয় স্টার, আমার অন্য সন্তানেরা তো সাধারণ মানুষ।’

মা এবং বোনের এসব অভিযোগ রীতিমতো অসত্য বলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন পপি। তাঁর ভাষ্য, সিনেমা করেই তাঁর যত আয়—তার বেশির ভাগই নিয়েছেন তাঁর মা–বাবা, ভাইবোনেরা। তিনি এতটা অসহায় হয়ে পড়েন, যখন তাঁর কয়েক কোটি টাকা সরিয়ে ফেলা হয়। তখন কৈফিয়ত চাওয়ার পর তাঁর বাবা সুস্থজ্ঞানে ১১ কাঠা জমির মধ্যে ৬ কাঠা জমি তাঁকে লিখে দিয়েছিল। সেটি তিনি নামজারি করেছেন। বাবা লিখে দিলেও বহুবছর ধরে সেই সম্পত্তি থেকে যে আয়, তা মা-বোনেরাই নিতেন। তিনি কোনোভাবেই তাঁর বাবার অন্য পাঁচ কাঠা জমি নিজের করে নেননি। বরং তাঁর কেনা যে ছয় কাঠা সম্পত্তি, সেই সম্পত্তির দখল নিতে যাওয়ায় তাঁর মা ও অন্য ভাইবোনেরা তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন।

প্রথম আলোকে তাঁর বাবার কাছ থেকে যে ৬ কাঠা সম্পত্তি কিনেছিলেন, তার দলিলসহ অন্যান্য প্রমাণপত্র দেখিয়েছেন।

আদনান কামাল ও সাদিকা পারভীন পপি
কোলাজ

পপির প্রেম-বিয়ে-সংসার

কৈশোরে সিনেমায় পা দেওয়া পপির প্রথম নায়ক শাকিল খান। ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমায় অভিনয় করার সময় শাকিলের সঙ্গে তাঁর চেনাজানা শুরু। এরপর ওমর সানী, মান্না, শাকিব খান, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, অমিত হাসান, ইমন, নিরবসহ অনেক নায়কের সঙ্গে কাজ করেছেন পপি। তবে অনেক নায়কের সঙ্গে কাজ করলেও পপির প্রথম নায়ক শাকিল খানের সঙ্গে পরিচয় থেকে প্রেম, এরপর প্রণয়ের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

পপির মা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, পপির সঙ্গে শাকিল খানের ভালো বন্ধুত্ব ছিল। তবে তাঁদের বিয়ে হয়নি। আরেক চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সঙ্গেও পপির প্রেম ও বিয়ের গুঞ্জন ছিল। তবে লম্বা সময় পপি সিনেমাজগৎ থেকে দূরে ছিলেন।

শাকিল খান ও পপি
কোলাজ

পপির মা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, পপি একবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। পপির সঙ্গে তিনিও গিয়েছিলেন। অনেক দিন চিকিৎসার পর পপির সেই রোগ ভালো হয়। এভাবেই রোগ, বিবিধ মনোবেদনার কারণে লম্বা সময় চলচ্চিত্র থেকে দূরে ছিলেন পপি। তবে ব্যবসায়ী আদনানের সঙ্গে বিয়ের খবরের পর নতুন করে পপি আলোচনায় আসেন। প্রথম দুই দশক সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও অন্য নায়িকাদের মতো বর্তমানে পপির হাতে সেভাবে কোনো কাজ নেই। বরং স্বামী-সন্তান নিয়ে নিজের মতো করে আছেন পপি।

সাদিকা পারভীন পপি
ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছর ধরে মা–মেয়ের কথা নেই

পপি ঢাকায় আসার পর মা–বাবার সঙ্গে ইস্কাটনের ভাড়া বাসায় ওঠেন। মুখোমুখি দুটি ফ্ল্যাটে তাঁরা বসবাস করতেন। একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন পপি আর অন্যটিতে মা–বাবা ও ভাইবোনেরা। পপির দাবি, ঢাকায় আসার পর তিনি যখন সিনেমার কাজ পান, তাঁর যে আয়, সে আয় দিয়েই ওই বাসা ভাড়া মেটানো হতো।

