পরিচালককে কেন কান ধরে ওঠবস করাতে চেয়েছিলেন, কারণ ব্যাখ্যা করলেন অনন্ত জলিল
সম্প্রতি এক লাইভে পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনেতা অনন্ত জলিলের একটি বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হয়। অনন্ত আরেক পরিচালক অনন্য মামুনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তাকে সামনে পেলে কান ধরে ওঠবস করাতাম।’ অনন্ত ও মামুন দুজনের ছবিই ঈদে মুক্তি পেয়েছে (দিন দ্য ডে ও সাইকো)। তবে সমালোচনা হলেও অনন্ত জানান, তিনি এ কথা বলেছেন অন্য কিছু ভেবে। ২০১২ সালে মু্ক্তি পাওয়া অনন্তর ‘দ্য স্পিড’ সিনেমার পরিচালক ছিলেন মামুন। সেই সময় অনেক স্নেহ করলেও অনেক পরে বুঝতে পারেন মামুনের উদ্দেশ্য অসৎ।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে অনন্ত জলিল বলেন, ‘তাকে শাসনের জায়গা থেকে কথাগুলো বলেছি। পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান ভাই প্রথম তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। মামুন আমাকে বলে, “ভাই আমি দেশে ও কলকাতাতে চিত্রনাট্য লিখি। আপনার একটি চিত্রনাট্য লিখতে পারলে ভালো হতো। আপনি তো ভালো বাজেটে সিনেমা করেন। আমার একটি চিত্রনাট্যে আপনি কাজ করলে ভালো হতো।” সে অনেক ছোট ছিল। আমাকে সাউথ ইন্ডিয়ান কিছু সিনেমার ট্রেলার দেখাল। তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দেওয়া আমার দায়িত্ব।’
অনন্ত জানান, এসব ‘দ্য স্পিড’ সিনেমার সময়ের ঘটনা। সিনেমাটির শুটিং হয় মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটির শুটিং হয় মালয়েশিয়ায়। মামুন অনন্তর কাছে মালয়েশিয়া যাওয়ার আবদার করেন। অনন্ত তখন সিনেমার নির্মাতা সোহানের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে মালয়েশিয়া নিয়ে যেতে রাজি হন। মামুন সিনেমাটি চিত্রনাট্য লেখার কারণে টিমে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। জলিল বলেন, ‘আমি যখন নিয়ে গেলাম দেখলাম ছেলেটি ট্যালেন্ট। আমি অ্যাকাউন্টের হিসাবপত্রের দায়িত্ব ওকে দিয়ে দিলাম। আমাদের সম্পর্কটা ক্লোজ হয়ে গেল। আমি যখন দেশে এলাম, তখন বলল, ‘অনন্ত ভাই, জীবনে আমার অনেক স্বপ্ন—নির্মাতা হতে চাই।’ তাকে বললাম, ডিরেক্টর অনেক বড় কাজ। তুমি তো নতুন। সে বলল, ‘নতুনদের কাইন্ডলি একটু সুযোগ দেন।’ দিলাম। হঠাৎ একদিন এসে বলল, ‘আমি তো ডিরেক্টর না (পরিচালক সমিতির সদস্য না)।’
মামুন জানান, পরিচালক সমিতিতে সদস্য হওয়ার জন্য ১ লাখ ৬ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সদস্য পদ পেতে লাগে ৩৬ হাজার। সেই সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অনন্ত বলেন, ‘আমি তাকে বলি তুমি ইন্টারভিউ দিয়ে পরিচালক হতে পারবা না? সে বলল, “অনেক সময় লাগবে। দেরি হবে। আপনি যদি একটু হেল্প করতেন।” টাকাটা আমি তাকে দিয়ে দিই। এ ছাড়া সেই সময় চিত্রনাট্য লেখা বাবদ দিই দেড় লাখ টাকা। তার পারিশ্রমিক চার লাখ টাকা। শুটিংয়ের আগে সিনেমার বাজেট করা হলো। তার কাছে অ্যাডভান্স টাকা দিই। চেন্নাইতে গিয়ে দেখি তার একদম নতুন ল্যাপটপ। বললাম, কীভাবে কিনলা ভাই? সে বলল, “পারিশ্রমিকের টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছি।” তার এই চিন্তাটা ভালো লাগল। নতুন টেকনোলজির সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। শুটিং পর্যন্ত, চার লাখ টাকা নয়, ওকে কত টাকা দিয়েছি, সেটা ও জানে আর ওর ইমান জানে।’
সিনেমার শুটিংয়ের পরে অনন্ত জলিলের কাছে একের পর এক খবর আসতে থাকে অনন্য মামুন নাকি দুটি গাড়ি কিনে এয়ারপোর্ট রোডে ভাড়া দিয়েছেন। সোহানুর রহমান সোহানসহ অনেকেই এই কথা জানতে চেয়েছিলেন এটা কীভাবে সম্ভব? পরে একদিন মামুনের সঙ্গে জলিলের দেখা হয়। তখন এ প্রসঙ্গে সরাসরি মামুনকেই জিজ্ঞাসা করেন অনন্ত—অনেকেই বলে তুমি এয়ারপোর্ট রোডে গাড়ি কিনে ভাড়া দিয়েছ। এটা কীভাবে হলো? তখন মামুন কী বলেছিলেন সেটা শোনা যাক অনন্তের ভাষ্যেই, ‘আমি কলকাতাতে ছবি লিখতাম, সেখান থেকে কিছু টাকা পেয়ে, অ্যাডভান্স দিয়ে কিনেছি। আলহামদুলিল্লাহ। তাকে বললাম, জীবনে মানুষ হতে চাইলে চেষ্টা করে বড় হও। তোমাকে ধন্যবাদ। ছবি করলাম, শেষ করলাম, সবই ঠিক আছে। কথা হলো, যখন ছবি নিয়ে চ্যানেল আইয়ে গেলাম, চ্যানেল আই দেখল, তখন সে (অনন্য মামুন) বলল, আমি নাকি বাজেট নিয়ে স্ট্যান্ডবাজি করি। ছবির বাজেট নিয়ে...আপনারা বলেন?’
মূলত তাঁর সিনেমার বাজেট নিয়ে মামুনের মন্তব্যের জন্যই পরিচালককে কান ধরে ওঠবস করানোর কথা বলেছিলেন বলে জানান অনন্ত। তিনি বলেন, ‘যেই ছেলের প্রতি আমার এতটা অবদান, তার প্রতি কি আমার কোনো অধিকার নেই? এই কারণে আমি রেগে বলেছি, আজকে যদি ওকে সামনে পেতাম, তাহলে ওকে কান ধরে ওঠবস করাতাম। আমার সম্বন্ধে জানার পরেও অনন্ত ভাই সম্পর্কে জানার পরেও এই ধরনের কথা কীভাবে বলে। আমি এই কথা আর বাড়াতে চাই না। আল্লাহর ভালোবাসা তখনই মানুষ পায়, যার ইমান ঠিক থাকে, যার মধ্যে সততা থাকে। আমি দোয়া করি মামুনের মধ্যে সততা আসুক। ও ভালো ভালো কাজ করুক। ওর জীবনের উন্নয়ন হোক। ওকে আমার অধিকার থেকে কথাটা বলেছি।’
এদিকে অনন্য মামুন বিভিন্ন সময় ফেসবুকে জানিয়েছেন, অনন্ত জলিল তাঁর জন্য অনেক কিছু করলেও তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন। এই প্রসঙ্গে অনন্ত জলিল ফেসবুক লাইভে ভক্তদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, ‘মিথ্যা কথা কে বলে?’ যে মানুষের অভাব থাকতে পারে, ক্যাপাবিলিটি কম থাকতে পারে, যে মানুষ নিজেকে প্রমাণ করতে অন্য কাউকে ছোট করে, ইনসিকিউরড ফিল করবে, তারা মিথ্যা কথা বলতে পারে। কিন্তু আমি কেন মিথ্যা কথা বলব। আমার সঙ্গে যাঁরা চলেন, তাঁরা জানেন আমি কেমন।’
ঈদুল আজহায় অনন্ত জলিল ও বর্ষা অভিনীত ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। একই সঙ্গে ঈদে মুক্তি পেয়েছে রায়হান রাফির ‘পরাণ’ ও অনন্য মামুনের ‘সাইকো’। এসব সিনেমার হল হাউসফুল হওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদা–ছোড়াছুড়ি চলছে। বিভিন্ন রকম কথা শুনতে হচ্ছে অনন্ত ও বর্ষাকেও। তাঁদের দাবি, হল হাউসফুল হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই তাঁদের সিনেমা নিয়ে উল্টো কথা বলছেন। হাউসফুলের সেসব প্রমাণ নিয়ে তাঁরা এই লাইভে হাজির হন। বর্ষা লাইভে বলেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করব, সত্যটা সবার সামনে তুলে ধরেন। হুট করে আমাদের এই বিজনেসকে জাতীয়ভাবে সবার সমানে খারাপভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। এতে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হবে।’
এর আগে হল পরিদর্শনে গিয়ে বর্ষা কেঁদে ফেলেন। ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘ভালো জিনিস কেন মানুষ প্রশংসা করতে পারে না। আজ যদি আমরা চলচ্চিত্র না করে এখান থেকে বের হয়ে যাই, তাহলে আমাদের কিছুই হবে না। কিন্তু আমরা যে চেষ্টা করছি ভালো একটা সিনেমা দিতে, সেটা হয়তো আর হবে না। আমি বুঝতে পারছি না মানুষ কেন মিথ্যা খবর রটাবে। আমার মনে হয়, যেটা সত্য, সেটা মানুষের বলা উচিত।’