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁর মা। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর স্বামী সচ্ছল পরিবারের সন্তান ছিলেন। নিজেও ব্যবসা–বাণিজ্য করতেন। স্বামীর আয়েই তাঁরা ঢাকায় ছিলেন। বরং পপিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর স্বামী এবং তিনি অনেক অর্থ ও সময় ব্যয় করেছেন। একটা সময় পপির ভাগ্য ফিরতে শুরু করে। আয়রোজগার বাড়ে। বাড়ে ব্যস্ততাও।

দেড় দশক ধরে পপি ইস্কাটনের ওই বাসায় বসবাস করলেও তাঁর মা–বাবা ও ভাইবোনদের জন্য জনকণ্ঠ ভবনের উল্টো দিকের একটি বাসা ঠিক করে দেন।

সাদিকা পারভীন পপি
ছবি : পপির ফেসবুক থেকে

পপির মায়ের দাবি, এত কষ্ট করে যে মেয়েকে মানুষ করলেন, সেই মেয়ে তাঁকে এবং তাঁর সন্তানদের এক কাপড়ে করোনার সময় বের করে দেন। নিরুপায় হয়ে মগবাজারের একটি হোটেলে মেয়ে ও ছেলেদের নিয়ে থাকতে বাধ্য হন। তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হন। এমনিতে তাঁর দুটি কিডনি নষ্ট। তখন শরীর এতটাই খারাপ হয়ে গেল যে তিনি অনেক দিন হাসপাতালে ছিলেন। সেই সময়টায় তাঁর স্বামী বেঁচে ছিলেন। তিনি পপির কাছে ছিলেন। একদিন তাঁর স্বামী তাঁদের বাসায় আসেন। তখন স্বামী তাঁকে বলেছিলেন, পপির বাসায় না থেকে তাঁদের সঙ্গে থাকতে চান। গত বছর মারা যাওয়া পপির বাবার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে পপির মা মাঝেমধ্যে ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন।

পপির মা বললেন, ‘আমি এবং আমার স্বামী পপির জন্য অনেক কষ্ট করেছি। আমার স্বামীকে পপি যে একদম দেখেনি তা না। অনেক সময় তার বাসাতেই ছিল। তবে মৃত্যুর এক বছর আগে বেশির ভাগ সময় আমাদের কাছে থাকতেন। পপি যতটুকু পেরেছে করেছে, তাঁর বাবার জন্য করেছে।’

আরও পড়ুন
সাদিকা পারভীন পপি
ছবি : পপির ফেসবুক থেকে

পপির মায়ের ভাষ্য, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি রোগে ভুগলেও তাঁর পাশে পপি সেভাবে দাঁড়ায়নি। মাঝে দুটি উচ্চমূল্যের ইনজেকশনের দাম দেওয়া ছাড়া পপি তাঁকে আর্থিকভাবে সহযোগিতার কথা মনে পড়ছে না। তবে পপি একসময় তাঁদের অর্থ ব্যয় করেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পপি তাঁর জন্মদিনে ভারত, সিঙ্গাপুরে তাঁদের নিয়ে ঘুরতে যেতেন। সেখানে সবার জন্য অনেক অর্থও ব্যয় করেছেন। তবে আদনানের সঙ্গে বিয়ের পর পপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

গত পাঁচ বছরে পপির সঙ্গে দেখা হয়েছে মাত্র কয়েকবার। বছরখানেক আগে তিনি হজ করতে গিয়েছিলেন। তখন পপির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। হজ শেষে পপি ও তাঁর একমাত্র সন্তানের (তিন বছর বয়সী) জন্য উপহার নিয়ে এসেছিলেন। এর পর থেকে পপির সঙ্গে সেভাবে আর কোনো যোগাযোগ নেই। পপিও ফোন দেয় না। তিনিও যোগাযোগ করেন না।

সাদিকা পারভীন পপি
প্রথম আলো

পপির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তাঁর মা বললেন, ‘আমরা যদি পপির ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা মেরে দিয়ে থাকি, তাহলে পপি কীভাবে গাজীপুরের পুবাইলে দুই বিঘার ওপর বিশাল বাংলো গড়ে তোলে? কীভাবে পপি ঢাকার উত্তরাসহ কয়েক জায়গায় জমির মালিক হয়? কীভাবে পপি দুটি ফ্ল্যাটের মালিক হলো? বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা পপির কোনো অর্থ আত্মসাৎ করিনি। বরং পপি আমাদেরটা খেয়েছে। এর বিনিময়ে পপি আমার স্বামীর কাছ থেকে জোর করে ছয় কাঠা জমি লিখে নিয়ে গেছে।’

অবশ্য পপি বলেন, তাঁর মা–বাবা কয়েক কোটি টাকা তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এর প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। এ অভিযোগের বিষয়ে পপির বোন জিডির বাদী ফিরোজা বেগম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘পপির কোনো অর্থ আমরা নিয়েছি, এমন অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য। বরং পপি দিনের পর দিন আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছে।’

পপি তাঁর ভাইবোনদের সম্পর্কে বলেন, তাঁর একটা বোন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। বাকিরা দেশেই আছেন। তাঁর জানামতে, বোন ফিরোজা বেগমের আয়রোজগার সেভাবে নেই। ভাইয়েরা বড় কোনো চাকরিবাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন না। কিন্তু তাঁরা বেশ ভালো আছেন। বোন ফিরোজা অভিজাত এলাকায় থাকেন। এ বিষয়ে ফিরোজা বলেন, তাঁর আয়েই তিনি চলেন।

আরও পড়ুন
ছোটবোন সুমীর সঙ্গে পপি
ছবি : পপির ফেসবুক থেকে

পপি এবং তাঁর মা-ভাইবোনদের দ্বন্দ্বের নেপথ্যের কারণ জানতে চেয়ে এই দুই প্রতিবেদক একাধিকবার কথা বলেছেন। পপি বলছিলেন, তাঁর বাসা থেকে মূল্যবান সামগ্রী একাধিকবার চুরি হয়েছে। কয়েক বছর আগে তিনি থানায় জিডিও করেছিলেন। তখন তাঁর নিকটাত্মীয়দের ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সেই নিকটাত্মীয়রা বাসার মালামাল চুরির কথা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছিলেন। মানসম্মানের কথা চিন্তা করে সেই নিকটাত্মীয়দের তিনি থানা থেকে ছাড়িয়েও নিয়ে এসেছিলেন। সম্প্রতি তাঁর একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস সেই নিকটাত্মীয়রা চুরি করে নিয়ে গেছেন।

আক্ষেপের সুরে পপি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার মায়ের কাছে চিরঋণী। আমার মা আমাকে নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, এটা সত্য। বছরের পর বছর আমার পেছনে সময় ব্যয় করেছে, সেটি আরও সত্য। কিন্তু এটাই চিরন্তন সত্য যে আমি আমার ভাইবোনদের জন্য যা করেছি, যেভাবে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি, আজ আমি তাঁর প্রতিদান পাচ্ছি। আমার নামে রোজ গালি দেওয়া হয়। দেখা হলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে...।’

ভাইবোন ও মায়ের সঙ্গে তিক্ততার এসব ঘটনা বলতে গিয়ে পপি একাধিকবার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল তাঁর। বেশ কয়েকবার কেঁদেও ফেলেন। পপির এই আর্তনাদের কথা তাঁর মায়ের দৃষ্টিতে আনা হয়।

সাদিকা পারভীন পপি
ছবি : প্রথম আলো

পপির মা মরিয়ম বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিই তো পপিকে জন্ম দিয়েছি। অন্য সবার চেয়ে পপিকে আমি ভালো চিনি। আমার পপি একজন ভালো অভিনেত্রী এতে কোনো সন্দেহ নেই। সে যখন কথা বলে, এমন কেঁদে কেঁদে কথা বলে—মনে হয়, সে-ই সবচেয়ে চিরদুঃখী। কিন্তু আমি তো মা। আমি পপিকে প্রশ্ন করতে চাই, জন্মদাত্রী মায়ের কতটুকু খোঁজখবর রাখো। আমাকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। আমি অসুস্থ থাকি। এর মধ্যে হঠাৎ করে পপি বাবার ভিটেমাটি লিখে নিয়ে আমার অন্য সন্তানদের ঠকিয়েছে। আমার বয়স হয়েছে। এত পেরেশানি আমি আর নিতে পারছি না। পপির সঙ্গে আমাদের এই দ্বন্দ্বের খবর চলচ্চিত্রপাড়ার অনেক গুণীজন জানেন।’

পপির মায়ের দাবি, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আদনান কামালের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ের তথ্য তিনি অনেক দিন জানতেন না। তবে আদনানকে তিনি অনেক আগে থেকেই চেনেন। তাঁদের বাসায় বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। তখন পপির বন্ধু বলে জানতেন। পরে একসময় জেনেছেন যে, তিনি পপির স্বামী। পপির স্বামীর সঙ্গে তাঁদের কোনো যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবে ঈদসহ অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানে পপির সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পপির সন্তানের জন্য যতটুকু করার তিনি করেন।

আরও পড়ুন
সাদিকা পারভীন পপি
ছবি: সংগৃহীত

পপি বললেন, ‘আমি এখনো মনেপ্রাণে চাই, আমার মা ভালো থাকুক। আমার ভাইবোনেরা ভালো থাকুক। আমি কারও সম্পত্তি দখল করিনি। আমার কষ্টার্জিত আয় দিয়ে আমি আমার চাচাসহ অন্যদের জমিও কিনেছি খুলনায়। আমার বাবার কাছ থেকেও একইভাবে জমি কিনেছিলাম। এখন সেই জমিতে আমি যদি ভোগদখল করি বা করতে যাই, সেটি কি অন্যায়? আমার জমিতে আমি ঘর বানাব। আমার নামে বিদ্যুতের মিটার নেব। ওয়াসার লাইন নেব, তাতে অন্যরা কেন বাধা দেবে। আমাকে কেন হয়রানি করবে। আমার নামে কেন মিথ্যা জিডি করবে। আমি যদি অন্যের জমি দখল করতাম, তাহলে যে শাস্তি হতো মাথা পেতে নিতাম। আমি যাদের জন্য এত করলাম, তাদের হিংসার আগুনে আমি পুড়ে মরছি। আমি বাঁচতে চাই।’

দ্বন্দ্বের সমাধান কি

জমি, অর্থ, সম্পর্কের টানাপোড়েন—এ সমস্যার সমাধান কী, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পপির মা বললেন, ‘আমি তো চাই আমার সব সন্তান মিলেমিশে থাকুক। আমি আর কত দিনইবা বেঁচে থাকব। আমার পপি সবার বড়, আল্লাহ তো ওকে অনেক দিয়েছে। সে যদি আমার স্বামীর ওই পাঁচ কাঠা জমি নিজের করে নিয়ে থাকে, তাহলে আমি ছাড়ব না। ওই জমির মালিক আমার ওই সন্তানেরা। পপি যদি মন নরম করে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়, সমাধান চায়—তাহলে এর সমাধান হবেই। আর যদি পপি গোঁয়ার্তুমি করে, তাহলে ওই জমি নিয়ে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব।’

সাদিকা পারভীন পপি
ছবি: সংগৃহীত

তবে পপিও সমাধান চান। এই চিত্রনায়িকা বললেন, ‘ওই পাঁচ কাঠা জমি নিয়ে আমার তো কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার জমি নিয়ে কেউ যেন টানাটানি না করে। আমার জমি নিয়ে যদি কেউ টানাটানি করে, আমাকে বিপদে ফেলতে চায়—আমি কাউকে ছাড়ব না। আমি চাই আমার মা–ভাইবোনদের যে জমি আছে, তা তারা ভোগদখল করুক। ভালো থাকুক তারা। আমি সেটিই চাই। আমি একজন নায়িকা, আমার সম্মান আছে—আমার সম্মান নিয়ে যেন কেউ টানাটানি না করে।’

আরও পড়ুন